নয় জেলায় ৯৬ হাজার লিটার তেল জব্দ, ন্যায্য মূল্যে বিক্রি

দেশে ভোজ্য তেলের সংকটের মধ্যে নয়টি জেলায় অভিযান চালিয়ে ৯৬ হাজার লিটার সয়াবিন তেল জব্দ করেছেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সদস্যরা।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 May 2022, 06:39 PM
Updated : 11 May 2022, 06:39 PM

বুধবার দিনের বিভিন্ন সময় অভিযান চালানো হয় বলে অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান।

এর মধ্যে রয়েছে পাবনায় ৬৩ হাজার, নীলফামারীতে ৭ হাজার, গাজীপুরে ১৪ হাজার, ফরিদপুরে ৭ শত, চুয়াডাঙ্গায় ২ হাজার, বগুড়ায় ৫ হাজার, বরগুনায় ৩ হাজার এবং সিরাজগঞ্জে ২ হাজার লিটার।

কোনো কোনো জেলায় জব্দ করা ভোজ্য তেল বোতলের গায়ে লেখা মূল্যে বাজারে জনসাধারণের বিক্রির ব্যবস্থা করেছেন ভোক্তা অধিকারের কর্মকর্তারা।  

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিধিদের পাঠানো সংবাদ:

পাবনা

পাবনার সুজানগর, কাশিনাথপুর ও সাঁথিয়ার বিভিন্ন গুদামে অবৈধভাবে মজুত করা ৬৩ হাজার লিটার সয়াবিন তেলা জব্দ করে তিন ব্যবসায়ীকে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক জহিরুল ইসলাম জানান, সুজানগর পৌর শহরের সিনেমা হল সংলগ্ন ঘোষ স্টোরে ১ হাজার ৪৩৫ লিটার খোলা সয়াবিন তেল, ১ হাজার ৭০২ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল অবৈধভাবে মজুত অবস্থায় পাওয়া যায়। এ অপরাধে প্রতিষ্ঠানটির মালিক দুলাল ঘোষকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। বোতলজাত ১ হাজার ৭০২ লিটার তেল বাজারে ঈদের আগের দামে বিক্রি করা হয়। এগুলো ঈদের আগে কিনে রেখেছিল।

জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম জানান, সন্ধ্যায় কাশীনাথপুর এলাকায় ব্যবসায়ী সুনীল কুমার (ব্যাঙ্ক সুনীল) ও মীর মো. আবুল খায়েরের গুদামে অভিযান চালায় বেড়া উপজেলা প্রশাসন ও গোয়েন্দা পুলিশের যৌথ টিম।

এ সময় উভয় গুদাম থেকে ৩০ হাজার করে মোট ৬০ হাজার লিটার অবৈধভাবে মজুদ করা সয়াবিন জব্দ করা হয়। এ অপরাধে ব্যবসায়ী সুনীল কুমারকে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও মীর মো. আবুল খায়েরকে ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত ।

পরে জব্দ করা তেল ঈদের আগের মূল্যে প্রকাশ্যে বাজারে বিক্রি করা হয়।

এ সময় বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সবুর আলি ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

নীলফামারী

নীলফামারীর ডিমলা শহরের বাবুর হাটে পুষ্টি সয়াবিন তেল কোম্পানির পরিবেশক মো. সাইফুল ইসলামের গুদাম ও বসতবাড়িতে গুদাম ও বসতবাড়ি থেকে ৬ হাজার ৭০০ লিটার সয়াবিন তেল উদ্ধার করা হয়েছে।

নীলফামারী জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. শামসুল আলম বলেন, পরিবেশক সাইফুল ইসলামকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এসময় উদ্ধারকৃত ভোজ্য তেল গুলো আগামী দুদিনের মধ্যে ভোক্তাদের কাছে ১৫৯ টাকা  দরে বিক্রয়ের নির্দেশ দেওয়া হয় বলে তিনি জানান।

গাজীপুর

গাজীপুরে গায়ের মূল্য পরিবর্তন করে বোতলজাত তেল বিক্রির অভিযোগে ব্যবসায়ীকে জরিমানা করা হয়েছে। এ সময় বোতলজাত ১২০০ লিটার সয়াবিন তেল জব্দ করে ভোক্তাদের মাঝে ন্যয্য মূল্যে বিক্রি করে দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

