মাজারের পুকুরে অতি আদরে কুমিরের গায়ে চর্বি, বংশরক্ষা নিয়ে সংশয়

বাগেরহাটে খানজাহান আলী মাজারের দিঘিতে কুমিরের ডিম ফুটছে না।

বাগেরহাট প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 May 2022, 10:15 AM
Updated : 18 May 2022, 11:09 AM

‘অতিরিক্ত খাবার খাওয়ায় পুরুষ কুমিরটি গায়ে চর্বি জমে যাওয়ায় প্রজননক্ষমতা হারিয়েছে’ বলে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার ভাষ্য।

মাজারের প্রধান খাদেম ফকির মো. শের আলী জানান, দিঘিতে ভারতের মাদ্রাজ থেকে আনা দুটি কুমির রয়েছে। এর মধ্যে স্ত্রী কুমিরটি ৩০টির বেশি ডিম দিয়েছে। কিন্তু ডিম ফুটে বাচ্চা আসছে না।

তিন-চার বছর ধরে ডিম ফুটছে না বলে জানান জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা লুৎফর রহমান।

ডিম না ফোটার কারণও খুঁজে পেয়েছেন তিনি।

দুটি কুমিরের মধ্যে পুরুষ কুমিরটি প্রজননক্ষমতা হারিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, কুমিরের ডিম তারা প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম উভয় উপায়ে পর্যবেক্ষণ করে দেখেছেন।

“ফার্টিলিটি নেই। এ কারণে কুমির ডিম পাড়লেও তা থেকে বাচ্চা আসছে না।”

খাদ্যাভ্যাসের কারণে পুরুষ কুমির প্রজননক্ষমতা হারিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “মুক্ত কুমির সব সময় খাবার খায় না। তারা নির্দিষ্ট পরিমাণ খাবার খেয়ে থাকে। কিন্তু মাজারের কুমির বেশি খাবার পায়। এতে এদের শরীরে চর্বি জমে যায়। ফলে প্রজননক্ষমতা কমে আসে। এ কারণে তাদের নিয়ম করে পরিমিত খাবার খাওয়াতে হবে।”

মাজারের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য রক্ষায় কুমিরের বংশ বিস্তারে নতুন করে মিঠাপানির দুটি পুরুষ ও স্ত্রী কুমির আনার পরামর্শ দেন লুৎফর রহমান।

খ্রিষ্টীয় ১৪ শতকের প্রথম দিকে নিজের শাসনামলে হযরত খানজাহান এই দিঘিতে ‘কালাপাহাড়’ ও ‘ধলাপাহাড়’ নামে দুটি কুমির ছাড়েন বলে কথিত আছে।

মাজারের খাদেম শের আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, কয়েক শতাব্দী পর মিঠাপানির কুমিরের বংশবিস্তারে ২০০৫ সালে ভারতের মাদ্রাজ থেকে ছয়টি কুমির এনে এখানে ছাড়া হয়। মাদ্রাজি কুমির হিংস্র প্রকৃতির ছিল। তাদের মারামারির কারণে হযরত খানজাহানের শেষ কুমিরটি অসুস্থ হয়ে মারা যায়। মাদ্রাজের ছয়টির মধ্যে একটি কুমিরও মারা যায়। আর তিনটি কুমির অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়। এখন রয়েছে দুটি কুমির।

বাগেরহাট ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক আহাদ উদ্দিন হায়দার বলেন, “২০০০ সালে খানজাহানের মাজারে কার্ল হুইটকার নামে একজন বিদেশি কুমির বিশেষজ্ঞ এসে কালাপাহাড় ও ধলাপাহাড়কে পর্যবেক্ষণ করেন।

“ওই কুমির দুটি দেখে তিনি বলেছিলেন, এদের খাদ্যাভ্যাস অন্য কুমিরের মত না। একটি কুমির যে পরিমাণ খাবার খাওয়ার কথা এরা তার চেয়ে বেশি খায়। এদের শরীরে চর্বি জমে বেশি মোটা হওয়ায় প্রজননক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে।”

বাগেরহাট সদর উপজেলার ষাটগম্বুজ ইউনিয়নে সাতশ বছরের পুরনো ঐতিহাসিক হযরত খানজাহান (রহ.) মাজারটির অবস্থান। ১৪০১ সালে এই অঞ্চলে হযরত খানজাহান আলীর (র.) আগমন। তার হাতে খলিফতাবাদ নগর প্রতিষ্ঠা ও পরবর্তী ইতিহাসের সঙ্গে কালাপাহাড় ও ধলাপাহাড়ের নাম জড়িয়ে আছে অবিচ্ছেদ্যভাবে।

বিশ্ব ঐতিহ্য ষাটগম্বুজ মসজিদ ও জাদুঘরের কিউরেটর গোলাম ফেরদৌস জানান, খানজাহান আলী ঠাকুরদীঘি নামে পরিচিত এই দীঘিটি সংস্কার করে এক জোড়া কুমির ছাড়েন।

এই কুমির যুগলের বংশধরেরা গত প্রায় ৭০০ বছর ধরে ‘কালাপাহাড়’ ও ‘ধলাপাহাড়’ নামে দীঘিতে বিচরণ করে এসেছে। মাজারের এই কুমির নিয়ে স্থানীয়ভাবে অনেক কিংবদন্তি ও লোককাহিনিও তৈরি হয়েছে।

২০১৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি ভোরে ‘ধলাপাহাড়কে’ মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। ‘কালাপাহাড়ও’ মারা যায় তার কয়েক বছর আগে।

আরও খবর