নৌকার প্রশ্নে কুমিল্লায় আওয়ামী লীগে বিভেদ নেই: রিফাত

কুমিল্লায় আওয়ামী লীগের ‘গৃহবিবাদ’ পুরানো হলেও ‘নৌকার প্রশ্নে’ দলে কোনো ‘বিভেদ নেই’ বলে দাবি করেছেন মেয়র পদপ্রার্থী আরফানুল হক রিফাত। ‘সবাই নৌকার জন্য কাজ করছেন’ বলেও মনে করেন আওয়ামী লীগের এই প্রার্থী।

কুমিল্লা প্রতিনিধিআব্দুর রহমান, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 June 2022, 03:34 AM
Updated : 14 June 2022, 03:34 AM

এবারই প্রথম নির্বাচনের মাঠে আসা রিফাত স্বাধীনতার পর ছাত্রলীগের মাধ্যমে রাজনীতিতে আসেন। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর প্রতিবাদ করতে গিয়ে একটি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হন। তখন পালিয়ে বিদেশ চলে যান তিনি।

পরে দেশে ফিরে ১৯৮০ সালে কুমিল্লা শহর ছাত্রলীগের সভাপতি হন। ১৯৮১ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ ছাত্র সংসদের ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে তিনি বহিঃক্রীড়া ও ব্যায়ামাগার সম্পাদক নির্বাচিত হন। একই বছরে জামায়াত-শিবিরের হাতে হামলার শিকার হন তিনি। তার দুই হাত ও দুই পায়ের রগ কেটে দেওয়া হয়।

১৯৯৬ সালে রিফাত কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য নির্বাচিত হন। পরে তিনি কুমিল্লা জেলা যুবলীগের সিনিয়র সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৭ সালে তিনি কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ পান।

এ ছাড়া তিনি কুমিল্লা জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতির দায়িত্ব সামলেছেন প্রায় এক যুগ। জেলা ক্রীড়া সংস্থা সাধারণ সম্পাদক ও কুমিল্লা ক্লাবের দুইবারের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন তিনি।

ব্যস্ততার মধ্যেও শনিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাতকারে রিফাত নির্বাচনের সার্বিক পরিবেশ, দলের বিভেদ, নির্বাচিত হলে অগ্রাধিকার ভিত্তিক কাজসহ নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন।

প্রশ্ন: প্রচারের প্রায় শেষ মুহূর্তে চলে এসেছেন। ভোটের মাঠের পরিবেশ কেমন দেখছেন?

আরফানুল হক রিফাত: যদি এক কথায় বলতে হয় তাহলে বলব, দারুণ। এমন উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন দেখে কুমিল্লার মানুষ আনন্দিত।

প্রশ্ন: এবারই তো প্রথম নির্বাচনের মাঠে এলেন। ভোটারদের কেমন সাড়া পাচ্ছেন?

আরফানুল হক রিফাত: আপনারাই দেখতে পাচ্ছেন ভোটারদের কেমন সাড়া পাচ্ছি। বলতে পারেন, চারদিকে নৌকার গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। আশা করছি, মানুষ উন্নয়নের স্বার্থে নৌকাকেই তাদের পছন্দের প্রতীক হিসেবে বেছে নেবেন।

প্রশ্ন: ভোট নিয়ে নানাজন শঙ্কার কথা বলছেন, আপনার অভিমত কী?

আরফানুল হক রিফাত:
ভোট সুষ্ঠু হবে না- এমন শঙ্কা কুমিল্লার মানুষের মধ্যে নেই। উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

প্রশ্ন: ভোট সুষ্ঠু হলে ফলাফল যাই হোক মেনে নেবেন কি-না?

আরফানুল হক রিফাত: অবশ্যই মেনে নেব।

প্রশ্ন: কুমিল্লায় আওয়ামী লীগের রাজনীতি যে দ্বিধা-বিভক্ত এটা সবাই জানে। আপনাকে সবাই এমপি বাহাউদ্দিন বাহারের অনুসারী বলে। আফজল খানের ছেলে মাসুদ পারভেজ খান ইমরান প্রথমে বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন। যদিও পরে বসে গেছেন। ভোটে সেই পক্ষের লোকজন কি আপনার পক্ষে কাজ করেছেন? কেমন সাড়া পেলেন তাদের?

আরফানুল হক রিফাত: নৌকার প্রশ্নে কুমিল্লায় আওয়ামী লীগের মধ্যে কোনো বিভেদ নেই। আমি মনে করি, সবাই নৌকার জন্য কাজ করছেন। আর এ নিয়ে কারো বিরুদ্ধে আমার কোনো অভিযোগ নেই।

প্রশ্ন: রাজনৈতিক মহলে কথা আছে, কেন্দ্রীয় নেতারা এসে আপনাদের দুপক্ষের বিরোধ মীমাংসার চেষ্টা করছেন। সেই চেষ্টা কতটুকু এগিয়েছে বলে মনে করেন?  

