দৌলতদিয়ার হকার, ‘অন্য কাজ পারি না, আমাদের কী হবে?’

পদ্মা সেতু চালুর পর পেশা হারানোর শঙ্কায় রয়েছেন দৌলতদিয়া ঘাটের হকার আর দোকানিরা।

রাজবাড়ী প্রতিনিধিশামীম রেজা, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 June 2022, 11:20 AM
Updated : 7 June 2022, 11:47 AM

তাদের শঙ্কা, পদ্মা সেতু খুলে দিলে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথ চালু থাকবে নামমাত্র; এ পথের যাত্রীরা পদ্মা সেতু দিয়েই যাতায়াত করবেন।

আগামী দিনের রুটি-রুজির চিন্তায় স্বস্তিতে নেই দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় হকার আর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা

রাজবাড়ীর এই ঘাট এলাকায় ঘুরে ঘুরে চা, বিস্কুট, পান-সিগারেট যারা বিক্রি করেন, অথবা ঝালমুড়ি, চকলেট, সেদ্ধ ডিম, শশাসহ নানা ধরনের খাবার যারা বিক্রি করেন তাদের সংখ্যা হাজারের বেশি।

সরেজমিনে খোঁজ নিতে গেলে তারা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান তাদের উদ্বেগের কথা।

পদ্মা সেতু চালু হল এই ফেরি দিয়ে যাত্রী চলাচল কমে বেচাবিক্রিও কমার শঙ্কা হকারদের

ঘাট এলাকায় ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে একটি রেস্তোরাঁ চালাচ্ছেন টিটু শেখ।

টিটু বলেন, তার হোটেলে ১৪ জন কর্মচারী কাজ করেন। তাদের মাসে দেড় লাখ টাকা বেতন দেন তিনি। মাসে বিদ্যুৎ বিল আসে কমবেশি ১৩ হাজার টাকা।

১৫ বছরের বেশি সময় ধরে খাবার হোটেল চালাচ্ছেন দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় হোটের মালিক টিটু শেখ

“সেতু চালু হলে এই ব্যবসা চালু রাখতে পারব কিনা তা নিয়ে শঙ্কায় আছি। হয়ত ছেড়ে দিতে হবে।”

ত্রিশ বছর ধরে ফেরিঘাটে ঘোল বিক্রি করেন জিতেন চক্রবর্তী। তার দিন কাটছে দুশ্চিন্তায়।

জিতেন বলেন, “বাপ-দাদার পেশা ধরে রাখা যাবে কিনা জানি না।”

২০ বছর ধরে ফেরিঘাটে ঘোল বিক্রি করে বাপ-দাদা পেশা ধরে রেখেছেন জিতেন চক্রবর্তী

তার ধারণা অধিকাংশ যাত্রী যাতায়াত করবেন সেতু দিয়ে। তখন বিক্রি না থাকলে পেশা ছাড়তে বাধ্য হবেন বলে জানান ভ্রাম্যমাণ ঘোল বিক্রেতা জিতেন।

লঞ্চে লঞ্চে ঘুরে ঝালমুড়ি বিক্রি করেন আবজাল মিয়া। এই আয় দিয়েই তার সংসার চলে।

ফেরির যাত্রী কমে গেলে হকার ও ছোট ব্যসায়ীদের দুই বেলা খাবার জোগাড় করতে হিমশিম খেতে হবে বলে শঙ্কা তাদের

আবজাল বলেন, “চিন্তায় আছি। সেতু চালু হলে মানুষের ভোগান্তি কমে যাবে। কিন্তু আমাদের কষ্ট হবে। যাত্রী না থাকলে কার কাছে বিক্রি করব?”

চা দোকানি কামাল মণ্ডল মনে করেন, ঘাটের ওপর নির্ভরশীলদের অবস্থা হবে খুবই করুণ।

ফল, সেদ্ধ ডিম, ঝালমুড়ি এবং মুখরোচক খাবার বিক্রি করে এমন হকারের সংখ্যা হাজারের বেশি

তার ভাষ্য, “আমাদের মত যারা হকার—দুই বেলা খাবার জোগাড় করতে হিমশিম, খেতে হয়—আমরা পারব না মাটি কাটতে, অন্যের বাড়িতে শ্রম বিক্রি করতে, পারব না রিকশা চালাতে। আমাদের কী হবে, ভাই?

“সরকার উদ্যোগ নিয়ে যদি কলকারখানার ব্যবস্থা করে তবেই ঘাট এলাকার এসব মানুষ বাঁচতে পারবে।”

সেতু চালু হলেও ফরিদপুর, রাজবাড়ী ও কুষ্টিয়াসহ আশপাশের কয়েকটি জেলার মানুষ ফেরি ব্যবহার করবেন বলে ধারণা পরিবহন সংশ্লিষ্টদের

ঘাটকেন্দ্রিক হকাররা পেশা বদলাতে বাধ্য হবেন বলে মনে করেন বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক লীগ দৌলতদিয়া শাখার সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন তপু।

তবে এ পথের পরিবহন খাতে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না বলে মনে করেন রাজবাড়ী বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুরাদ হাসান মৃধা।

ফেরিঘাট এলাকার দোকানিরা মনে করেন, তাদের অবস্থা আরও করুণ হবে

তিনি বলেন, “বরং এই পথের পরিবহনগুলো কোনো প্রকার ভোগান্তি ছাড়া সরাসরি ফেরিতে উঠে তাদের গন্তব্যে চলে যাবে।”

কুষ্টিয়া-দৌলতদিয়া পথের যাত্রীদের উদাহরণ টেনে মুরাদ বলেন, “এ এলাকার যাত্রী যারা দৌলতদিয়া হয়ে যাতায়াত করেন তারা ফেরি পার না হয়ে পদ্মা সেতু ঘুরে ঢাকায় যাবেন তা মনে হয় না। আমার মনে হয় পদ্মা সেতুর ফলে দৌলতদিয়া এলাকার ভোগান্তি কমবে।”

রাজবাড়ীর দৌলতিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া হয়ে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম জনপদের ২১ জেলার মানুষ যাতায়াত করে

মুন্সীগঞ্জ ও মাদারীপুর সীমান্তে প্রস্তুত হয়ে আছে পদ্মা সেতু। প্রধান কাজ শেষ। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের ফিনিশিং। আগামী ২৫ জানুয়ারি এই সেতু উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হয়ত সেদিন থেকেই বদলে যাবে রাজবাড়ীর দৌলতিয়া আর মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটের চিত্র।