ঈদযাত্রার পথে শিমুলিয়া-পাটুরিয়ায় মানুষের ঢল

ঈদ ঘিরে টানা ছয় দিনের ছুটির প্রথম দিনে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ঘরমুখো মানুষের ঢল নেমেছে মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটে।

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধিমুন্সীগঞ্জ ও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 April 2022, 08:20 AM
Updated : 29 April 2022, 08:27 AM

শুক্রবার ভোরে ঢাকা ও আশপাশের এলাকা থেকে বাস, ছোট যানবহন, প্রাইভেটকার বা মোটরসাইকেলে করে এ দুই ঘাটে ভিড় জমান ঈদে বাড়িফেরা মানুষেরা। বেলা বাড়লে ভিড়ও বাড়তে থাকে।

যাত্রী ও যানবহনের চাপ বেশি পড়ায় অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে ছুটছে লঞ্চ ও স্পিডবোটগুলো। প্রচণ্ড গরমে কাঁধে-পিঠে ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পার হলেও তাদের চোখেমুখে লেগে আছে বাড়ি ফেরার আনন্দের রেশ।

শিমুলিয়া

বৃহস্পতিবার ছুটির ঘণ্টা বাজতেই এই ঘাটে যাত্রী ও যানবহনের চাপ বাড়তে থাকে। শুক্রবার সকালে চাপ আরও বেড়ে যায়।

গরমে গাড়ির লম্বা সারি আর মানুষের হুড়োহুড়ি ঠেলাঠেলি অতিক্রম করে যাত্রীরা ফেরি, লঞ্চ বা স্পিডবোটে পাড়ি দিচ্ছেন পদ্মা।

অনেকেই শিমুলিয়া পর্যন্ত গাড়িতে এসে লঞ্চ বা স্পিডবোটে পদ্মা পাড়ি দিয়ে ওপর প্রান্তে গিয়ে আবার গাড়িতে উঠছেন। লঞ্চ এবং স্পিডবোটগুলো অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে ঘাট থেকে ছেড়ে যাচ্ছে।

মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ও মাদারীপুরের বাংলাবাজার এবং শরীয়তপুরের মাঝিরকান্দি নৌপথে ভোর সাড়ে ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ৮৫টি লঞ্চ এবং ভোর ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১৫৫টি স্পিডবোট চলাচল করছে। স্পিডবোটে ১৫০ টাকা ও লঞ্চে ৪৫ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে।

এই ঘাটে ভোর ৬টায় এসেছেন বরিশালগামী সুফিয়া। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “অপেক্ষা করছি ফেরিতে ওঠার জন্য। ছোট দুই বাচ্চা নিয়ে কষ্ট হচ্ছে। তারপরেও খুশি।”

তিনি জানান, বছরে একবারই বাড়ি যাওয়ার সুযোগ হয়। বাবা-মা, ভাই-বোন আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা হয়। তাই বাড়ি যেতেই হবে।

পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছিলেন শহীদ সুমন। শিমুলিয়া ঘাটে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে ভোর সাড়ে ৫টায় ঘাটে এসেছেন। বেলা ১১টা পর্যন্ত তিনি ফেরিতে উঠতে পারেননি।

পিকআপ-মিনি কভার্ডভ্যান পারাপার বন্ধের নির্দেশনা থাকলেও ঘাট এলাকায় অপেক্ষায় রয়েছে এরকম শতাধিক যানবাহন।

এই ঘাট দিয়ে পার হওয়া যাবে না- তা জানতেন না মালবাহী পিকআপ চালক মো. শফিক। ভুল করে এই পথে এসে বিপাকে পড়েছেন তিনি।

শফিক বলেন, “এখন বিকল্প পথে যাওয়ার অবস্থাও নাই। পার হওয়ায় আশায় দুদিন ধরে অপেক্ষা করছি।”

শিমুলিয়া-মাঝিকান্দির সঙ্গে এবার শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটে দিন রাত ২৪ ঘণ্টা ফেরি চালু থাকায় যানবাহন পারাপারে গতি বেড়েছে।

দিনে রো রো ফেরি এনায়েতপুরীসহ ১০টি ফেরি চলাচল করছে এবং রাতে চলাচল করছে সাতটি ফেরি। ফলে রাতের বেলা অপেক্ষার প্রহর কমেছে যাত্রীদের।

ঈদে ঘরমুখো মানুষের ভোগান্তি কমাতে শরীয়তপুরের জাজিরায় মাঝিরকান্দি (সাত্তার মাদবর) ঘাটে নতুন আরেকটি ফেরিঘাট চালু করা হয়েছে। বুধবার থেকে নতুন ঘাটটিতে যানবাহন নিয়ে ফেরি চলাচল করছে।

