২ বছর পর শোলাকিয়ায় ফিরছে ঈদ জামাত

করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে দুই বছর পর কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ঈদুল ফিতরের জামাতের শেষ সময়ের প্রস্তুতি চলছে। বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ায় এবারে অনেক বেশি মানুষ জামাতে অংশ নেবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 May 2022, 01:40 PM
Updated : 3 May 2022, 08:11 AM

হিসাব অনুযায়ী, শোলাকিয়ায় এটি হবে ঈদুল ফিতরের ১৯৫তম জামাত। ১৮২৮ সালে ঈদের প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হয় এখানে।

বাংলাদেশ ইসলাহুল মুসলেমিন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদের পরিচালনায় সকাল ১০টায় ঈদের জামাত শুরু হবে। রেওয়াজ অনুযায়ী, জামাত শুরুর আগে বন্দুকের গুলির শব্দে নামাজের প্রস্তুতি নেওয়ার সংকেত দেওয়া হয়।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এখানে একসঙ্গে দুই থেকে আড়াই লাখ মানুষ জমায়েত হতে পারেন। এরই মধ্যে মাঠে দাগ কাটা, বালু ফেলা ও দেয়ালে রং করাসহ ময়দানকে জামাতের উপযোগী করার কাজ শেষ হয়েছে। সংস্কার করা হয়েছে ওজুখানা এবং টয়লেট। চলছে শোভাবর্ধনের কাজ। তাছাড়া মুসল্লিদের জন্য সুপেয় পানি, মেডিকেল টিম, দূরের মুসল্লিদের জন্য থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাসহ নানা আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে।

এদিকে মুসুল্লিদের যাতায়াতে শোলাকিয়া স্পেশাল নামে দুটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। প্রস্তুত রাখা হয়েছে স্বেচ্ছাসেবক দল।

জামাতের প্রস্তুতি ও নিরাপত্তার বিষয়গুলো দেখভালে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্টরা মাঠটি পরিদর্শন করছেন।

এ বিষয়ে শোলাকিয়া ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম জানান, জামাত অনুষ্ঠানের সব প্রস্তুতি এরই মধ্যে প্রায় সম্পন্ন হয়েছে।

এবার কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে জামাত অনুষ্ঠিত হবে জানিয়ে তিনি বলেন, জামাতে শুধু টুপি, মাস্ক ও জায়নামাজ বহন করা যাবে। মোবাইল ফোন এমনকি ছাতাও বাড়িতে রেখে আসতে হবে।

কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ বলেন, ২০১৬ সালে জঙ্গি হামলার কথা মাথায় রেখে চারস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মুসল্লিদের কয়েকবার তল্লাশির মুখোমুখি হতে হবে।

নামাজের সময় পাঁচ প্লাটুন বিজিবি, বিপুল সংখ্যক পুলিশ, র‌্যাব ও আনসার সদস্যের সমন্বয়ে নিরাপত্তা বলয়ের পাশাপাশি মাঠে সাদা পোশাকে নজরদারি করবে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন। তাছাড়া মাঠ ও প্রবেশ পথগুলোতে থাকবে সিসি ক্যামেরা ও ওয়াচ টাওয়ার। আকাশে উড়বে পুলিশের ড্রোন ক্যামেরা।

স্থানীয় ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম আশফাক বলেন, “আমার মতো অনেকেই এই মাঠেই ঈদের নামাজ আদায় করেন। গত দুই বছর করোনাভাইরাসের কারণে জামাত না হওয়ায় কষ্ট পেয়েছিলাম। তবে এবার তৃপ্তি নিয়ে মাঠে নামাজ আদায় করব।”

শোলাকিয়া ঈদগাহ মসজিদের ইমাম আব্দুস সালাম গোলাপ জানান, মসনদ-ই-আলা ঈশা খাঁর ষষ্ঠ বংশধর দেওয়ান হয়বত খান বাহাদুর কিশোরগঞ্জের জমিদারি প্রতিষ্ঠার পর ১৮২৮ সালে জেলা শহরের পূর্ব প্রান্তে নরসুন্দা নদীর তীরে প্রায় সাত একর জমির ওপর এ ঈদগাহ প্রতিষ্ঠা করেন। সে বছরই শোলাকিয়ায় অনুষ্ঠিত প্রথম জামাতে সোয়া লাখ মুসুল্লি অংশ নিয়েছিল বলে মাঠের নাম হয় ’সোয়া লাখি মাঠ’, যা উচ্চারণের বিবর্তনে ‘শোলাকিয়া’ নামে পরিচিতি পায়।

মাঠে একসঙ্গে দুই লাখেরও বেশি মুসল্লি জামাতে নামাজ আদায় করেন। সাত একর আয়তনের মাঠটিতে ২৬৫টি কাতার রয়েছে।

আরও পড়ুন