শেষ মুহূর্তের প্রচারে জমজমাট কুমিল্লা

কুমিল্লা নগরীতে টানা দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে প্রার্থীদের শহর চষে বেড়ানো, ভোটারদের কাছে গিয়ে প্রতিশ্রুতি আর পাশে থাকার আশ্বাস দেওয়া, মিছিল-মাইকিংয়ের আওয়াজ বন্ধ হচ্ছে সোমবার মধ্যরাতে। তাই শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততায় দম ফেলার ফুসরত নেই প্রার্থী এবং কর্মী-সমর্থকদের।

কুমিল্লা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 June 2022, 08:07 AM
Updated : 13 June 2022, 08:07 AM

২৭ মে প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর শুরু হয় নির্বাচনী প্রচার। নির্বাচন কমিশনের বেঁধে দেওয়া সময় অনুযায়ী, সোমবার মধ্যরাতে প্রচারের দাড়ি টানতে হবে প্রার্থীদের। 

কুসিক নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরী বলেন, “এরই মধ্যে আমাদের সার্বিক প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। আশা করছি, একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।“

আগামী ১৫ জুন কুমিল্লার সিটির তৃতীয় নির্বাচনে ইভিএমে (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে ) ভোট দেবেন ২৭ ওয়ার্ডের দুই লাখের বেশি ভোটার। এবারে প্রচারে ভোটাররা ঘুরেফিরে জানিয়েছেন তারা ‘নগর পিতা’ নন, চাইছেন ‘নগর সেবক’।

এ ছাড়া ভোটে মেয়র প্রার্থী পাঁচজন হলেও দলের মতের বাইরে গিয়ে ভোটে দাঁড়ানো বিএনপিপন্থি স্বতন্ত্র প্রার্থী সদ্য সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার নির্বাচনী উত্তাপ এনেছেন শুরু থেকেই। তারা দুজনেই বিএনপি থেকে চিরতরে বহিষ্কৃত। এ ছাড়া কুমিল্লা সিটি পুনরুদ্ধারের টার্গেট নিয়েই ভোটের লড়াইয়ে আছেন আরেক ‘হেভিওয়েট’ প্রার্থী আওয়ামী লীগের আরফানুল হক রিফাত।

নির্বাচনে জয়ী হলে আগের বাকি থাকা কাজ সম্পন্ন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিন হেভিওয়েট প্রার্থীর মধ্যে অন্যতম ‘টেবিল ঘড়ি’ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে আসা সাক্কু। আর ‘ঘোড়া’ প্রতীক নিয়ে ভোটে দাঁড়ানো নিজাম উদ্দিন কায়সারের বিশ্বাস, মানুষ পরিবর্তন চায় বলেই তাকে ভোট দেবে। এদিকে নৌকার রিফাতের মূল অভিযোগ সাক্কু ‘লুটেপুটে’ খেয়েছেন, আর তাই মানুষ বেছে নেবেন তাকেই। তাই শেষ সময়ের প্রচার-গণসংযোগেও একে অপরকে দুষেছেন তারা।

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচারের শেষ দিন সোমবার গণসংযোগে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত।

রোববার সীমাহীন ব্যস্ত সময় পার করছেন কাউন্সিলর প্রার্থীরাও। প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত নগরীর রাস্তা, অলিগলি। সোমবারের চিত্রও প্রায় একই।   

রোববার সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা নাগাদ নগরীর টাউন হলে ‘ভোটার শিক্ষণ’ প্রদর্শনী করা হয়েছে নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগে। এ সময় ভোটারদের ইভিএমে ভোট দেওয়ার পদ্ধতি শেখান হয়। সোমবার নির্বাচনের ১০৫টি কেন্দ্রে মগ ভোটিং অনুষ্ঠিত হবে।

আরফানুল হক রিফাত রোববার দিনব্যাপী নগরীর ৫, ১৭ ও ২১ নম্বর ওয়ার্ডে গণসংযোগ, পথসভা ও উঠান বৈঠক করেছেন।
এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “গত ১৬ বছরে সাক্কু পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের মেয়র ছিলেন। আমি বলতে চাই, তিনি সর্বক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছেন। নগরবাসী তাদের প্রত্যাশিত সেবা পায়নি। বিশেষ করে যানজট ও জলাবদ্ধতা নিরসনে তিনি পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন। যা বরাদ্দ এসেছে তার বেশিরভাগই লুটপাট হয়েছে।“

