পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে এমপি বাহারের বিষোদ্গার

কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে স্থানীয় পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেদের ভূমিকা নিয়ে বিষোদ্গার করেছেন সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার।

কুমিল্লা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 June 2022, 04:50 PM
Updated : 16 June 2022, 04:50 PM

নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী ম্যাজিস্ট্রেটরা ‘পাকিস্তানপন্থী অথবা নৌকার প্রতিপক্ষ থেকে মোটা অংকের টাকা পেয়েছেন’ বলে বাহারের সন্দেহ।

সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সোহান সরকার মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন কুমিল্লা-৬ (সদর) আসনের এই সংসদ সদস্য। কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি তিনি।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে নবনির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলরদের নিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে তিনি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখান।

বাহার বলেন, “নির্বাচনের দিন কুমিল্লা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সোহান সরকার নৌকার প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের গণহারে পিটিয়েছে। পিটিয়ে অনেকের পা ভেঙে দেওয়া হয়েছে।

“নির্বাচন চলাকালে ম্যাজিস্ট্রেটদের ভূমিকা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। তারা নৌকার ব্যাজ পরা লোক দেখলেই ধরে এনে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছেন। তারা আমাদের ১৪ জন নেতাকর্মীকে কোনো অপরাধ ছাড়াই সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছেন। এসবের তদন্ত হওয়া দরকার।”

বাহারের ঘনিষ্ঠ নৌকার প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত বুধবার কুমিল্লা সিটি ভোটে মেয়র নির্বাচিত হন। সংসদ সদস্য হওয়ায় তিনি সিটি ভোটের প্রচারে অংশ নিতে পারেন না। কিন্তু তিনি প্রচারে অংশ নেন বলে অভিযোগ উঠলে নির্বাচন কমিশন তাকে এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দেয়। এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে তিনি এলাকায় থেকে যান।

শুভেচ্ছা বিনিময়ের সময় তিনি বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে সফল হয়েছে। সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে সাবেক মেয়র সাক্কু চেয়েছিলেন আমাকে কুমিল্লা ছাড়া করতে। এজন্য একের পর এক মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছেন আমার বিরুদ্ধে। বিষয়টি যাচাই না করেই নির্বাচন কমিশন আমাকে একটি অশালীন চিঠি দিয়ে এলাকা ছাড়তে বলে।

“যদিও আমি ফল ঘোষণার পর ছাড়া নির্বাচনের বিষয়ে কোনো হস্তক্ষেপ বা কথা বলিনি। আমি শান্তি চেয়েছি। যদি আমি কুমিল্লা ছাড়তাম তাহলে অনেক সহিংসতার ঘটনা ঘটত। লাশও পড়তে পারত। কিন্তু আমি সেটি হতে দেইনি। কুমিল্লার শান্তির জন্যই কুমিল্লায় অবস্থান করেছি।”

বাহার বলেন, “অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সোহান সরকার তার বাবার মুক্তিযোদ্ধা ভাতা চালু করতে আমার কাছে সুপারিশের জন্য এসেছেন। স্বাধীনতার পক্ষের কোনো শক্তি নৌকার বিরুদ্ধে এভাবে কাজ করতে পারে না।

“আমার মনে হয় তিনি ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। তিনি ভোটের দিন যেখানেই নৌকার ব্যাজ পরা নেতাকর্মীদের পেয়েছেন তার ওপরই নির্মম নির্যাতন করেছেন। অনেককে পিটিয়ে পা ভেঙে দিয়েছেন। আমি তার এসব কর্মকাণ্ডের তদন্তের দাবি জানাই।”

ম্যাজিস্ট্রেটদের ভূমিকা সম্পর্কে বাহার বলেন, “ভোটের দিন কোথাও একটি ককটেল পর্যন্ত বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেনি। কোনো হানাহানি হয়নি। এর পরও আমাদের ১৪ জন নেতাকর্মীকে বিনা অপরাধে সাজা দিয়েছেন ম্যাজিস্ট্রেটরা।

“আমার মনে হয় তারা হয়ত পাকিস্তানপন্থী অথবা তারা ঘড়ি ও ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থীর কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা পেয়েছেন নৌকার প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের নিধন করার জন্য। আমি এসব ঘটনার তদন্তের দাবি জানাই।”   

অভিযোগ সম্পর্কে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সোহান সরকারের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

আর ম্যাজিস্ট্রেটদের বিষয়ে কুমিল্লার ডিসি মোহাম্মদ কামরুল হাসান বুধবার ভোট চলার সময়ই বক্তব্য দেন।

ডিসি বলেন, “ভোটগ্রহণকালে যাদের সাজা দেওয়া হয়েছে তারা বহিরাগতসহ বিভিন্ন অপরাধ করেছেন। এজন্য তাদের সাজা দেওয়া হয়েছে।“