যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের দুই পাশে লাগানো এসব গাছ ‘জরুরি ভিত্তিতে আইন ও বিধি মোতাবেক’ অপসারণ করার জন্য অনুরোধ জানিয়ে শার্শা ও ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এই চিঠি দিয়েছেন।
তবে হাই কোর্টে একটি রিটের পরিপ্রেক্ষিতে গাছ কাটা নিয়ে স্থিতাবস্থা রয়েছে এবং সেটির নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত গাছ কাটা যাবে না। জেলা পরিষদ বলছে, এ নিয়ে তারা আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলছেন।
এর আগেও মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীত করার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে শতবর্ষী এসব গাছ কাটার উদ্যোগ নেওয়া হলেও পরিবেশবাদীদের আন্দোলনের মুখে তা আটকে যায়। সবশেষ ২০১৮ সালে এ নিয়ে হাইকোর্টে রিটও হয়। তারপর আর এ নিয়ে আগায়নি যশোর জেলা পরিষদ।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসেও যশোর রোড রয়েছে ঐতিহাসিক অবস্থানে। খুলনা থেকে কলকাতার দমদম পর্যন্ত এই সড়ক ধরেই একাত্তরে লাখো মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল ভারতে।
তাদের দুর্দশা দেখেই আমেরিকান কবি অ্যালেন গিন্সবার্গ লেখেন তার বিখ্যাত কবিতা ‘সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড’, যা সে সময় বিশ্বকে নাড়া দেয়।
১৯৭১ সালের ১১ ডিসেম্বর এই সড়ক হয়েই বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ কলকাতা থেকে শত্রুমুক্ত যশোরে পৌঁছান।
শার্শার ইউএনও নারায়ণ চন্দ পাল বলেন, “যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের পাশের শতবর্ষী ঝুঁকিপূর্ণ মরা গাছগুলো কিংবা ডাল অপসারণের জন্য উপজেলা প্রশাসনের কাছে নিয়মিত ফোন আসে। এই রাস্তাটি হাইওয়ে যশোর বিভাগের এবং গাছগুলো জেলা পরিষদের। তাই উপজেলা প্রশাসনের এখানে করণীয় কিছু থাকে না।”
“তদুপরি অভিযোগের পরিপেক্ষিতে জনস্বার্থে জেলা পরিষদের কাছে প্রচলিত আইন ও বিধি মোতাবেক মরা গাছগুলো ও ঝুঁকিপূর্ণ ডাল অপসারণের জন্য আবেদন করেছি।”
“আম্পানসহ ঘূর্ণিঝড়ে উপড়ে যাওয়া বেশ কয়েকটি গাছ মহাসড়কের পাশে পড়ে আছে। বিগত বছরগুলোতে উপড়ে পড়া এসব গাছ আজও অপসারণ করা হয়নি। এ ছাড়া ঝিকরগাছা উপজেলা মোড় ও বাসস্ট্যান্ড এলাকা, হাজিরালির মোড়, বেনেয়ালির বাজার, গদখালি বাজার, নবীনগর, চারাতলা, কলাগাছি, নাভারন পুরাতন বাজার ও শার্শা উপজেলার নাভারন সাতক্ষীরা মোড়, নাভারন নিউমার্কেট এলাকা, শার্শা বাজারের মতো জনসমাগম হয় এমন এলাকায় মরা গাছ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
ঝিকরগাছার ইউএনও মো. মাহবুবুল হক বলেন, “মহাসড়কের পাশে মরা গাছগুলো খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। যেকোনো সময় গাছের ডাল ভেঙে বড় ধরনের দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। এতে আতঙ্কে রয়েছেন স্থানীয় মানুষসহ মহাসড়কে চলাচলকারী যানবাহনের চালকরা। তাই ঝুঁকিপূর্ণ গাছগুলো জরুরিভিত্তিতে আইন ও বিধি মোতাবেক অপসারণ করার জন্য অনুরোধ করেছি।”
শার্শা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোরাদ হোসেন বলেন, “গত বছর ঝড়ে শার্শা উপজেলার নাভারন বাজারের নিউমার্কেটের সামনের গাছের ডাল ভেঙে কয়েকজন মানুষ গুরুতরভাবে আহত হন। বেশ কয়েকটি যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ গাছগুলো অপসারণের দাবিতে আমরা আন্দোলন করেছি, মানববন্ধন করেছি। সরকারি লোক এসে দেখে যায় কিন্তু কোনো কাজ হয় না।”
যশোর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফ উজ-জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শার্শা ও ঝিকরগাছা ইউএনওর পাঠানো চিঠি আমরা পেয়েছি। এ ব্যাপারে হাইকোর্টে একটা রিট রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলেছি। হাইকোর্টের মামলার রায়ের মাধ্যমে কিভাবে সমাধানে পৌঁছানো যায় আমরা সে চেষ্টাই করছি। রায় পেলেই তখন সিদ্ধান্ত জানানো যাবে।“
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সহসভাপতি ডা. আব্দুল মতিন বলেন, “এখনও এ বিষয়টি আমরা জানি না। খোঁজ নিচ্ছি।“
আরও পড়ুন: