সোমবার সকালে লাশবাহী ফ্রিজারে করে নিপন আর মিঠু মরদেহ নিয়ে আসা হয় তাদের বাড়িতে। তার আগে শ্রদ্ধা জানাতে নেওয়া হয় শহরের ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন কার্যালয়ে।
সেখানে রাঙামাটি জেলা প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান হয়। সহকর্মীকে হারিয়ে শোকতুর হয়ে পড়েন ফায়ার সার্ভিস স্টেশন অফিসের কর্মরতরা।
পরে ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা সেরে শহরের ব্রাহ্মণটিলা শ্মশানে মিঠু দেওয়ানের এবং আসামবস্তি মহাশ্মশানে নিপন চাকমার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।
আর নিপন চাকমার বাড়ি শহরে কলেজ গেইট এলাকার মন্ত্রিপাড়ায়। নিপন সীতাকুণ্ডে ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে ‘লিডার’ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ওই রাতে ডিপোতে আগুন নেভাতে দ্বিতীয় দল হিসেবে যায় সীতাকুণ্ড ফায়ার স্টেশন।
মিঠুর মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকেই বারবার সংজ্ঞা হারাচ্ছেন তার স্ত্রী।
পরিবারের কেউই এই মৃত্যু মানতে পারছেন না জানিয়ে টিটু বলেন, "দাদার একটি মেয়ে রয়েছে; সে বান্দরবানের একটি কলেজে লেখাপড়া করে। দাদার মৃত্যুর পর এখন পরিবারের দেখাশুনা ও মেয়ে-বৌদির ভরণপোষণ নিয়ে আমরা চিন্তায় আছি।"
কলেজ গেইট এলাকায় মন্ত্রিপাড়ায় নিপন চাকমার বাসার পরিবেশও শোকে স্তব্ধ। স্বামীর ছবি দেখে কাঁদছেন স্ত্রী সুমনা চাকমা। তাদের দুই মেয়ের মধ্যে বড়টি পড়াশুনা করছে ঢাকার একটি কলেজে, আর ছোট মেয়ে পড়ে ক্লাস সিক্সে। বাবার কথা বলতেই অঝোরে কেঁদে ফেলে দুই মেয়ে।
সুমনা চাকমা জানান, শনিবার তিনি শারীরিকভাবে কিছুটা অসুস্থ ছিলেন। রাত ৯টার দিকে স্বামীর সঙ্গে মোবাইলে শেষ কথা হয় তার। সে সময় নিপন তাকে ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়েও পড়তে বলেন। দুর্ঘটনার খবর তিনি জানতে পারেন পরদিন সকালে।
রাঙামাটি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, দুই সহকর্মীর লাশ সকালে স্টেশন অফিসে এনে বিভাগীয়ভাবে শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয়। সরকারিভাবে ২০ হাজার টাকা ও রাঙামাটি জেলা প্রশাসকের পক্ষ হতে ১০ হাজার টাকা নিপন ও মিঠুর পরিবারের সদস্যদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
রাসায়নিকের উপস্থিতি না জানার কারণে এতগুলো প্রাণ ঝরে গেল বলে মন্তব্য করেন ফায়ার সার্ভিসের এই সহকারী পরিচালক।
মিঠু ও নিপনের মরদেহে শ্রদ্ধা জানান রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. মামুন, রাঙামাটি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সহকারী পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম, রাঙামাটি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন অফিসার মো. বিল্লাল।