ভোটে সিসি ক্যামেরায় ইসির চোখ

কুমিল্লা সিটিতে ৮০০ সিসি ক্যামেরার নজরদারির মধ্যে হয়েছে ভোট; দিন শেষে দেশের ভোটকেন্দ্রে প্রথমবারের মত নেওয়া এ পদক্ষেপে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর কিছু ধরা পড়েনি বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 June 2022, 11:43 AM
Updated : 15 June 2022, 11:56 AM

রাজধানী ঢাকা থেকেই এসব সিসি ক্যামেরায় চোখ রেখে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের তৃতীয় নির্বাচনের পরিস্থিতি নজরে রাখেন নির্বাচন কমিশনের কর্তা ব্যক্তিরা।

এদিন কুমিল্লার পাশাপাশি আরও পাঁচ পৌরসভার ভোটেও ৫০০টি ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরায় স্থানীয়ভাবে ও দূর থেকে ভোট পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হয়।  

নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের জন্য নির্ধারিত স্ক্রিনে ও ইসি সচিবালয়ের মনিটরিং সেন্টারে সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে ভোটে নজর রাখা হয়।

ভোটের পরিস্থিতি দেখে সন্তোষ প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহসান হাবিব খান বলেন, “পুরো নির্বাচন শতভাগ আমাদের নজরে ছিল। ভোট খুব ভালো হয়েছে। কোনো ধরনের অভিযোগ পাইনি।

“কেন্দ্রে সাংবাদিক, পর্যবেক্ষকসহ সবাই ভোট দেখেছেন। সবাই আমাদের চোখ, তারাই বলবে কেমন ভোট হয়েছে।”

ইসি সচিবালয় থেকে সবগুলো ক্যামেরা পর্যবেক্ষণের কথা জানিয়ে ইসি সচিব হুমায়ুন কবীর বলেন, সিইসি ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার সরাসরি ভোটের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছেন।

তিনি বলেন, “আমরা একটি কক্ষে বড় স্ক্রিন দিয়েছি, ফুল কমিশন ওখানে বসে তা দেখেছেন। মনিটরিং সেন্টারের পাশে একটি আলাদা কক্ষে বড় তিনটি স্ক্রিনে একটি একটি কেন্দ্র দেখেছেন।

“একসঙ্গে বসার উদ্দেশ্য হচ্ছে, যদি কোনো ধরনের কিছু- আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে কোনো কিছু ঘটে সেটা কমিশন বসে ডিসিশন নেবেন।”

কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন কমিশন যোগ দেওয়ার পর প্রথম নির্বাচন হচ্ছে কুমিল্লা সিটিতে। সেখানে সব কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট নেওয়া হয়।

বুধবার সকালে ইসি সচিব বলেন, “যতটা আমি ক্যামেরায় দেখেছি, প্রার্থী, ভোটার নিজেরাই গেছে। প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসারকে দেখতে পেয়েছি। পোলিং এজেন্ট বসে আছে, প্রিজাইডিং অফিসার দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছেন...সবকিছু।”

অবাঞ্চিত কাউকে ভোটকক্ষে প্রবেশ করতে দেখা যায়নি বলে জানান তিনি।

নির্বাচন কমিশন বরাবরই বলে এসেছে- ইভিএম বেশ ভালো, যন্ত্রটির ত্রুটি নেই। তবে ভোটকক্ষে অবাঞ্চিত লোকের অবস্থানকে ‘ডাকাত’ উল্লেখ করে একজন নির্বাচন কমিশনার বলেছিলেন, “এটিই হচ্ছে ইভিএমের অন্যতম চ্যালেঞ্জ।”

কুমিল্লা সিটির ভোট নিয়ে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের দিকে নজর সবার। এ নির্বাচনকে কমিশনের জন্য পরীক্ষা বলেও মত দিয়েছেন অনেকে। এ কারণে নির্বাচনকে বেশ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ভোট নিয়ে কারও কোনো অভিযোগও আসেনি বলে জানান ইসি সচিব।

দুপুরে তিনি বলেন, “এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ আসেনি। শুধু আমরা ক্যামেরায় দেখেছি তা নয়, মাঠের তথ্যও নিয়েছি। জেলা প্রশাসক, এসপি ও রিটার্নিং অফিসারের সঙ্গে আমি কথা বলেছি।”

সব মিলিয়ে ভোট ভালো হওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “শুধু একটি জায়গায় কয়েকজন বহিরাগত কয়েকজন ঘোরাঘুরি করেছিল, তাদেরকে আটকে রেখেছে। কোথাও প্রভাব খাটানোর অভিযোগ নেই।”

ইভিএমে শ্লথগথির বিষয়ে ইসি সচিব বলেন, “শুরুতে আমাদের বলা হয়েছে- ইভিএমে ভোট দিতে অনেকের বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে রিটার্নিং অফিসারকে নির্দেশ দিয়েছি, যাদের বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে, তাদের যেন বুঝিয়ে দেন।”

গত সিটি নির্বাচনের ভোটে ৬০ শতাংশ ভোট পড়েছিল, এবারও এর কম হবে না বলে মনে করে কমিশন।

এবার কত ভোট পড়তে পারে- এমন প্রশ্নে দুপুরে ইসি সচিব বলেন, “আমরা আশা করছি, নট লেস দ্যান ৬০%। কারণ, আমরা ভোট দেওয়ার জন্য পরিবেশটা সৃষ্টি করেছি।”

ভোটের পরিবেশ নিয়ে দুপুরে রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরী বলেন, “ভোটের পরিবেশ ভালো রয়েছে। কোথাও থেকে কোনো ধরনের অভিযোগ পাওয়া যায়নি।”

ইসি সচিবালয় থেকেও ভোটের কোনো অভিযোগের তথ্য তাকে জানানো হয়নি বলে জানান তিনি।

পৌনে এক কোটি টাকার সিসি ক্যামেরা

কুমিল্লা ও পাঁচ পৌরসভায় প্রায় দেড় হাজার সিসি ক্যামেরার আওতায় আনতে কমিশনের প্রায় পৌনে এক কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে।

ইসি সচিব বলেন, “আমরা শুধু সার্ভিসটা নিয়েছি। কুমিল্লা সিটি ও পৌরসভাগুলোকে ক্যামেরার আওতায় আনতে এ খরচ হয়েছে।

 “আমরা এবার ক্যামেরা ব্যবহারের রেজাল্টটা দেখব, শেষ পর্যন্ত কেমন হয়, পরবর্তীতে কমিশন বসে সিদ্ধান্ত নেবে কী করতে হবে।”

কুমিল্লা ও পাঁচ পৌরসভায় প্রায় ১,৩০০ সিসি ক্যামেরা ব্যবহার করেছে কমিশন। এর মধ্যে কুমিল্লায় রয়েছে ৭৯৭টি এবং বাকি পৌরসভায় রয়েছে ৫০০টি।

ভোটকেন্দ্রে যে কারণে সিসি ক্যামেরা

নির্বাচন ব্যবস্থাকে স্বচ্ছ করার জন্যই কুমিল্লা সিটির ১০৫টি ও পাঁচ পৌরসভার ২৬৫ কেন্দ্রে ও ভোটকক্ষে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইসির উপ প্রকল্প পরিচালক (কমিউনিকেশন) স্কোয়াড্রন লিডার মো. শাহরিয়ার আলম।

সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “নির্বাচন ব্যবস্থাকে স্বচ্ছ করার জন্যে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। এতে অভিযোগ থাকলে তা খতিয়ে দেখা যাবে এবং পরবর্তীতে সে অনুযায়ী যেকোনো ঘটনার ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।”

প্রতিটি কেন্দ্রে দুটি ও কেন্দ্রের ভেতরে একটি করে সিসি ক্যামেরা রয়েছে। ভোট কেন্দ্র ও ভোটকক্ষের বড় এলাকায় সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়লেও ইভিএম ভোটিং সিস্টেমকে ক্যামেরার আওতার বাইরে রেখে স্থাপন করা হয়েছে।

সিসি ক্যামেরায় অপ্রীতিকর কোনো কিছু ধরা পড়েছে কি না- সে ব্যাপারে এই কর্মকর্তা বলেন, “আমাদের ক্যামেরা মনিটরিং চলছে। এখন পর্যন্ত এ ধরনের কোনো দুর্ঘটনা বা এরকম কিছু আমাদের চোখে পড়েনি। যদি আমরা জানতাম তাহলে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর মনিটরিং টিমকে জানিয়ে অ্যাকশন নিতে পারতাম।”

সিসি ক্যামেরা পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের এ সমন্বয়ক ও আইডিইএ (২য় পর্যায়) প্রকল্পের কর্মকর্তা বলেন, “৪৮ ঘণ্টা মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। ১৪ জুন সকাল ছয়টা থেকে শুরু হয়েছে ১৬ জুন সকাল পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকবে।”

আরও খবর