আদালত পরিচালনাকারী গাজীপুরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থান্দার কামরুজ্জামান বলেন, শহরের জয়দেবপুর বাজারে বিভিন্ন দোকানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। মেসার্স ঝুমা ট্রেডার্সে বোতলজাত সয়াবিন তেলের আগের মূল্য মুছে ফেলে অতিরিক্ত মূল্য লেখার অভিযোগে মেসার্স ঝুমা ট্রেডার্সের মালিক শুকুরাম সাহাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় এবং দোকানের ১২০০ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল জব্দ করে ভোক্তাদের মাঝে ন্যয্য মূল্যে বিক্রি করা হয়।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের গাজীপুরের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল জব্বার মন্ডল জানান, পুরনো দামের খোলা সয়াবিন ও পাম তেল বাড়তি দামে বিক্রির অভিযোগে গাজীপুরের টঙ্গী বাজারের দুটি প্রতিষ্ঠানকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। 

বিকেলে টঙ্গী বাজারের মেসার্স তাহের এন্ড সন্স ও মেসার্স নোয়াখালী বাণিজ্য বিতানে অভিযান চালায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। 

এ সময় জব্দ করা ১২ হাজার ৬৪৮ লিটার ভোজ্যতেল খোলা বাজারে পুরনো দামে বিক্রি করা হয়।

তিনি জানান, টঙ্গী বাজারের মেসার্স তাহের এন্ড সন্স থেকে পুরনো দরের ৬৭৩২ লিটার খোলা সয়াবিন ও পাম তেল এবং মেসার্স নোয়াখালী বানিজ্য বিতান থেকে পুরনো দরের ৫৯১৬ লিটার খোলা সয়াবিন ও পাম তেল জব্দ করা হয়।

এ সময় উপস্থিত আগ্রহী ক্রেতাদের মাঝে আগের দরে এক লিটার ১৬০ টাকা, দুই লিটার ৩১৮ টাকা এবং পাঁচ লিটার ৭৬০ টাকা এবং খোলা সয়াবিন ১৪৩ টাকা ও পাম ১৩৩ টাকা দরে বিক্রি করা হয়।

ফরিদপুর

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের একটি দল ফরিদপুরের দুটি প্রতিষ্ঠানে মজুত রাখা ৭১২ লিটার ভোজ্য তেল বোতলের গায়ে ধায্যকৃত মূল্যে স্থানীয় ভোক্তাদের মাঝে বিক্রয়ের ব্যবস্থা করেছে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, ফরিদপুরের সহকারী পরিচালক মো. সোহেল শেখ মিয়া জানান, শহরের মিয়া পাড়া সড়কে ইউনিক ট্রেডার্সের গোডাউনে মজুত ৬৪০ লিটার ভোজ্য তেল বোতলের গায়ে ধার্যকৃত মূল্যে স্থানীয় ভোক্তাদের মধ্যে বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়। ওই প্রতিষ্ঠানকে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা ছাড়াও প্রতিষ্ঠানটি সাময়িক বন্ধ করে দেওয়া হয়।

এছাড়া খাবাসপুর বটতলা এলাকার আল আমীন ভ্যারাইটিস স্টোররে মজুত রাখা ৭২ লিটার ধার্য মূল্যে বিক্রির ব্যবস্থা করা হয় এবং প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম ১০ দিনের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়।

কুমিল্লা

কুমিল্লায় আগে কেনা সয়াবিন তেল নির্ধারিত দামের চেয়ে অতিরিক্ত মূল্যে বিক্রির অভিযোগে পাঁচ প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

দুপুরে সদর দক্ষিণ থানার পদুয়ার বাজার এলাকায় খুচরা ও পাইকারী দোকানে তদারকি অভিযান পরিচালনা করে এই জরিমানা করা হয়েছে বলে জানান ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, কুমিল্লা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো.আছাদুল ইসলাম।

আছাদুল ইসলাম জানান, অভিযানের সময় বিভিন্ন দোকান থেকে পাওয়া মজুদকৃত সয়াবিন তেল তাৎক্ষণিকভাবে গায়ের দামে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন গোডাউনে অভিযান চালিয়ে পুরোনো দামের সকল সয়াবিন তেল বের করে আগের দামে বিক্রি করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আর তেলের কেনা দামের রশিদ দেখাতে না পারায় এবং সয়াবিন ৫ লিটারের বোতলে গায়ের দাম ৮শ টাকার তেল ৯৮৫ টাকায় বিক্রি করায় ও তেল মজুদ রাখায় ৫টি দোকানকে ৩১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

আছাদুল ইসলাম আরও জানান, আগে কেনা সয়াবিনের ৫ লিটারের বোতলের গায়ে ৮শ টাকা লেখা থাকলেও ওই প্রতিষ্ঠানগুলো সেটি ৯৮৫ টাকায় বিক্রি করছিল। এছাড়া ১ লিটারের বোতল ১৬০ টাকা আগের গায়ের দাম হলেও ২শ টাকা করে বিক্রি করছিল।

চুয়াডাঙ্গা

চুয়াডাঙ্গার দর্শনা পুরাতন বাজারের মেসার্স মা এন্টারপ্রাইজে অভিযান চালিয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর দুই হাজার লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল জব্দ করেছে।

অভিযান চলাকালেই জব্দ করা তেল ন্যায্য মূল্যে ভোক্তাদের মাঝে বিক্রি করে দেওয়া হয়।

চুয়াডাঙ্গা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সজল আহমেদ জানান, মা এন্টারপ্রাইজের মালিক রাজিউল ইসলাম তার দর্শনা পুরাতন বাজারের গোডাউনে ২০০০ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল মুজদ করে রাখেন। ওই তেল তিনি কিনেছিলেন গত মার্চ মাসে। ঈদের আগে তেলের সংকট থাকাকালেও তিনি ওই তেল বিক্রি না করে মজুদ করেন। এবং এ ব্যাপারে তিনি সন্তোষজনক কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেননি।

মা এন্টারপ্রাইজের মালিক রাজিউল ইসলামকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। জব্দ করা তেল অভিযান চলাকালেই উপস্থিত ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়।

পরে পৃথক এক অভিযানে দর্শনা পুরাতন বাজারের মেসার্স শাহ এন্টারপ্রাইজকে মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য রাখা এবং মূল্য প্রদর্শন না করার অপরাধে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

বগুড়া

বগুড়ায় ৫ হাজার লিটার সয়াবিন তেল জব্দ এবং অবৈধভাবে মজুদ করার অপরাধে এক ব্যবসায়ীকে জরিমানা করেছেন ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর।

অধিদপ্তর বগুড়া আঞ্চলিক অফিসের সহকারী পরিচালক ইফতেখারুল আলম রিজভীর নেতৃত্বে কাহালু বাজারে মজুদকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়।

তেল মজুদ রাখার দায়ে ব্যবসায়ী কাহালু পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আরিফুল ইসলাম আরিফের ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

ইফতেখারুল আলম রিজভী জানান, তেল মজুদ পাওয়া তিনটি গুদামই অরিফের। জব্দকৃত তেল আগের মুল্য ১৬০ টাকা লিটার হিসেবে ভোক্তাদের মাঝে বিক্রির নির্দেশনা দিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে হ্যান্ড মাইকে ঘোষণা করা হয়েছে।

এই ঘোষণার পর তেল কিনতে আসা জনসাধারণ আরিফের গুদামের সামনে দীর্ঘ লাইন দেখা যায়।

বরগুনা

বরগুনার পাথরঘাটায় একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের গুদাম থেকে ৩ হাজার লিটার সয়াবিন তেল উদ্ধার করা হয়েছে। 

দুপুরে পৌর শহরের টিটু সিনেমা হল এলাকায় অভিযান চালিয়ে শাহিন স্টোর নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে ওই তেল উদ্ধার করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক বিপুল চন্দ্র হাওলাদার বলেন, পাথরঘাটা বাজারে সয়াবিন তেল বোতলের গায়ে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে পাইকারি ও খুচরা বিক্রি করায় ২টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে মোট ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

বাজারে তেলের সংকট থাকা সত্ত্বেও  সয়াবিন তেল মজুদ করায় সংশ্লিষ্ট ডিস্ট্রিবিউটর শাহিন স্টোরে অভিযান চালিয়ে ৩ হাজার লিটার সয়াবিন তেল জব্দ করা হয়। পরে ওই তেল আগের দামে আগামী সাত দিনের মধ্যে বিক্রি করে নতুন তেল সরবরাহ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সিরাজগঞ্জ

 সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে সয়াবিন তেল মজুদ ও উচ্চমূল্যে বিক্রির অভিযোগে তিন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ৭০ হাজার জরিমানা করেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

অধিদপ্তরের সিরাজগঞ্জের সহকারী পরিচালক মাহমুদ হাসান রনি জানান, দুপুরে বেলকুচির মুকুন্দগাঁতি বাজারে রায়হান স্টোরে মজুত প্রায় ২ হাজার লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যায়।

এ সময় দোকান মালিকের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় এবং মজুত করা তেল নায্য মূল্যে খোলাবাজারে বিক্রি করা হয়।

এ ছাড়া একই বাজারে আরও দুটি মুদি দোকানে উচ্চ মূল্যে তেল বিক্রি করার অভিযোগে আরও দুই দোকান মালিকের কাছ ১০ হাজার টাকা করে মোট ২০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে বলে অধিদপ্তরের সদস্যরা জানান।