“এ ছাড়া সাক্কু একজন দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি। এবার মানুষ তার পরিবর্তন চায়। এবার উন্নয়নের স্বার্থে কুমিল্লার মানুষ নৌকাকে বেছে নেবে।“

স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু রোববার দিনভর গণসংযোগ করেছেন নগরীর ১১ ও ১২ নম্বর এলাকায়, এসব এলাকায় তিনি কয়েকটি উঠান বৈঠকও সেরেছেন।

সাক্কুর ভাষ্য, কুমিল্লার মানুষ সব বোঝে, অপপ্রচার চালিয়ে তাদেরকে বোকা বানানো যাবে না। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে মানুষ তার পাশে থাকবে।

“আমি মানুষের পাশে আছি। কুমিল্লা সিটির যানজট ও জলাবদ্ধতা পরিপূর্ণ নিরসনে যেসব পরিকল্পনা করা হয়েছে, তা স্থায়ীভাবে বাস্তবায়ন করতে আরও তিন বছর সময় দরকার। আমি দুই টার্মের নির্বাচিত মেয়র হিসেবে কুমিল্লার আধুনিকায়নে ভূমিকা রেখেছি। সিটির ৭০ শতাংশ কাজ শেষ, বাকি ৩০ শতাংশ কাজ শেষ করার জন্য আরেকবার সুযোগ চাই।

রোববার দিনব্যাপী নগরীর ৩, ৫, ১৮ ও  ২২ নম্বর ওয়ার্ডে এলাকায় গণসংযোগ, উঠান বৈঠক ও পথসভা করেছেন
বিএনপিপন্থী আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার।

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচারের শেষ দিন সোমবার গণসংযোগে ব্যস্ত স্বতন্ত্র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার।

প্রতিপক্ষের লোকজন ভোটের দিন ভোটারদের ভয়ভীতি দেখাতে পারে বলে শঙ্কা তার। তিনি প্রশাসনের সহযোগিতা চাইছেন না বরং প্রশাসনকে নিরপেক্ষ ভূমিকায় দেখতে চান।

“২০১৮ সালে যেভাবে ভোট হয়েছে সেটির পুনরাবৃত্তি যেন না হয় সেটাই চাচ্ছি। আমি নিরাপদ সম্প্রীতির কুমিল্লা নগরী চাই। কুমিল্লার মানুষ দুর্নীতিবাজ ও মাদক কারবারিদের বয়কট করেছে। চারদিকে ঘোড়ার গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে।“

এ ছাড়া মেয়র পদে আর দুই প্রার্থী হলেন- ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের রাশেদুল ইসলাম, যিনি ‘হাতপাখা’ প্রতীকে ভোটের লাড়াইয়ে নেমেছেন। আর হরিণ প্রতীকে আছেন কুমিল্লা নাগরিক ফোরামের সভাপতি কামরুল আহসান বাবুল। এই দুজন নিয়ে অতটা আলোচনা নেই মাঠে, এবং তারা প্রচারও চালিয়েছেন সীমিত আকারে।

কুমিল্লা সিটিতে সর্বশেষ ভোট হয়েছিল ২০১৭ সালের ৩০ মার্চ। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি দায়িত্ব নেওয়ার পর সে বছরের ১৭ মে প্রথম সভা হয়। তাদের পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ হয়েছে চলতি বছরের ১৬ মে।

দুটি পৌরসভা নিয়ে ২০১১ সালের জুলাই মাসে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন গঠিত হওয়ার পর এ পর্যন্ত দুটি নির্বাচন হয়েছে। ১০ বছর আগে প্রথম নির্বাচন নির্দলীয় প্রতীকে হলেও ২০১৭ সালে দলীয় প্রতীকে মেয়র নির্বাচন হয়। দুই নির্বাচনেই ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীকে পরাজিত করে জয়ী হয় বিএনপির প্রার্থী।

নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা দুই লাখ ২৯ হাজার ৯২০ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার এক লাখ ১৭ হাজার ৯২ জন ও পুরুষ ভোটার এক লাখ ১২ হাজার ৮২৬ জন। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন দুইজন।এবারে ২২ হাজার নতুন ভোটারদেরও ফ্যাক্টর মনে করছেন প্রার্থীরা।

পুরনো খবর: