মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, গত এক দশকে বন্দরের গতিশীলতা অনেক বেড়েছে। পদ্মা সেতু চালু হলে বাড়তি চাপ সামাল দিতে এরই মধ্যে পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে সরকার। এতে গোটা বাগেরহাট জেলায় অর্থনৈতিক কর্মচাঞ্চল্য তৈরি হবে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ মুসা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, পদ্মা সেতু হয়ে গেলে ঢাকা থেকে সবচেয়ে কাছের সমুদ্র বন্দর হবে মোংলা। যেমন- চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ঢাকার দুরত্ব ২৬০ কিলোমিটার আর মোংলার দুরত্ব হবে ১৭০ কিলোমিটার। প্রায় ১০০ কিলোমিটার কম হবে। এই সুবিধাটা মোংলা বন্দর পাবে। আশা করা যায়, বন্দর ব্যবহারকারীদের সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পাবে। এরই মধ্যে অনেক আমদানি-রপ্তানিকারক বন্দর ব্যবহারে তাদের আগ্রহের কথা জানিয়েছেন।
পদ্মা সেতু বন্দরের জন্য আশীর্বাদ হবে উল্লেখ করে চেয়ারম্যান আরও বলেন, এই অঞ্চলটি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ‘ইকোনমিক হাব’ হয়ে উঠবে। এই বন্দর দিয়ে কার্গো, কনটেইনার এবং গাড়ি আমদানি বেশি হবে। চলতি বছরে গাড়ি ও কার্গো আমদানিতে যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল তার থেকে বেশি আমদানি হয়েছে।
বন্দরের মধ্যে ইপিজেড রয়েছে। এখানে ৫০টির অধিক শিল্প-কলকারখানা আছে। এর সংখ্যা ৮০ থেকে ৯০-এ উন্নীত হবে বলে আশা করছে বাগেরহাট জেলা প্রশাসন। এ ছাড়া এখানে ১৪টি এলপিজি ফ্যাক্টরি ও কয়েকটি সিমেন্ট ফ্যাক্টরি আছে।
খুলনা-মোংলা বন্দর যে মহাসড়কটি রয়েছে তার দুই পাশের অধিকাংশ জমি কেনাবেচা হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এখানে অনেকগুলো পর্যটন হোটেল-মোটেল স্থাপন হবে। লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। বাগেরহাট কৃষিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ। পদ্মা সেতু চালু হলে বাগেরহাটের উৎপাদিত কৃষিপণ্য সারা দেশে বাজারজাত করা যাবে এবং কৃষকরা ন্যায্যমূল্য পাবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল না থাকায় বাগেরহাটে আসতে মানুষের অনেক সময় নষ্ট হতো। এ কারণে সুন্দরবনে পর্যটক কম আসে। পদ্মা সেতু চালু হলে সুন্দরবনে পৌঁছতে সময় অনেক কম লাগবে।
“প্রতি বছর এক লাখ থেকে এক লাখ ২০ হাজার পর্যটক সুন্দরবনে ঘুরতে আসে। পদ্মা সেতু চালু হলে সুন্দরবনে পর্যটকদের চাপ অনেকাংশে বেড়ে যাবে এবং বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় বাড়বে। পর্যটকদের চাপ সামাল দিতে সুন্দরবনের করমজলের মতো আরও নতুন চারটি ট্যুরিস্ট স্পট চালু করার চিন্তা করা হচ্ছে।”
বাগেরহাট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি শেখ লিয়াকত হোসেন লিটন বলেন, মোংলা বন্দর দিয়ে এখন সবচেয়ে বেশি আমদানি হচ্ছে গাড়ি। প্রতি মাসে তিন থেকে চার হাজার রিকন্ডিশন গাড়ি আমদানি হচ্ছে। ২০০৯ সালে মেসার্স হকস বে নামের একটি প্রতিষ্ঠান প্রথম গাড়ি আমদানি শুরু করে। এরপর থেকে গাড়ি ব্যবসায়ীরাও এই বন্দর ব্যবহার শুরু করে। এই বন্দর দিয়ে গাড়ি আমদানিতে খরচ অনেক কম। পদ্মা সেতু চালু হলে সেটি আরও বাড়বে। পাশাপাশি পোশাক কারখানার মালিকরাও এর সুবিধা পাবেন।
“অনেক দেশেই পর্যটন শিল্পকে সমৃদ্ধ করে তারা অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখছে। আমরাও যদি পর্যটন খাতে পরিকল্পনা করে বিনিয়োগ করতে পারি তাহলে এই জেলার বিপুল পরিমাণ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।”
বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, মোংলা বন্দরটি মৃত বন্দরে পরিণত হয়েছিল। এই বন্দরে কোনো জাহাজ আসত না। বন্দরের কর্মচারীদের বেতন দিতে পারত না। এখানে অর্থনীতির কোনো কার্যক্রম ছিল না। বন্দরকে সক্ষম করে তুলতে বেশ কিছু স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। নদীর নাব্যতা কম থাকায় বর্তমানে সাত ফুট গভীরতার জাহাজ বন্দরে ভিড়তে পারে। ২৩ কিলোমিটার অংশের ক্যাপিটাল ড্রেজিং কাজ শেষ হলে এই বন্দরে নয় ফুট গভীরতার জাহাজ ভিড়তে পারবে।
পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের আওতায় দুটি নতুন জেটি নির্মিত হচ্ছে। জেটি নির্মাণ ও জ্রেজিং কাজ পাশাপাশি চলছে। আশা করছি, আগামী বছরের জুনের মধ্যে ড্রেজিং ও জেটি নির্মাণকাজ শেষ হবে।
এ জন্য গোপালগঞ্জ হয়ে মোংলা বন্দরের যোগাযোগের যে মহাসড়কটি রয়েছে তার উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রয়োজন বলে মত দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। মাওয়া থেকে মোংলা বন্দরের দূরত্ব প্রায় ১২০ কিলোমিটার। বন্দরকে আরও গতিশীল করতে এই মহাসড়কটিকে ছয় লেনে উন্নিত করা জরুরি। আর মোংলা বন্দরের সঙ্গে রেল যোগাযোগের কাজও এখন সমাপ্তির দিকে। সড়ক ও রেলপথের সুফল পাবে মোংলা বন্দর।