ডেনিশ যুবরাজ্ঞীকে মনের কথা বলতে পেরে খুশি উপকূলবাসী

ডেনমার্কের যুবরাজ্ঞী মেরি এলিজাবেথকে মনের কথা বলতে পেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন উপকূলবাসী।

শরীফুল্লাহ কায়সার সুমন সাতক্ষীরা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 April 2022, 03:28 AM
Updated : 28 April 2022, 06:46 AM

বুধবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় এসে সুন্দরবন সংলগ্ন দারিদ্রপীড়িত মানুষের সঙ্গে প্রায় সাত ঘণ্টা সময় কাটান মেরি।

উপজেলার কুলতলী গ্রামের পুষ্প রানী মণ্ডল বলেন, “রাজকুমারীর আগমনে আমরা খুবই খুশি। রাজকুমারীকে বলেছি কুলতলী খাল খননের ফলে এলাকায় মিষ্টি পানির যোগান বেড়েছে। খালের মিষ্টি পানির বদৌলতে এক ফসলের পরিবর্তে এখন দুটো ফসল হচ্ছে- এসব কথা রাজকুমারীকে বলেছি।”

যুবরাজ্ঞী মেরি সকালে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর হ্যালিকপ্টারে এসে শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের ধানখালীতে নির্মিত হ্যালিপ্যাডে অবতরণ করেন। সেখান থেকে তিনি গাড়িতে করে তিন কিলোমিটার দূরে কুলতলী গ্রামে যান; কথা বলেন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে; ঘুরে দেখেন কুলতলী এলাকার বেড়িবাঁধ ও আশ্রয়কেন্দ্র।

মেরিকে ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির দলনেতা জগদীশচন্দ্র মণ্ডল।

জগদীশ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, তিনি মেরিকে শুনিয়েছেন দুর্যোগকালে মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়ার অভিজ্ঞতার কথা।

“মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে আসতে চায় না। কিন্তু যখন দুর্যোগের মুখে পড়ে অসহায় হয়ে পড়ে, তখনই তারা ছাগল-গরু নিয়ে ঝড়ের মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে আসে। এলাকায় টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও আরও আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের দাবি জানিয়েছি যুবরাজ্ঞীর কাছে।”

নিরাপত্তার স্বার্থে যুবরাজ্ঞীর সফর উপলক্ষে জেলায় এবং সুন্দরবন এলাকায় নেওয়া হয় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সাংবাদিকদেরও প্রবেশাধিকার ছিল না সেখানে।

মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অসীমকুমার মৃধা বলেন, “মেরি কুলতলী গ্রামে গিয়ে বেড়িবাঁধে কিছুক্ষণ হাটেন; আশ্রয়কেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করেন। পরে কুলতলী গ্রামের মানুষদের সঙ্গে কথা বলেন রাজকুমারী। গ্রামবাসী তাকে জানিয়েছে, দুর্যোগে ভঙ্গুর বাঁধের জন্য তারা প্রায় প্রতিবছর ঘরবাড়ি হারায়।

“এলাকায় বেকারত্ব ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে জানিয়ে গ্রামবাসী মেরিকে বলেন, ‘চিংড়িঘেরে লোকবল কম লাগে। অপরদিকে মিষ্টি পানির অভাবে কৃষিব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। জলাভূমি খনন করে মিষ্টি পানির ব্যবস্থা করে এলাকার কৃষিব্যবস্থা আগের জায়গায় ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন চাষিরা’।”

ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে কথা বলার পর মুন্সিগঞ্জের বরষা রিসোর্টে দুপুরের খাবার খান মেরি। তারপর সুন্দরবন ভ্রমণের জন্য যান কলাগাছী এলাকায়। সেখানে রাজকুমারীকে স্বাগত জানান খুলনা বিভাগীয় বন সংরক্ষক ড. আবু নাসের মোহসীন হোসেন।

মোহসীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যুবরাজ্ঞীকে বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন সম্পর্কে বিশদ ধারণা দেওয়া হয়েছে।”

জেলা প্রশাসনের সার্বিক তত্বাবধানে মেরি এলিজাবেথের সফর সম্পন্ন হয়। নিরাপত্তার জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নেয় এসএসএফ এবং স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন।

সফর শেষে বিকেল ৫টার দিকে আবার হ্যালিকপ্টারে ঢাকায় ফিরে যান মেরি।

সাতক্ষীরার ডিসি হুমায়ুন কবির বলেন, “ডেনমার্কের এই ক্রাউন পিন্সেস আন্তরিক সময় কাটিয়েছেন। সফলভাবে আয়োজন করা হয়েছিল সবকিছু।”

তিন দিনের সফরে সোমবার বাংলাদেশে এসেছেন মেরি। সফরের কেন্দ্রে জলবায়ু পরিবর্তনকে রাখার কথা জানিয়েছেন তিনি। সুন্দরবন এলাকায় সফরে তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের কী অভিঘাত দেখতে পেয়েছেন তা এখনও বলেননি। তবে সফরের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণাথী শিবির পরিদর্শন করে তিনি ‘পরিস্থিতি খুবই সংকটপূর্ণ’ বলে তার উদ্বেগ জানিয়েছিলেন।

আরও পড়ুন-