ঈদের ছুটিতে মৌলভীবাজারে পর্যটকের উপচে পড়া ভিড়

ঈদের ছুটিতে মৌলভীবাজারের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে ভিড় করেছে হাজারো পর্যটক।

বিকুল চক্রবর্তী মৌলভীবাজার প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 May 2022, 06:17 PM
Updated : 5 May 2022, 06:19 PM

চা বাগান, লাউয়াছড়া বন, বধ্যভূমি একাত্তর, বিটিআরআই, মাধবপুর হ্রদ, মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত – সবখানে ছিল হাজারো ভ্রমণপিপাসু মানুষের মুখর পদচারণা।

নির্মল প্রাকৃতিক পরিবেশে দর্শনার্থীরা ঘুরে বেড়িয়েছেন বন্ধু-বান্ধব ও পরিবার-পরিজন নিয়ে।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ মহামারীতে দুই বছর ঘর থেকে বের হতে পারেনি মানুষ। তাই এবারের ঈদে মে দিবস ও সাপ্তাহিক ছুঠি মিলিয়ে পাওয়া গেছে লম্বা বন্ধ। এই সুযোগটাকে কাজে লাগাতে হাজারো পর্যটকের সামাবেশে মুখর হয়ে ওঠে মৌলভীবাজারে সব পর্যটন কেন্দ্র।

ঢাকা থেকে আসা তুনাঝুনা হৃদিমা বলেন, তিনি রাজধানীর বনানীতে থাকেন। সব সময় জ্যাম, আর গাড়ির শব্দে যে অস্বস্তিকর পরিবেশে তার বসবাস, শ্রীমঙ্গলের প্রাকৃতিক পরিবেশে এসে নিমেষেই যেন সব ক্লান্তি দূর হয়ে গেছে।

হৃদিমা উঠেছেন শ্রীমঙ্গলের বালিশিরা রিসোর্টে।

তিনি জানান, বালিশিরার প্রাকৃতিক পরিবেশও তাকে দারুণ আকৃষ্ট করেছে। ঢাকায় ফিরে স্বস্তি খোঁজার জন্য যতটা পারেন চোখ দিয়ে মনের ভিতরে এই প্রকৃতির ছবি তুলে নিয়ে যাবেন।

রংপুর থেকে আসা দর্শনার্থী পার্থ সারতি বর্মন বলেন, বোন ও ভগ্নিপতির সঙ্গে শ্রীমঙ্গল বেড়াতে এসেছেন। এখানে এসে চা বাগান দেখেছেন, লাউয়াছড়া বন দেখেছেন; দুটাই সবুজ। তার কাছে মনে হচ্ছে যেন তিনি ‘সবুজ সাগরে সাঁতার কাটছেন’।

শ্রীমঙ্গলের উঁচু-নিচু পাহাড়, চা বাগান, পান বাগান ঘুরে দেখছেন সিরাজগঞ্জের গৃহবধূ সৈয়দা মুনিয়া।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ঈদের আনন্দের সঙ্গে বারতি কিছু যোগ করতে তিনি স্বামী সন্তানসহ বেড়াতে এসেছেন শ্রীমঙ্গল। ঘুরে দেখেছেন শ্রীমঙ্গল বিটিআরআই ও খাসিয়া পুঞ্জিসহ বেশ কিছু এলাকা।

ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে ঢাকা থেকে মৌলভীবাজার বেড়াতে এসেছে রাজীব দেব, থিয়ফিল নাগ ও সনৎ দেব।

তারা বলেন, শুধু ঈদের দিনটাকে আনন্দময় করতে তিন বন্ধু মিলে মৌলভীবাজারে বেড়াতে এসেছেন। তারা ঈদের দিন মৌলভীবাজারের মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত এবং শ্রীমঙ্গলের প্রাকৃতিক পরিবেশ ঘুরে বেড়িয়েছেন। ঈদের ২য় দিন ভোরে শ্রীমঙ্গলের চা বাগানে হেঁটেছেন । অসাধারণ এক অনুভূতি নিয়ে বুধবার ঢাকায় ফিরছেন।