বিআইডব্লিউটিসি শিমুলিয়া ঘাটের উপ-মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) শফিকুল ইসলাম বলেন, “আশা করছি ১০টি ফেরি দিয়ে সব যাত্রীকে সুন্দরভাবেই পারাপার করতে পারব।

“যেহেতু বাস-ট্রাক শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ও মাঝিরকান্দি রুটে পারাপারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, সেক্ষেত্রে শুধু প্রাইভেটকার, মাইক্রো এসব গাড়ি পারাপার হবে। যাত্রীরা যদি লঞ্চ ব্যবহার করে এবং ছোট গাড়িগুলো আমরা ফেরিতে পারাপার করি সেক্ষেত্রে ঘরমুখো মানুষকে সুন্দরভাবে পারাপার করতে পারব।”

শফিকুল বলেন, দিনের বেলা ১০টি ও রাতে সাতটি ফেরি চলাচল করতে পারবে। পদ্মা সেতুর নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আমাদের মাস্টার আছে, মেরিন বিভাগ আছে, সেনাবাহিনী আছে, বিআইডব্লিউটিএ আছে। সবাই মিলে সোচ্চার আছি আমরা। সতর্কতার সঙ্গে ফেরি চালানো হচ্ছে। যাতে কোনো ধরনের দুর্ঘটনা না ঘটে।

যাত্রীদের নির্বিঘ্নে বাড়ি ফেরাতে ট্রাফিক পুলিশ, নৌ পুলিশ, লৌহজং থানা পুলিশ, জেলা পুলিশ, কোস্টগার্ড, সিভিল ডিফেন্স ও আনসার সদস্যরা কাজ করছেন।

পাটুরিয়া

শুক্রবার সকাল থেকেই যাত্রী ও যানবহনের চাপ বাড়ে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া লঞ্চ ঘাটে। তবে বেলা বাড়ার পর সেই চাপ কিছুটা কমেছে বলে জানিয়েছেন ঘাট সংশ্লিষ্টরা।

পাটুরিয়া লঞ্চ ঘাটের পরিচালক পান্না লাল নন্দী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সকাল বেলা মোটামুটি ঢল নেমেছিল। তবে দুপুরে চাপ অত নেই।

“অল্প সময়ে স্বস্তিতে যারা যেতে চান, তারা লঞ্চে যান। লঞ্চে বসে অল্প সময়ে পার হওয়া যায়। কিন্তু ফেরিতে পার হতে হলে তিন-চার তলা হেঁটে বসার জায়গা খুঁজতে হয়। আবার বেশিরভাগ সময় দাঁড়িয়ে যেতে হয়।”

শুক্রবার পাটুরিয়া ঘাটে ৩২টি লঞ্চ ও ২১টি ফেরি দিয়ে যাত্রী ও যানবহন পারাপার চলছে বলে জানান পান্না লাল।

পাটুরিয়া ঘাটের সুপারভাইজার সুমন বলেন, “করোনার আগে মানুষের যে ঢল ছিল, এ বছর ওই চাপ নেই, তবে সকাল বেলা চাপ ছিল।”

এমভি ব্ল্যাক বার্ড নামে একটি লঞ্চের মালিক নজরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সকালে মেলা চাপ ছিল। এখন অত নাই। যাত্রীরা ফেরিতে না গিয়ে লঞ্চে ওঠে, কারণ (অন্যপাড়ে) লঞ্চ ঘাটে নেমেই গাড়ি পাওয়া যায়। আর ফেরিতে পার হয়ে অনেক দূরে গিয়ে গাড়িতে উঠতে হয়।”

ওই লঞ্চের লঞ্চের সারেং দুলাল জানান, সকাল থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ছয়টি ট্রিপ দিয়েছেন তিনি।

রাজবাড়ীগামী একটি লঞ্চের যাত্রী কামাল হোসেন বলেন, “লোকাল বাসে আসছি, অনেক দূরে নামায় দিছে, সেখান থেকে হেঁটে আসছি। ফেরিতে পার হতে হলে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, সময় বেশিও লাগে। তাই লঞ্চে পার হব।”

নবীনগর থেকে বাসে করে পাটুরিয়া ঘাটে আসা রহমান খানের গন্তব্য মাগুড়া। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমি লঞ্চে যাতায়াত করি। প্রেসে চাকরি করি। নদীপার হয়ে বাসে চরে মাগুরা যাব।”

এদিকে ঘাটে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র বসানো হয়েছে।

ঘাট এলাকায় থাকা মানিকগঞ্জ জেলা ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক শরিফুল ইসলাম বলেন, “যেকোনো পরিস্থিতে আমরা প্রস্তুত আছি।

“অতিরিক্ত যাত্রী যেন না ওঠে সে জন্য আমাদের সদস্যরা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছে।”