নরসিংদী স্টেশনে তরুণীকে হেনস্থার প্রতিবাদে ‘অহিংস অগ্নিযাত্রা’

নরসিংদী রেল স্টেশনে ‘পোশাকে আপত্তি তুলে’ এক তরুণীকে হেনস্থার প্রতিবাদ জানাতে একদল তরুণ-তরুণী ব্যতিক্রমী এক কর্মসূচিতে হাজির হয়েছেন ওইদিনের ঘটনাস্থলে।

নরসিংদী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 May 2022, 06:19 PM
Updated : 27 May 2022, 06:19 PM

শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টায় ২০ জন তরুণ-তরুণীর এই দল ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জগামী এগারসিন্দুর ট্রেন থেকে নরসিংদী স্টেশনে নামে।

এরপর তারা স্টেশন মাস্টারের কক্ষসহ নানা স্থানে ঘুরে দেখেন এবং নানা জনের সঙ্গে ওইদিনের বিষয়ে কথা বলেন।  

‘অগ্নি ফাউন্ডেশন’ নামের একটি সংগঠন এ কর্মসূচির নাম দিয়েছে ‘অহিংস অগ্নিযাত্রা’।

গত ১৮ মে ঢাকা থেকে নরসিংদী বেড়াতে আসা এক তরুণী ও তার দুই বন্ধু নরসিংদী রেল স্টেশনে কিছু মানুষের হেনস্থার শিকার হন।

এই ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে অগ্নি ফাউন্ডেশনের এই দলটি নরসিংদী স্টেশনে হাজির হন বলে সংগঠনের সদস্যরা জানান।

তাদের দলে ছিলেন তৃষিয়া, সুরভী, অ্যানি, আনোয়ার, অর্ণব, নুভা, মম, অপরাজিতা, সামিহা, সানজানা, স্মিতা, লক্ষ্মী, অন্তরা, মিশু, প্রমি, জিসা, নিশা, বিজু, ইফফাত ও নীল।

তাদের দলনেতা ও অগ্নি ফাউন্ডেশনের সভাপতি তৃষিয়া নাশতারান সাংবাদিকদের বলেন, “নরসিংদী স্টেশনে একজন নারী পোশাকের কারণে কুৎসিত আক্রমণ ও সহিংসতার শিকার হয়েছেন। আমরা তার পাশে দাঁড়াতে চেয়েছি। তার সাথে ঘটে যাওয়া অন্যায়ের প্রতিক্রিয়া হিসেবে আমরা ২০ জন এসেছি নরসিংদী স্টেশনে। আমরা জায়গাটা এবং সেখানকার মানুষগুলোকে দেখতে গিয়েছি, তাদের সাথে মানবিক যোগাযোগ স্থাপন করতে গিয়েছি।

“আমাদের উদ্দেশ্য ছিল শান্তিপূর্ণভাবে জন পরিসরে শরীর ও পোশাকের স্বাধীনতার জায়গা রিক্লেইম করা। আমাদের বৈচিত্র্যময় শারীরিক উপস্থিতিই আমাদের বক্তব্য।”

নরসিংদী রেল স্টেশন মাস্টার ও স্থানীয়রা জানান, ট্রেন থেকে নামার পরপরই এই দলটি নানা বয়সী ট্রেন যাত্রী ও ভ্রাম্যমাণ দোকানির সঙ্গে ওই দিনের [১৮ মে, বুধবার] ঘটনা নিয়ে কথা বলেন। পরে তারা কয়েকটি উপদলে ভাগ হয়ে স্টেশনের নানা প্রান্তে ঘোরেন। এরপর স্টেশন মাস্টার এ টি এম মুছার সঙ্গে তার কক্ষে কথা বলেন।

তারা রেলওয়ে পুলিশ ও রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গেও ওই দিনের ঘটনা নিয়ে কথা বলেন।

নরসিংদী রেল স্টেশন মাস্টার এ টি এম মুছা বলেন, তরুণ-তরুণীদের দলটি সকালে ঢাকা থেকে ট্রেনে করে নরসিংদী স্টেশনে এসেছে। তারা স্টেশন ঘুরে দেখেছেন এবং স্টেশনের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছেন।

“তারা আমার কাছে আসলে ওই দিনের বিস্তারিত ঘটনা জানিয়েছি। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে স্টেশন ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনী যে পদক্ষেপ নিয়েছে তা তুলে ধরেছি। তারা তরুণীর শ্লীলতাহানির প্রতিবাদ জানাতে এসেছিলেন।”

গত বুধবার সকালে নরসিংদী রেল স্টেশনে ঢাকাগামী চট্টগ্রাম মেইল ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন দুই তরুণ ও এক তরুণী। মেয়েটির পরনে ছিল জিন্স প্যান্ট ও টপস। তাই দেখে স্টেশনে অবস্থানরত এক নারী প্রথমে ওই তরুণীকে আঘাত করে ও পরে আরও কয়েকজন ব্যক্তি তার ওপর হামলার চেষ্টা চালায়। তখন ওই তরুণী দৌড়ে স্টেশন মাস্টারের কক্ষে আশ্রয় নেন। এ সময় তার সঙ্গীরাও হেনস্থার শিকার হন।

পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে স্টেশন মাস্টার তাদের ঢাকাগামী একটি ট্রেনে উঠিয়ে দেন।

তরুণীকে হেনস্থার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশে ব্যাপক সমালোচনা হয়।

ঘটনার দুদিন পর শুক্রবার রাতে নরসিংদী শহরের ইউএমসি জুট মিলের সামনে থেকে ইসমাইল মিয়া নামে এক যুবককে আটক করে নরসিংদী সদর মডেল থানা পুলিশ। পরে রাতেই তাকে রেলওয়ে পুলিশের কাছ হস্তান্তর করা হয়।

শনিবার বিকালে তাকে নরসিংদীর অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম মেহনাজ সিদ্দিকীর আদালতে তোলা হয়। আদালত তাকে জেলহাজতে পাঠায় এবং এই ঘটনার তদন্ত করে পুলিশকে মামলা করার নির্দেশ দেয়।

ওই রাতেই নরসিংদী রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইমায়েদুল জাহেদী বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১০ ও ৩০ ধারায় ভৈরব রেলওয়ে থানায় মামলা করেন।

মামলায় এক নারীসহ দুজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং অজ্ঞাত পরিচয় আরও এক নারী ও ১০ পুরুষকে আসামি করা হয়।

সোমবার দুপুরে নরসিংদীর অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম মেহনাজ সিদ্দিকীর আদালত গ্রেপ্তার ইসমাইলের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।

আরও পড়ুন: