আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে জেলা শহরের বাইরে বেশকিছু হোটেল-রিসোর্টের সব কক্ষ বুকিং হয়ে গেছে। জেলা শহরেও বিভিন্ন আবাসিক হোটেল-মোটেলে প্রতিদিন আগাম বুকিং চলছে।
পর্যটকদের নিরাপত্তায় জেলা সদর ও থানচি উপজেলা ট্যুরিস্ট পুলিশ বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে। ইতোমধ্যে সব ট্যুরিস্ট পুলিশের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। জেলায় ট্যুরিস্ট পুলিশ রয়েছে শুধু জেলা সদর ও থানচি উপজেলায়।
তবে অতিরিক্ত গরম না থাকলে পর্যটক আরও বেশি আসতে পারেন বলে আশা করছেন এই শিল্প সংশ্লিষ্টরা।
বান্দরবানের জনপ্রিয় পর্যটন স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে চিম্বুক পাহাড়ের সাইরু হিল রিসোর্ট; থানচি উপজেলার নাফাকুম, তিন্দুর বড় পাথর এবং রুমা উপজেলার রিজুক ঝরনা, বগালেক ও কেওক্রাডং।
জেলা শহরে ঢোকার আগে মেঘলায়ে অবস্থিত হলিডে ইন রিসোর্টের ব্যবস্থাপক মো. সানি বলেন, “ঈদের প্রথম দিন থেকে সাতদিন পর্যন্ত ভালো বুকিং পাচ্ছি। হয়তো গরম আবওয়ার কারণে অনেকেই বুকিং বাতিল করছেন; তবে সে জায়গায় আবার অগ্রিম বুকিংও হচ্ছে।”
করোনার দুই বছর পর ঈদে এবার পর্যটক একটু বেশি হবে আশা করছেন তিনি।
পর্যটন মোটেলের ব্যবস্থাপক আলোক বিকাশ চাকমা বলেন, “এক সপ্তাহ আগেই মোটেলের সবকটি কক্ষ ঈদ পরবর্তী পাঁচদিন পর্যন্ত অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে। ঈদকে কেন্দ্র করে পুরো মাসটা মোটামুটি বুকিং থাকবে বলে মনে হচ্ছে।”
জেলা শহর থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে চিম্বুক পাহাড়ে ওয়াইজংশন এলাকায় সাইরু হিল রিসোর্ট ভ্রমণপিপাসুদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। পাহাড়ের উপর নিরিবিলি ও প্রাকৃতিক পরিবেশে গড়ে ওঠা এ রিসোর্ট থেকে সকালে মেঘ দেখা দারুণ উপভোগ্য।
জেলা শহর বাইরে কয়েকটি জনপ্রিয় পর্যটন এলাকা হলো থানচি উপজেলার নাফাকুম, তিন্দুর বড় পাথর এবং রুমা উপজেলার রিজুক ঝরণা, বগালেক ও কেওক্রাডং। এ দুই উপজেলাতেও রিসোর্টগুলোতে বুকিং পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন পর্যটন ব্যবসা সংশ্লিষ্টরা।
থানচি সদরে মেঘবতি রিসোর্টের পরিচালক কোকোচিং মারমা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তার রিসোর্টে মোট ১৫টি কক্ষ রয়েছে। এসব কক্ষ মে মাসের ৩ ও ৪ তারিখের জন্য বুকিং হয়ে আছে।
ঈদের সপ্তাহজুড়ে পর্যটকদের আনাগোনা থাকবে বলে আশা করছেন তিনি।
থানচি এলাকার পর্যটক গাইড চহ্লামং মারমা বলেন, থানচিতে আসা পর্যটকরা মূলত রেমাক্রি নাফাকুম জলপ্রপাত, তিন্দুর বড় পাথর ও থানচি সদর থেকে চার কিলোমিটার দূরে নবনির্মিত পর্যটকেন্দ্র তমা তুঙ্গীতে বেড়াতে যায়। অনেকই বাকলাই ঝরনায় চলে যায়। আবার অনেকেই আদিবাসী বিভিন্ন পাড়ায় ঘুরে বেড়াতে ভালোবাসে।
রুমা উপজেলা পর্যটক গাইড সমিতির সভাপতি পানোয়াম বম বলেন, শুষ্ক মৌসুমে এখন রুমা থেকে কেওক্রাডং পর্যন্ত চাঁদের গাড়ি করে যেতে পারে। হাঁটার কষ্ট করতে হয় না। তবে বৃষ্টি পড়লে শুধু বগালেক পর্যন্ত ঘুরে আসা যায়।
বান্দরবান আবাসিক হোটেল-মোটেল-রিসোর্ট মালিক সমিতির সভাপতি সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, জেলা শহরে মোট ৬০টি আবাসিক হোটেল-মোটেল-রিসোর্টে পাঁচ হাজারে বেশি পর্যটক থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। মাঝখানে দুই বছর করোনা ভাইরাসের কারণে পর্যটন ব্যবসায়ে অনেক ক্ষতি হয়েছে।
মাইক্রো-জিপ-কার মালিক সমিতির সভাপতি নাছিরুল আলম বলেন, সমিতির অধীনে প্রায় ৪০০টির কাছাকাছি পর্যটকবাহী গাড়ি রয়েছে। প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া ভাড়া নিয়ে চলাচল করবে এসব যানবাহন। ঈদকে কন্দ্রে করে এর বাইরে বাড়তি ভাড়া নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
এদিকে, ঈদকে সামনে রেখে জেলা শহরে প্রতিটি পর্যটন কেন্দ্র ও থানচি এলাকায় পর্যটকদের নিরাপত্তায় তিন স্তরের নিরাপত্তা নেওয়া হয়েছে জানিয়েছেন বান্দরবান রেঞ্জের জেলা ট্যুরিস্ট পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আব্দুল হালিম।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, জেলার সব ট্যুরিস্ট পুলিশের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। পর্যটকরা যাতে নির্বিঘ্নে ও স্বচ্ছন্দে ঘুরে বেড়াতে পারে তার জন্য জেলা শহের প্রতিটি পর্যটন কেন্দ্র ও থানচিতে কয়েক দফায় পথসভাও করা হয়েছে। এছাড়া কেউ কোনো সমস্যায় পড়লে ট্যুরিস্ট পুলিশকে জানাতে এসব এলাকায় মোবাইল নম্বর টাঙানো হয়েছে।
বেড়াতে আসা সব পর্যটকদের সঙ্গে ভালো আচরণ করতে ট্যুরিস্ট পুলিশের সব সদস্যদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।