লক্ষ্মীপুরে ক্ষেতেই পচছে সয়াবিন, লোকসানে চাষি

কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে ক্ষেতে পানি জমে আধাপাকা সয়াবিন পচে যাওয়ায় লোকসানের মুখে পড়েছেন লক্ষ্মীপুরের চাষিরা।

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 May 2022, 10:33 AM
Updated : 14 May 2022, 11:57 AM

তারা বলছেন, উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুরের মাটি সয়াবিন চাষের জন্য বেশ উপযোগী। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে অসময়ের বৃষ্টি ও অতিবৃষ্টির কারণে সয়াবিন চাষ ব্যাহত হচ্ছে। ফলে চাষিরা সয়াবিন ঘরে তোলার  আগে ক্ষেতেই সব নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া সয়াবিনের বীজ বপনের সময়তেও এমন বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের।

এ বিষয়ে লক্ষ্মীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. জাকির হোসেন বলেন, “এবার সয়াবিনের ফলন ভালো হয়েছে। তবে কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে ক্ষেতে পানি জমে সয়াবিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি দ্রুত সয়াবিন কেটে ফেলার জন্য। সয়াবিন গাছের পাতা হলুদ বর্ণ ধারণ করলে সেগুলো কাটার উপযোগী হয়।”

কৃষকদের ক্ষতির বিষয়ে তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরি করতে মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে। সরকারি প্রণোদনা এলে তাদের দেওয়া হবে।

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ, চররমনী মোহন, কমলনগর উপজেলার চরমার্টিন, চরলরেন্স ও তোরাবগঞ্জ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে মাঠে থাকা সয়াবিন নষ্ট হচ্ছে।

চরমার্টিন এলাকায় কথা হয় কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে। তারা জানান, সয়াবিনের বীজ বপনের কয়কদিনের মাথায় বৃষ্টিপাত হয়। ফলে বীজ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় আবারও নতুন করে বপন করতে হয়েছে। 

ফসল ঘরে তোলার ঠিক আগ মুহূর্তে আবারও বৃষ্টির পানিতে ক্ষেতে থাকা আধাপাকা সয়াবিন নষ্ট হয়ে গেছে। গত কয়েক বছর থেকে এমন বিরূপ আবহাওয়ার কারণে সয়াবিন চাষিরা লোকসানের কবলে পড়ছে। 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, ১৯৮২ সালে জেলার রামগতি উপজেলায় প্রথম মাত্র এক হেক্টর জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে সয়াবিনের চাষ করা হয়। এরপর ১৯৯২ সালে এমসিসি ও ডর্প নামে দুটি বেসরকারি সংস্থা সয়াবিন চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে। মূলত উৎপাদন খরচ কম, ভালো দাম ও ফলন পাওয়ায় চাষিরা এই ফসলের প্রতি আকৃষ্ট হয়।

এর ধারাবাহিকতায় জেলায় সয়াবিন চাষ দিন দিন বেড়েছে। বর্তমানে জাতীয় উৎপাদনের প্রায় ৭০ ভাগ সয়াবিন লক্ষ্মীপুরেই উৎপাদিত হচ্ছে।

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের চরভূতি গ্রামের কৃষক আলী হোসেন বলেন, “দেড় একর জমিতে সয়াবিন চাষ করেছি। সয়াবিন পুরোপুরি পুষ্ট এবং না পাকতেই বৃষ্টি শুরু হয়েছে। টানা বৃষ্টিতে জমিতে পানি জমে গেছে; পানি নামার পথ না থাকায় গাছের সয়াবিনগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। যে পরিমাণ ফলনের আশায় ছিলাম, তার থেকে এখন অনেক কমে যাবে।” 

একই এলাকার কৃষক আবদুর রহমান বলেন, “আট থেকে ১০ হাজার টাকা খরচ করে ৫০ শতাংশ জমিতে উচ্চফলনশীন সয়াবিন চাষ করেছি। কিন্তু ক্ষেতে বৃষ্টির পানি জমে গাছ ও সয়াবিন পচে গেছে। এগুলো ক্ষেত থেকে উঠিয়ে কোনো লাভ হবে না। তাই ক্ষেতেই ফেলে রেখেছি।” 

শফিকুল ইসলাম নামের আরেক কৃষক জানালেন, সয়াবিন ঘরে তোলার অন্তত দুই সপ্তাহ আগে ক্ষেতে বৃষ্টির পানি জমে তার ৩২ শতাংশ জমির সব সয়াবিন পচে গেছে।

চররমনী মোহন ইউনিয়নের চর আলী হাসান গ্রামের কৃষক নূর আলম জানান, তার ৪০ শতাংশ জমির সয়াবিন ক্ষেতে পানি জমেছে।

তবে সয়াবিনগুলো পুষ্ট হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “পাকার অপেক্ষায় আছি। বৃষ্টির পানি দ্রুত না শুকালে গাছ মরে সয়াবিন নষ্ট হয়ে যাবে। কাঁচা সয়াবিনে পানি লাগলে সেগুলোর রং বিবর্ণ হয়ে যায়। বাজারে দাম পাওয়া যায় না।“ 

তবে উঁচু জমিতে থাকা সয়াবিনের ফলন ভালো হয়েছে বলে কমলনগর উপজেলার চরমার্টিন এলাকার কৃষক রহমত উল্যা জানান।

উত্তর চরলরেন্স এলাকার কৃষক ফয়েজ আহম্মদ বলেন, “ক্ষেতে পানি আছে। সয়াবিন এখনও পাকেনি। বৃষ্টির পানি যদি আরও বাড়ে, তাহলে সেগুলো নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।” 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫-১৬ রবি মৌসুমে এ জেলায় ৫২ হাজার ৭২০ হেক্টর জমিতে সয়াবিন আবাদ হয়। তখন প্রায় এক লাখ মেট্রিক টনের বেশি সয়াবিন উৎপন্ন হয়েছিল। এর বাজার মূল্য ছিল ৩০০ কোটি টাকার বেশি।

তবে চলতি রবি মৌসুমে প্রায় ৩৮ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে সয়াবিন চাষ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ছিল প্রায় ৭০ হাজার মেট্রিক টন। প্রতি মণ সয়াবিনের বাজারদর প্রায় দুই হাজার ২০০ টাকা।   

নদী ভাঙনে সয়াবিন ক্ষেত বিলীন হয়ে যাওয়া এবং গত কয়েক বছরে ধানের দাম বাড়ায় সয়াবিন চাষ এবার কম হয়েছে বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও চাষিরা জানিয়েছেন।