আরফানুল হক রিফাত: আমি নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত; ফলে বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে শুনেছি, সর্বশেষ ১৩ জন মনোনয়ন প্রত্যাশীকে ঢাকায় ডাকা হয়েছিল। তারা সবাই নৌকার জন্য কাজ করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

প্রশ্ন: সাবেক মেয়র মো. মনিরুল হক সাক্কুর বিরুদ্ধে আপনি দুর্নীতির অভিযোগ এনে বলেছেন, আপনার কাছে এসবের প্রমাণ আছে। তাহলে এতদিন বলেননি কেন?

আরফানুল হক রিফাত:
এতোদিন হাতে প্রমাণ ছিল না, এজন্য বলিনি। কারণ তিনি ক্ষমতায় থাকাকালীন নিজের দুর্নীতি লুকিয়ে রাখতে তৎপর ছিলেন। এখন তিনি সাবেক মেয়র। এজন্য তার দুর্নীতির অনেক প্রমাণ হাতে এসেছে। আশা করছি, আমি নির্বাচিত হলে তার সব দুর্নীতির প্রমাণ হাতে পাব।

প্রশ্ন: আপনি নির্বাচিত হলে সাক্কুর বিরুদ্ধে শ্বেতপত্র প্রকাশের কথা বলেছেন। পরাজিত হলেও কি এই অভিযোগগুলো নিয়ে সামনে কথা বলবেন?

আরফানুল হক রিফাত: আমি দুর্নীতির বিরুদ্ধে সব সময়ই সোচ্ছার। নির্বাচিত হলে আমি প্রথমেই তার দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ করে কুমিল্লার মানুষের কাছে পৌঁছে দেব। আর যদি মেয়র নির্বাচিত হতে না-ও পারি তবুও দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমার অবস্থান একই থাকবে। আমি মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সেই স্থান থেকে হলেও আমি সাক্কুর দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলব।

প্রশ্ন: বিএনপির দুই ‘নেতা’ সাক্কু ও নিজাম উদ্দিন কায়সার নির্বাচনে আছেন। আওয়ামী লীগের পক্ষে আপনি একাই। এটা কি ভোটের ক্ষেত্রে আপনাকে বাড়তি কোনো সুবিধা দেবে বলে মনে করেন?

আরফানুল হক রিফাত: আমি এটাকে বাড়তি কোনো সুবিধা বলে মনে করছি না। আমার কাছে সবাই সমান। আমি কাউকেই ছোট করে দেখছি না। আশা করছি, একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।

প্রশ্ন: মনিরুল হক সাক্কু দুইবার মেয়র ছিলেন। তিনি কোন কোন ক্ষেত্রে অসফল বলে আপনি মনে করেন?

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় মেয়র প্রার্থী আরফানুল হক রিফাতের (বাঁয়ে) সঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার।

আরফানুল হক রিফাত:
আমি বলব, তিনি সর্ব ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছেন। সাক্কু কুমিল্লার মানুষকে ১৬ বছর পানির নিচে রেখেছেন। বিগত সময়ে যা বরাদ্দ এসেছে তার বেশিরভাগই লুটপাট করেছেন সাক্কু। তিনি একজন দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি। আমি তাকে চ্যালেঞ্জ করে বলেছি, আসুন টাউন হলে বসি, আপনার দুর্নীতির সব তথ্য প্রকাশ করব। আর প্রমাণ করতে না পারলে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াব। কিন্তু তিনি আমার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেননি। দুর্নীতিবাজ সাক্কুর কাছ থেকে এবার পরিত্রাণ চায় নগরবাসী। তিনি দুর্নীতির টাকায় স্ত্রীর নামে কানাডায় বাড়ি করেছেন।

প্রশ্ন: আপনি নির্বাচিত হলে নগরবাসীর জন্য প্রথম কোন কাজটি করবেন?

আরফানুল হক রিফাত: কুমিল্লার মানুষের সবচেয়ে বড় সমস্যা জলাবদ্ধতা ও যানজট। আমি নির্বাচিত হলে এক বছরের মধ্যে জলাবদ্ধতা ও যানজটের সমস্যার সমাধান করব। নির্বাচিত হলে সাক্কুর দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ করে কুমিল্লার মানুষের কাছে পৌঁছে দেব। দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমার অবস্থান সব সময় অনঢ় থাকবে। আশা করছি, উন্নয়নের স্বার্থে কুমিল্লার মানুষ নৌকাকে বেছে নেবেন। এ ছাড়া আমি ১১ দফার একটি লিফলেট মানুষের হাতে হাতে পৌঁছে দিয়েছি। নির্বাচিত হলে সেগুলোর বাস্তবায়ন করব। 

প্রশ্ন: ব্যস্ততার মধ্যেও আমাদের সময় দেওয়ায় আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

আরফানুল হক রিফাত: আপনাদেরও ধন্যবাদ।

আরও পড়ুন