গাজীপুর মহাসড়কে ঘরমুখোদের চাপ

গাজীপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ঘরমুখো মানুষ ও যানবাহনের ভিড় বেড়েছে।

গাজীপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 April 2022, 05:31 AM
Updated : 30 April 2022, 05:37 AM

শনিবার সকাল থেকে গাজীপুরের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানবাহন ও গাড়ির চাপ বেশি থাকায় থেমে থেমে যানজটের সৃষ্টি হয়; তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা আবার কমতে শুরু করে।

আর ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানবাহনের ব্যাপক চাপ থাকলেও যানজট নেই। ফলে এ পথের মানুষরা স্বস্তিতেই গন্তব্যে ফিরছেন।

সকালে চন্দ্রা মোড় এলাকায় দেখা গেছে, গাড়ির জন্য মানুষ ভিড় জমাচ্ছে। এখানে পৌঁছার আগেই ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গগামী বাসগুলো ভরে আসছে। ফলে যাত্রীরা অনেকেই ওইসব বাসে আসন না থাকায় গাড়িতে উঠতে পারছেন না। চন্দ্রা মোড়ে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাসের অপেক্ষায় থাকা যাত্রীদের ভিড়ও বাড়তে দেখা গেছে।

অনেকেই উপায় না পেয়ে পিকআপভ্যান, হিউম্যান হলার ও মাইক্রোবাসে করে অতিরিক্ত ভাড়া গুণে গন্তব্যে ফিরছেন। যাত্রীর সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গাড়িরও সঙ্কটও বাড়তে শুরু করে। অনেক যাত্রীরা বেশি ভাড়া আদায়েরও অভিযোগ তুলেছেন। 

গাজীপুর সড়ক পরিবহন শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি সুলতান আহমেদ সরকার বলেন, “ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে বিআরটি প্রকল্পের কাজের কারণে এবার ঈদ যাত্রায় ভয়বহ যানজট সৃষ্টির আশঙ্কা ছিল। তবে সেই সব আশঙ্কা দুর করে স্বাভাবিক ভাবেই যানবাহন চলাচল করছে।

“বৃহস্পতিবার দুপুরের পর ওই সড়কে যানবাহনের ব্যাপক চাপ ছিল, তবে সন্ধ্যার পর তা আবার স্বাভাবিক হয়ে যায়। শুক্রবার সকালেও মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে যানবাহনের চাপ থাকলেও কোথাও যানজট নেই“

যানবাহন ধীরগতিতে চললে অনেকটা মানুষ স্বস্তি নিয়ে বাড়ি ফিরছেন বলে এ পরিবহন নেতার ভাষ্য।

সকালে ঢাকা থেকে ময়মনসিংহগামী শ্যামলী পরিবহনের হেল্পার মো. জাকির হোসেন বলেন, “উত্তরার পর থেকেই থেমে থেমে যানজটে পড়তে হয়েছে। শনিবার সকাল ৬টার দিকে ঢাকা থেকে বাস ছেড়ে সোয়া ৮টার দিকে চান্দনা-চৌরাস্তা মোড়ে থেমে আছি। তেলীপাড়া পর্যন্ত গাড়ির চাপ রয়েছে বলে শুনেছি।”

তবে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার আব্দুল্লাহ আল-মামুন বলছেন, সকলের সহযোগিতায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যান চলাচল অনেকটাই স্বাভাবিক আছে।

মহাসড়কের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অতিরিক্ত ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। শনিবার সকালে গাড়ি ও যাত্রীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ছয়দানা ও চান্দনা চৌরাস্তায় হয়ে তেলিপাড়া পর্যন্ত অংশে যানবাহন কিছুটা ধীরগতিতে চলছে।

সকালে চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় বাসের অপেক্ষায় থাকা স্থানীয় মীম সোয়েটার কারখানার শ্রমিক সোহেল রানা বলেন, “বাসের চালক ও সহযোগীরা ভাড়া বৃদ্ধি করায় যাত্রীদের কিছুটা বিপাকে পড়তে হয়েছে। এখানে ভাড়া যাতে ইচ্ছে মতো না নিতে পার তার জন্য কিছু একটা ব্যবস্থা নেয়া উচিত।”

