বহরে যুক্ত হয়েই বিকল ফেরি, শিমুলিয়ায় লঞ্চ-স্পিডবোটে ভিড়

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার ‘প্রবেশদ্বার’ হিসেবে খ্যাত শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ও শিমুলিয়া-মাঝিরকান্দি নৌ-পথে ফেরি সঙ্কট দেখা দেওয়ায় ঈদে ঘরমুখো মানুষ ঘাটে এসে চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়ছেন; অনেকেই বিড়ম্বনা কাটাতে পদ্মা পারি দিচ্ছেন লঞ্চ ও স্পিডবোটে করে।

ফারহানামির্জা, মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 April 2022, 07:47 AM
Updated : 27 April 2022, 07:51 AM

এ দুটি নৌ-পথে ফেরি সঙ্কট কাটাতে মঙ্গলবার ‘বেগম রোকেয়া’কে বহরে যুক্ত করা হলেও বুধবার ফের বিকল হয়ে গেছে। ফলে এখানে আগে যেখানে কমবেশি ২০টি ফেরিতে পরাপার হতো, এখন সেখানে সাতটি ফেরিতে কাজ চালানো হচ্ছে।

সকালে শিমুলিয়া ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, গত দুদিনের তুলনায় অনেক বেশি মানুষ বাড়িমুখো। অধিকাংশ মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে সকাল সকাল ঘাটে এসেছেন। কিন্তু ফেরির স্বল্পতায় তাদেরকে রোদ আর গরমের মধ্যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে। উপায় না দেখে, বেশি ভাড়া দিয়ে অনেকে লঞ্চ বা স্পিডবোটে করে পদ্মা পারি দিচ্ছেন। 

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) শিমুলিয়া ঘাটের পরিদর্শক মো. সোলেমান বলেন, “ফেরির সংখ্যা কম থাকায় লঞ্চেই বেশি সংখ্যক যাত্রী পার হচ্ছেন। এই নৌ-পথে ১৫৩টি স্পিডবোট ও ৮৩টি লঞ্চ চলাচল করছে।”

স্পিডবোট চলাচল করছে সকাল ৬টা থেকে বিকাল ৬টা পর্যন্ত। আর বুধবার থেকে লঞ্চ চলাচল করবে রাত ১০টা পর্যন্ত। আগে রাত ৮টা পর্যন্ত চললেও ঈদের কারণে দুই ঘণ্টা বাড়ানো হয়েছে।

শিমুলিয়ায় সকাল থেকেই গাড়ির লাইনের বাইরে পন্টুন ঘিরে মোটরসাইকেলের ভিড় দেখা গেছে।

ঘাটে অপেক্ষারত খুলনাগামী রাশেদা বেগম বলেন, তার স্বামী ও বড় ছেলে ঢাকায় রেডিমেড কাপড়ের ব্যাবসা করেন। ঈদের আগে ঘাটে অনেক ভিড় হয়, তাই ছেলের বৌ, নাতি ও পরিবারের অন্য সদস্যরা মিলে গ্রামের বাড়ি রওয়ানা হয়েছেন।

মাদারীপুরের শিবচরগামী যাত্রী শহিদুল সরদার বলেন, “ঈদের আগে ঘাটে ভোগান্তি হয় অনেক। তাই আগেই বাড়ি যাচ্ছি। সকাল ৬টায় ঘাটে এসেছি। এখনও বসে আছি। এখানে প্রচণ্ড গরম। গরমে বাচ্চারা খুব বিরক্ত। তারা বলছে, ফেরি দিয়ে যাই না কেন, আমরা যে ফেরির সিরিয়ালে বসে আছি, তাদের বুঝানো যাচ্ছে না।”

তিনি আরও বলেন, “ফেরির সংখ্যা বেশি থাকলে এভাবে গরমে বসে থাকতে হতো না।”

নার্গিস সুলতানা যাচ্ছেন বরিশালে। তার স্বামী সাভারের একটি তৈরি পোশাক কারখানার সুপারভাইজার। স্বামীর ছুটি হয়নি। তাই তিনি ঈদের যানজটের ভোগান্তি এড়াতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গ্রামে যাচ্ছেন।

তিনি বলেন, “সাভার থেকে ভোর ৫টায় রওনা হয়েও ঘাটে এসে এখন ফেরির সিরিয়ালে আছি।”

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) শিমুলিয়া ঘাটের টার্মিনাল সুপার এইচ এম ইয়াদুল ইসলাম বলেন, “ঈদে ঘরমুখো মানুষকে নির্বিঘ্নে পার করতে বিআইডব্লিউটিসি সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েছে। যেহেতু সবাই ঈদে বাড়ি যাবে, তাই চাপ একটু বেশি। আমরা চাপ কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি। আমাদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে।”

বিআইডব্লিউটিএ ও বিআইডব্লিউটিসি জানায়, বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌ-পথ দিয়ে শরীয়তপুর, মাদারীপুরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী যানবাহন ফেরিতে পারাপার হয়। এই পথে আগে ২১টি থেকে ১৮টি ফেরি চলাচল করত। এ নৌ-পথে চলতে গিয়ে গত বছরের জুলাই মাসে একাধিকবার পদ্মা সেতুর পিলারের সঙ্গে রো-রো ফেরির ধাক্কা লাগে।

এমন পরিস্থিতিতে গত বছরের ১৮ আগস্ট থেকে ওই নৌ-পথে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। তখন থেকে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ চরম বিপাকে পড়ে।

পরে ৮ নভেম্বর হতে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌ-পথে দিনের বেলায় এবং পরবর্তীতে ১৩ ডিসেম্বর থেকে পদ্মা সেতুকে এড়িয়ে শিমুলিয়া থেকে মাঝিরকান্দি নৌ-পথে সীমিত ফেরি চলাচল শুরু হয়।

এদিকে আট মাস পরে বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌ-পথে পদ্মা সেতুর নীচ দিয়ে ২৪ ঘণ্টা ফেরি চলাচল শুরু হয়েছে। আর মাঝিরকান্দিতে দ্বিতীয় ঘাট সচল হওয়ায় ফেরিগুলো গতি পেয়েছে।

আরও পড়ুন: