কুমিল্লায় ফিরে ইমরান বললেন অন্য কথা

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ মাসুদ পারভেজ খান ইমরানের সঙ্গে বৈঠকের পর কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ‘বসে যাওয়ার’ কথা জানালেও প্রার্থী নিজে বলছেন ‘ভিন্ন কথা’।

কুমিল্লা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 May 2022, 07:21 AM
Updated : 25 May 2022, 07:27 AM

কুমিল্লায় ফিরে বৈঠকের একদিন বাদে ইমরান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সর্বশেষ আমি এখনও কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারিনি। আমি বিষয়টি ভেবে দেখছি। আর এখনও আমার আগের (নির্বাচনের) সিদ্ধান্তেই আছি।”

১৫ জুনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছেন কুমিল্লা মহানগরের সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক রিফাত। এতে ‘বিদ্রোহী’ হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় তথ্য ও গবেষণা উপকমিটির সদস্য ইমরান।

তাই তাকে ভোটের মাঠ থেকে সরাতে মঙ্গলবার ঢাকায় ডেকে আনা হয়। সন্ধ্যায় ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে তার সঙ্গে বৈঠকে বসেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ বাহাউদ্দিন নাছিম ও দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া।

কুমিল্লার প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা প্রয়াত আফজল খানের ছেলে ইমরানের সঙ্গে এই বৈঠকে তার বোন সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য আঞ্জুম সুলতানা সীমাও অংশ নেন।

বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে, ইমরান বসে যাবে।”

তখন ইমরান সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি।

বুধবার সকালে ইমরান বলেন, “আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ও দলের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া আমাদের দুজনের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা বলেন। তারা আমাকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে বলেন। জবাবে আমিও তাদেরকে আমার অবস্থান জানিয়েছি।”

“সর্বশেষ আমি এখনও কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারিনি। আমি বিষয়টি ভেবে দেখছি। আর এখনও আমার আগের (নির্বাচনের) সিদ্ধান্তেই আছি। বাকিটা আগামীকাল বৃহস্পতিবার মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিনে দেখা যাবে।“

কুমিল্লায় আওয়ামী লীগের রাজনীতি দীর্ঘদিন ধরেই দুটি বলয়ে বিভক্ত; এক অংশের নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন আফজল  খান, অন্যপক্ষে কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার, যিনি এখন কুমিল্লার সদরের সংসদ সদস্য।

২০১২ সালে কুমিল্লার প্রথম সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে লড়েছিলেন আফজল খান নিজে। সেবার তিনি বিএনপি নেতা মনিরুল হক সাক্কুর কাছে হেরে যান। সাক্কু ৬৫ হাজার ৫৭৭ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেন। আফজল খান পান ৩৬ হাজার ৪৭১ ভোট।

এরপর ২০১৭ সালে মেয়র পদে প্রার্থী হন আফজল খানের মেয়ে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আঞ্জুম সুলতানা সীমা। সে নির্বাচনেও সাক্কু ধানের শীষ প্রতীকে ৬৮ হাজার ৯৪৮ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীক নিয়ে সীমা পান ৫৭ হাজার ৮৬৩ ভোট।

এবার আফজল পরিবারকে বাদ দিয়ে বাহারের অনুগত হিসেবে পরিচিত রিফাতকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী করলে বেঁকে বসেন কুমিল্লার ব্যবসায়ী নেতা ইমরান। মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিনে তিনি মনোনয়নপত্র জমা দিলে ভোটের সমীকরণ জটিল হয়ে পড়ে।

তাই ইমরানকে বসাতে উদ্যোগী হয় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ।

কুমিল্লার বিদায়ী মেয়র সাক্কু এবারও প্রার্থী হয়েছেন। তবে এবার তিনি বিএনপির বদলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে লড়ছেন।

এ ছাড়া ভোটের মাঠে মেয়র পদপ্রার্থী হিসেবে রয়েছেন- স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপির ‘নেতা’ নিজাম উদ্দিন কায়সার, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের রাশেদুল ইসলাম এবং রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী ও কুমিল্লা নাগরিক ফোরামের সভাপতি কামরুল আহসান।

এক নজরে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন

• তফসিল ঘোষণা: ২৫ এপ্রিল

• মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ: ১৭ মে

• মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই: ১৯ মে

• মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ তারিখ: ২৬ মে

• প্রতীক বরাদ্দ: ২৭ মে

• ভোট গ্রহণ: ১৫ জুন ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ১০৫ কেন্দ্রের ৬৪০টি বুথে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে

• নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা দুই লাখ ২৯ হাজার ৯২০ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার এক লাখ ১৭ হাজার ৯২ জন ও পুরুষ ভোটার এক লাখ ১২ হাজার ৮২৬ জন। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন দুইজন

আরও পড়ুন: