প্রশাসনের ত্রাণ নেননি লামার পাড়াবাসী
বান্দরবান প্রতিনিধি, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published: 09 May 2022 11:24 AM BdST Updated: 09 May 2022 12:16 PM BdST
বান্দরবানের লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নে জুমভূমি পুড়িয়ে দেওয়ায় খাদ্য সংকটে থাকা তিনটি ম্রো ও ত্রিপুরা পাড়ার বাসিন্দারা উপজেলা প্রশাসনের ত্রাণসামগ্রী গ্রহণ করেননি।
রোববার সকালে লামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোস্তফা জাবেদ কায়সার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় গিয়ে ত্রাণসমাগ্রী বিতরণ করেন। কিন্তু সেখানে জুমভূমিতে আগুন দেওয়া রাবার কোম্পানির লোকজন উপস্থিত থাকায় ত্রাণ ফেরত দেন পাড়াবাসী।
ইউএনও মোস্তফা জাবেদ কায়সার সাংবাদিকদের বলেন, “প্রথমে জয়চন্দ্র ত্রিপুরা পাড়ার ১৬টি পরিবারকে ত্রাণসামগ্রী দেওয়া হয়। এরপর লাংকম ম্রো পাড়ায় ত্রাণ দিতে গেলে তারা ফেরত দেয়। এ সময় জয়চন্দ্র ত্রিপুরা পাড়াবাসীরাও ত্রাণসামগ্রী ফেরত দিয়ে দেয়। রেংয়ান ম্রো পাড়ার বাসিন্দারাও নেয়নি।”
“পরে বুঝতে পারি, ত্রাণসামগ্রী বিতরণের সময় রাবার কোম্পানির লোকজন উপস্থিত ছিলেন। সেখান থেকে রাবার কোম্পানির লোকজনকে সরিয়ে দেওয়ার পরও ত্রাণসামগ্রী গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায় তারা। এটা কেন হয়েছে বুঝতে পারছি না।”
পরে এসব ত্রাণসামগ্রী সরই ইউনিয়ন পরিষদে রেখে দেওয়া হয়। ক্ষতিগ্রস্তরা চাইলে যে কোনো সময় সেখান থেকে তা নিয়ে যেতে পারবে বলেও জানান ইউএনও।
জেলা শহর থেকে ৪০ কিলোমিটার এবং লামা উপজেলা সদর থেকে থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে সরই ইউনিয়ন। ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে ওই তিনটি পাড়া।
ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বাসিন্দাদের অভিযোগ, ২৬ এপ্রিল লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামে একটি কোম্পানি এলাকায় ৩০০ একরের বেশি জমিতে আগুন দিয়ে দেয়। এতে বিশাল এলাকা বিরানভূমিতে পরিণত হয়।
তবে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামাল উদ্দিন দাবি করেন, “এই জমি লিজ নেওয়া হয়েছে। সেখানে রাবার চারা ও কাজু বাদাম লাগানোর জন্য জঙ্গল কেটে আগুন লাগানো হয়েছিল। এতে পাড়াবাসীর কারও কোনও ঘরের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। সবার ঘর অক্ষতই আছে।”
ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বাসিন্দারা বলেন, জুম চাষের জমি ও বাগান থেকে বাঁশ ও কাঠ কেটে, শাকসবজি ও বিভিন্ন ফলমূল সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করে তারা চলতেন। কিন্তু সেই জমি, বন, গাছ, ফলদ বাগান সবকিছু পুড়ে যাওয়ায় এখন খাদ্য সংকট তৈরি হয়েছে।

এ নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে সংবাদ মাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে রোববার সেখানে ত্রাণ নিয়ে যায় উপজেলা প্রশাসন। ত্রাণসামগ্রীর মধ্যে ছিল চাল, মসুরি ডাল, মুড়ি ও দুই লিটার পানি।
লাংকম ম্রো পাড়ার বাসিন্দা যোহন ম্রো বলেন, “রোববার সকালে উপজেলা প্রশাসন প্রথমে জয়চন্দ্র ত্রিপুরা পাড়ার সবাইকে ত্রাণ দেয়। সেখানে মহসিন নামে লামা রাবার কোম্পানির একজন ছিলেন। ত্রাণ বিতরণ করার সময়ও তিনি বারবার সহযোগিতা দিচ্ছিলেন। এটা জানার পর ত্রাণগুলো ফেরত দিয়ে দিই।”
“যারা এত বিশাল এলাকা আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে তারাই আবার ত্রাণসামগ্রী বিতরণের সময় উপস্থিত হয়েছে। রাগ ও ক্ষোভ আছে, কীভাবে ত্রাণসামগ্রী গ্রহণ করব আমরা।”
লাংকম ম্রো পাড়ার কারবারী (পাড়াপ্রধান) লাংকম ম্রো বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “না খেয়ে মরতেও রাজি আছি কিন্তু কোম্পানির লোকের হাতে ত্রাণ গ্রহণ করব না। রাবার কোম্পানি লোকদের হাতে এক গ্লাসও পানি নেব না। জঙ্গলের লতাপাতা খেয়েই থাকব।”
রেংয়াং ম্রো পাড়ার কারবারী রেংয়াং ম্রো বলেন, “রাবার কোম্পানির লোকজনের উপস্থিতিতে আমরা কোনো ত্রাণসামগ্রী নেব না। তাদের ছাড়া যে কেউ এলে এক পোয়া চাল হলেও নেব। কোম্পানির লোকজন এক পরিবারকে দশ বস্তা চাল দিলেও গ্রহণ করতে পারব না। আগুন জ্বালিয়ে যে ভোগান্তি ও কষ্ট দিয়েছে এত সহজে কিভাবে ভুলব।”
রাবার কোম্পানির কর্মী কিভাবে চিহ্নিত করলেন- এমন প্রশ্নের জবাবে রেংয়াং ম্রো বলেন, আগুন লাগিয়ে দেওয়ার সময় তিনিও উপস্থিত ছিলেন। এর আগে বিভিন্ন সময় এলাকায় লামা রাবার কোম্পানির লোকজনের সঙ্গে তাকে দেখা গেছে।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে আরও বলেন, “রোববার সকালে পাড়ায় লামা থানা থেকেও তদন্তের কাজে দুজন পুলিশ সদস্য এসেছিল। সবার ঘরে উঠে খাবার আছে কি-না তার ছবি তুলে নিয়ে যায়। তখনও এ পাড়ার কারও ঘরে এক পোয়া, কারও আধা কেজি চাল ছিল।”
শনিবার কক্সবাজারের রামু থেকে দুজন বিকাশ করে কিছু টাকা পাঠিয়েছিলেন। সেই টাকায় চাল কিনে সবাইকে দুই কেজি করে দেওয়া হয়েছে বলে জানান রেংয়ান ম্রো।
আরও পড়ুন:
-
খুলনা-ঢাকা রুটের ট্রেনে যাত্রী কমেছে, ঈদে নেই বিশেষ ট্রেন
-
বরিশালে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার দুই হাতের রগ কর্তন
-
উৎপলের ভাইদের এখন আশুলিয়ায় ফিরতেও ভয়
-
খুলে গেল নলকা সেতুর দ্বিতীয় লেইনও
-
দিনাজপুরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ১৪ লাখ টাকা চুরি
-
পদ্মা সেতুর টোল প্লাজার ব্যারিয়ারে এবার পিকআপের ধাক্কা
-
আশুলিয়ায় পোশাকশ্রমিককে ‘রড দিয়ে পিটিয়ে হত্যা’
-
ফরিদপুরে ‘স্বামীকে বেঁধে ইউপি সদস্যকে দলবেঁধে ধর্ষণ’
- দিনে বিদ্যুৎ যাচ্ছে কয়েকবার
- মেডেন উইকেটের পর যে কারণে বোলিং পেলেন না মোসাদ্দেক
- বেয়ারস্টো-রুটের ব্যাটে রেকর্ড গড়ার পথে ইংল্যান্ড
- নিজের গায়ে আগুন দেওয়া গাজী আনিসকে বাঁচানো গেল না
- ম্যাচ হেরে মাহমুদউল্লাহর যত আক্ষেপ
- ঈদযাত্রায় মহাসড়কে বাইক বন্ধ: বাইকারদের সন্দেহে বাস মালিকরা
- বুয়েটের পর ঢাবিতেও প্রথম নটর ডেমের আসীর
- চেলসি থেকে বার্সেলোনায় ক্রিস্টেনসেন
- লুহানস্কের পতনের পর এখন কোন পথে এগুবে রাশিয়া?
- বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছেই, এবার ছাড়াল ৩০ বিলিয়ন ডলার