গ্রামীণ এ মেলা কত বছরের পুরনো তা কেউ বলতে পারেননি। তবে জনশ্রুতি হচ্ছে, সন্ন্যাসী পূজাকে কেন্দ্র করে দুইশ বছর আগে এই মেলার গোড়াপত্তন ঘটে। প্রতিবছর জৈষ্ঠ্য মাসের শেষ শুক্রবার বসে দুই দিনব্যাপী এই মেলা। এতে হাজারো মানুষের সমাগম ঘটে।
সন্ন্যাসতলী মেলা কমিটির সভাপতি মন্টু চন্দ্র শুক্রবার বিকালে বলেন, প্রতি বছরের মতো এবারও বসেছে মেলা। এটি দুইশ বছরের বেশি সময় ধরে চলছে। মেলায় সব ধরনের জিনিসই পাওয়া যায়। তবে ঘুড়ির প্রতি মানুষের আগ্রহ বেশি। এ কারণে মানুষ ঘুড়ি মেলাও বলে।
মেলা কর্তৃপক্ষ জানায়, সন্ন্যাসতলী মন্দিরে পূজা দিয়ে এই মেলা শুরু হয়। বিকাল থেকে জমতে থাকে মেলা। নানা আকারের ও রঙ-বেরঙের বাহারি সব ঘুড়ি নিয়ে বসেন ব্যবসায়ীরা। শিশু-কিশোর থেকে যুবক সবার আকর্ষণের কেন্দ্রে থাকে এই ঘুড়ি। চঙ, উড়োজাহাজ, মানব, দানব, পাতা, পতঙ্গ, বাক্স নানা নামের ঘুড়ি নিয়ে মেলায় আসেন সৌখিন ঘুড়িওয়ালারা। বিকালের আকাশ ছেয়ে যায় নানা রঙের ঘুড়িতে।
মেলার ঘুড়ির টানে এসেছেন পাশের জেলা নওগাঁর বদলগাছি উপজেলার পাহাড়পুরের জুয়েল হোসেন, বগুড়া শহরের ঝোপগাড়ি এলাকার এজাজ হোসেন, দিনাজপুরের হাকিপুর পৌর শহরের আব্দুল কুদ্দুস।
এজাজ হোসেন বলেন, “এখানে সব ধরনের জিনিসপত্র পাওয়া যায়। তবে প্রতিবছর শুধু ঘুড়ি কিনতেই এই মেলায় আসি। এখানে অনেক সৌখিন ঘুড়িওয়ালা আসেন। তাদের সঙ্গে ঘুড়ি উড়াতে ভাল লাগে।
তিনি বলেন, “আমি দেশের প্রাচীন নিদর্শনগুলো আমার ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে তুলে ধরে দেশি-বিদেশি পর্যটক ও দর্শনার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করি। এতে দেশের পর্যটন শিল্প সমৃদ্ধ হয়। মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। তারই অংশ হিসেবে এই ঘুড়ির মেলা নিয়েও কাজ করছি।“
স্থানীয়রা জানান, মেলাকে কেন্দ্র করে হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে মেয়েরা বাপের বাড়ি বেড়াতে আসেন। উদযাপিত হয় জামাই ষষ্ঠী। এ ছাড়া স্বজনদেরও আপ্যায়ন করা হয় এ দিনে। মেলায় মিলবে রকমারি মিষ্টান্ন ও মুখরোচক খাবারের দোকান। শাহী জিলাপি, কালিজিরা চালের চিকন জিলাপী, গুড়ের জিলাপী, বসগোল্লাসহ অন্তত ৫০ পদের মিষ্টি পাওয়া যায় এই মেলায়। খাবারের দোকানগুলোতে থাকে উপচেপড়া ভিড়।
মেলায় বাঁশ, কাঠ ও লোহার তৈরি আসবাবপত্র পাওয়া যায়। শিশুদের খেলনার পাশাপাশি মেলে প্রসাধনর সামগ্রীও।
ক্ষেতলাল উপজেলার জিয়াপুর গ্রামের হারুনুর রশীদ বলেন, ছোটবেলা থেকেই এই মেলায় আসি।
ক্ষেতলাল উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মশিউর রহমান বলেন, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের এই সন্ন্যাসতলী মেলার মূল আর্কষণ ঘুড়ি। তবে এটি হিন্দু-মুসলমানের মিলনমেলাও। আমরা সবসময় এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখার চেষ্টা করি।