ভোজ্য তেলের মজুদ, ৭ জেলায় জব্দ লাখো লিটার

সরবরাহ ও মূল্যে অস্থিতিশীলতার মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে এক লাখ লিটারের বেশি সয়াবিন তেল জব্দ করেছে প্রশাসন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 May 2022, 04:02 PM
Updated : 14 May 2022, 04:02 PM

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও ভ্রাম্যমাণ আদালত শনিবার এসব অভিযান চালায়। পরে উদ্ধার করা সয়াবিন তেল ন্যায্য মূল্যে বিক্রিসহ কয়েক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:

সিরাজগঞ্জ

উল্লাপাড়া ও শাহজাদপুর উপজেলায় অবৈধভাবে মজুদ করা ২৯ হাজার ৫০০ লিটার ভোজ্যতেল জব্দ করেছে স্থানীয় প্রশাসন; এ সময় ছয়টি প্রতিষ্ঠানের মালিককে দুই লাখ পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

উল্লাপাড়ার ইউএনও উজ্জ্বল হোসেন জানান, ঘোষগাতি পাটবন্দরের পাইকারি মুদি দোকানের মালিক স্বপন দত্তের গুদামে ১২ হাজার ৫০০ লিটার এবং অশোক সরকারের গুদামে ১৪ হাজার লিটার মজুদ বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যায়। অবৈধভাবে মজুদের অভিযোগে দুই ব্যবসায়ীকে এক লাখ টাকা করে জরিমানা আদায় করা হয়।

“পরে জব্দকৃত তেল বোতলের গায়ের মূল্যে বিক্রির নির্দেশ দেওয়া হয়। তাছাড়া আরেকটি অভিযানে শহিদুল ইসলাম নামে এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।”

এদিকে সিরাজগঞ্জ ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মাহমুদ হাসান রনি জানান, শাহজাদপুর উপজেলার দ্বারিয়াপুর বাজারের সরকার অ্যান্ড ব্রাদার্স, মাসুদ স্টোর ও ভাই ভাই স্টোরে অভিযান চালিয়ে তিন হাজার লিটার খোলা ও বোতলজাত সয়াবিন তেল জব্দ করে মালিকদের এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। পরে তা খোলা বাজারে ন্যায্য মূল্যে বিক্রি করা হয়।

জয়পুরহাট

জয়পুরহাটে অবৈধভাবে সয়াবিন তেল মজুদের অভিযোগে দুই ব্যবসায়ীকে এক লাখ টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিফাতুল ইসলাম জানান, পদ্মা ট্রেডার্স নামে এক প্রতিষ্ঠানের তিন গুদামে ১৫ হাজার ৯৬ লিটার ও ফারুক ট্রেডার্স নামে এক প্রতিষ্ঠানের সাত গুদামে ২৮ হাজার ৫৬০ লিটার সয়াবিন তেলের অবৈধ মজুদ পাওয়া যায়। অবৈধভাবে মজুদ করে তেলের কৃত্রিম সংকট তৈরির অভিযোগে দুই প্রতিষ্ঠানের মালিককে এক লাখ জরিমানা করা হয়।

অভিযানে জেলা ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ফজলে এলাহী উপস্থিত ছিলেন বলে জানান রিফাতুল।

গোপালগঞ্জ

‍সদর উপজেলায় অবৈধভাবে সয়াবিন তেল মজুদ ও বেশি দামে বিক্রির অভিযোগে একটি প্রতিষ্ঠানকে এক লাখ টাকা জরিমানা করেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শামীম হাসান বলেন, সদর উপজেলার ভেড়ার বাজারের গণেশ ভাণ্ডার নামে এক প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে ১৪ হাজার ৬৮৮ লিটার সয়াবিন তেল উদ্ধার করে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

উদ্ধারকৃত তেল আগামী দুই দিনের মধ্যে বিক্রি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান শামীম হাসান।

মৌলভীবাজার

কমলগঞ্জ উপজেলায় মজুদ করা নয় হাজার লিটারের বেশি ভোজ্য তেল জব্দ করে আগের দামে বিক্রি করা হয়েছে।

জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের সহকারী পরিচালক মো. আল-আমীন বলেন, উপজেলার মুন্সীবাজারের সালাউদ্দিন স্টোরে শনিবার দুপুরে অভিযান চালিয়ে নয় হাজার ১৬৮ লিটার তেল জব্দ করা হয়। অবৈধভাবে মজুদ করায় প্রতিষ্ঠানের মালিককে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আর জব্দকৃত তেল আগের দামে বিক্রি করা হয়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া

সদর উপজেলা ও নবীনগর উপজেলায় ছয় হাজার লিটারের বেশি ভোজ্য তেল উদ্ধার করেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও জেলা ভ্রাম্যমাণ আদালত।

ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোশাররফ হোসেন জানান, নবীনগরের বড়বাজারে আক্তার মিয়া নামে এক ব্যক্তির গুদামে চার হাজার ১০০ লিটার এবং দুলাল সাহা ও তাপস সাহার গুদামে ৯০০ লিটার খোলা ও বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যায়। অবৈধভাবে তেল মজুদ করায় আক্তার মিয়াকে ২৫ হাজার টাকা এবং তাপস সাহা ও দুলাল সাহাকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

এদিকে জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মেহেদী হাসান জানান, তেল মজুদ রাখা হয়েছে এমন সংবাদ পেয়ে শহরের আনন্দবাজারের নিয়ামত স্টোরে ও তাদের গুদামে অভিযান চালানো হয়। সেখান থেকে ১৩২০ লিটার তেল উদ্ধার করে আগের মূল্যে বিক্রি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

অবৈধভাবে তেল মজুদ রাখায় প্রতিষ্ঠানটির মালিক নিয়ামত উল্লাহকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে বলে জানান মেহেদী হাসান।

ফরিদপুর

জেলায় চার হাজার ৮০০ লিটার সয়বানি তেল উদ্ধার করে এক লাখ টাকা জরিমানাসহ একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লিটন ঢালী, জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সোহেল শেখ, জ্যেষ্ঠ জেলা বিপণন কর্মকর্তা সাহাদাত হোসেনের তত্ত্বাবধায়নে শনিবার বেলা ১১টা থেকে অভিযান চালানো হয়।

সাহাদাত হোসেন বলেন, গোপন খবর আসে জেলা শহরের শরীয়তুল্লা বাজারে সুবল স্টোরে সয়াবিন তেলের মজুদ রয়েছে। অভিযানে গিয়ে দোকানটি বন্ধ দেখা যায়। শোভারামপুরে দোকানির মালিক কানাইলাল পোদ্দারের গুদাম রয়েছে বলে তথ্য পাওয়া যায়। সেটিও বন্ধ পাওয়া গেলে মালিক কানাইলাল পোদ্দারকে ডাকলে তিনি তেল মজুদের কথা স্বীকার  করেন।

”পরে গুদাম থেকে চার হাজার লিটার তেল উদ্ধার করা হয়। পাঁচটি ব্যারেলে ৮০০ লিটার খোলা তেলও জব্দ করা হয়। এই তেল ন্যায্য মূল্যে বিক্রি করা হয়েছে।”

এদিকে দোকানটি ১০ দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয় বলে জানান সোহেল শেখ।

পাবনা

জেলার ভাঙ্গুড়া উপজেলায় গুদাম থেকে চার হাজার ৪৭ লিটার ভোজ্য তেল উদ্ধার করা হয়। তাছাড়া কয়েকজন ব্যবসায়ীকে ৭৮ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. জহিরুল ইসলাম জানান, উপজেলার শরৎনগর বাজারে মাহাদী ট্রেডার্সের গুদামে আগের কেনা ১০০৫ লিটার বোতলজাত ও খোলা ২৮৭০ লিটার তেল পাওয়া যায়। এ সময় কুণ্ডু স্টোরের গুদামে ১৭২ লিটার বোতলজাত তেল পাওয়া যায়।

“দুটি প্রতিষ্ঠানই বেশি দামে তেল বিক্রি করায় ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করে ন্যায্য মূল্যে বিক্রির নির্দেশ দেওয়া হয়।”