এদিকে গত দুই বছরের চারটি ঈদে ব্যবসা হয়নি পর্যটন সংশ্লিষ্টদের। এবারে ভালো পর্যটকের আগমনে খুশি তারা।

শ্রীমঙ্গল আবাসন সেবা সংস্থার সভাপতি সেলিম আহমদ জানান, বিগত মৌসুমে করোনার কারণে তারা যে ক্ষতির মুখে পড়েছেন তা পুষিয়ে নিতে সময় লাগবে; তবে এবারের ঈদে তার অনেকটা ঘাটতি পূরণে আশাবাদী তিনি।

লাউয়াছড়া গেটের টিকিট কাউন্টার মাস্টার শাহীন মিয়া জানান, প্রচুর পর্যটকের সমাগম হয়েছে। ঈদের দিন প্রায় দুই হাজার আটশ টিকিট বিক্রি হয়েছে।

শ্রীমঙ্গল সিতেশ বাবুর বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনে ঈদের সকাল ও বিকাল এবং বুধবার সকালে প্রচুর দর্শনার্থীর ভিড় ছিল।  

সেবা ফাউন্ডেশনের পরিচালক সঞ্জিত দেব জানান, এই সময় অনেক দর্শনার্থী আসেন। তার বাবা ও অনান্য ভাইসহ সবাই সেবা ফাউন্ডেশনে থাকেন। একটা উৎসবমুখর আমেজ থাকে; এটি তাদের অন্যরকম ভালোলাগা।

এদিকে, ঈদের দিন বড়লেখা মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত স্থানীয়দের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ায় হাজার হাজার লোকসমাগম ঘটে পাথারিয়া পাহাড় ও তার পাদদেশে।

বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলী বলেন, এবারের ঈদের আনন্দটা ছিল একটু অন্যরকম। সকাল থেকেই বৃষ্টি হচ্ছিল। এই বৃষ্টি উপেক্ষা করেও হাজার হাজার মানুষ ঈদের আনন্দ ভাগাবাগি করতে ছুঠে যান মাধবকুণ্ড জলপ্রাপাতে। তারা কেউ জলপ্রপাতের কাছে, কেউ ওঠেন ‍উঁচু টাওয়ারে। দিনভর মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতসহ পুরো পাথারিয়া পাহাড়ি এলাকা ছিল লোকে লোকারণ্য।

আর এই পর্যটকদের নিরাপত্তায় কড়া পাহারায় রয়েছে জেলায় নিয়জিত পর্যটন পুলিশ।

শ্রীমঙ্গল পর্যটন পুলিশের অফিসার ইনচার্জ মো. আতিক জানান, পুরো জেলাব্যাপী তাদের পর্যটন পুলিশের টিম কাজ করছে। এছাড়া তাদের সহায়তার রয়েছে জেলা পুলিশের সদস্যরাও।

এদিকে, হোটেল রিসোর্টের আগাম বুকিং অনুযায়ী এবারের পর্যটক সমারোহ থাকবে ঈদের পুরো এক সাপ্তাহ।

শ্রীমঙ্গল টি রিসোর্টের ম্যানেজার মো. সামছুদোহা জানান, আগামী ৭ মে পর্যন্ত তাদের কোনো বাংলো খালি নেই। এরপরেও আরও বেশ কিছু বাংলো বুকিং আছে।

একই তথ্য দিলেন শ্রীমঙ্গল গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট এন্ড গলফ-এর জেনারেল ম্যানেজার আরমান খান।

তিনি জানান, এবারের ঈদে পর্যটকরা যেভাবে গ্র্যান্ড সুলতানকে ভালোবেসেছে এ ভালোবাসায় তারা তৃপ্ত।