গাজীপুর মহানগরের ভোগড়া এলাকার স্টারলাইট সোয়েটার কারখানার শ্রমিক মোক্তার হোসেন বলেন, “ময়মনসিংহ যেতে অন্য সময় বাসে ভাড়া লাগে ২০০-২৫০ টাকা। কিন্তু এখন ভাড়া চাচ্ছে ৪০০-৫০০ টাকা। যার যেমন খুশি ভাড়া আদায় করছে। ভাড়া নিয়ে তাদের সঙ্গে কিছু বলতে গেলেই ঝগড়া বিবাদ করতে হচ্ছে।”

এ বিষয়ে দৃষ্টি আর্কষণ করা হলে গাজীপুর জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তারা বিষয়টি খোঁজ নিয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ব্যবস্থা নেবেন।

আর গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুজ্জামান কিরণ জানান, তাদের পক্ষ থেকে চান্দনা-চৌরাস্তা, বোর্ডবাজার ও টঙ্গীতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে।

চন্দ্রায় বাসের অপেক্ষায় থাকা সিরাজগঞ্জগামী যাত্রী হেলেনা বেগম জানান, তার স্বামী স্থানীয় কাঁচামাল ব্যবসায়ী। ভিড় এড়াতে শনিবার সকালে স্বামীকে রেখে সন্তানদের দিয়ে গ্রামের বাড়ি রওনা হন। কিন্তু দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করেও গাড়িতে উঠতে পারেননি।

গাজীপুর মহানগরের ভোগড়া বাইপাস পেয়ারাবাগান এলাকায় শনিবার সকালে উত্তরবঙ্গগামী এসআর ট্রাভেলস কাউন্টারে গিয়ে দেখা গেছে, যাত্রীর সংখ্যা ‘তুলনামূলক কম’। এ কাউন্টারের ব্যাস্থাপক হুমায়ুন কবির বলেন জানান, উত্তর বঙ্গে যমুনা সেতুর আগে তাদের বাস চলাচলে কোন সমস্যা বা যানজট নেই। স্বাভাবিকভাবেই চলছে যানবাহন।

একই কথা জানান ময়নুল হক কাউন্টারের ব্যবস্থাপক মো. সেলিম মিয়া। তিনি বলেন, সকাল ১০টা পর্যন্ত ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানজট না থাকায় তাদের শিডিউলে কোন সমস্যা হয়নি।

গাজীপুরের সালনা (কোনাবাড়ি) হাইওয়ে থানার পরিদর্শক মো. ফিরোজ হোসেন জানান, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে অন্যান্য বছর ঈদের এই সময়ে গাজীপুরের শিল্পকারখানা ছুটি ঘোষণা করা হলে মহাসড়কে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। যানজটে আটকা পড়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়কে সময় পার করেছে মানুষ। কিন্তু ঈদের আর মাত্র দুইদিন বাকি থাকলেও মহাসড়কে সেই চিরচেনা যানজট নেই।

তবে সাধারণ সময়ের চেয়ে যানবাহন চলাচলের সংখ্যা বেড়েছে কয়েকগুণ। যার কারণে কিছু কিছু পয়েন্টে যানবাহন থেমে থেমে চলছে। তবে এটাকে যানজট বলা যাচ্ছে না। সেইসব পেয়েন্ট আবার মাঝে মধ্যে ফাঁকাও হয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় বাস স্টেশন হওয়ায় এখানে সব সময় যানবহনের চাপ থাকে। শুক্রবার থেকে চন্দ্রা মোড়ে যানবাহনের চাপ হলেও এখন পর্যন্ত এ সড়কে যানজট নেই। যানজট এড়াতে শুক্রবার মধ্যরাতেই এখান থেকে অনেক যাত্রী যাত্রা শুরু করেছেন।

তবে বিকালে যানবাহনের পরিমাণ আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন এ পুলিশ কর্মকর্তা।