রোহিঙ্গাদের দুদর্শা দেখলেন ডেনিশ যুবরাজ্ঞী

বাংলাদেশ সফরে এসে বেশ উচ্ছ্বাস দেখালেও মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের দুর্দশার বিবরণ শুনে মন খারাপের কথাই শোনালেন ডেনমার্কের যুবরাজ্ঞী মেরি এলিজাবেথ।

নিজস্ব প্রতিবেদককক্সবাজার প্রতিনিধি ওবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 April 2022, 10:36 AM
Updated : 26 April 2022, 06:14 PM

মঙ্গলবার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখার পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “পরিস্থিতি খুবই সংকটপূর্ণ। সাহায্যের প্রয়োজন অনেক বেশি আর সব কিছু ছাড়িয়ে আসে জলবায়ু পরিবর্তনও।”

তিন দিনের সফরে সোমবার বাংলাদেশে এসেছেন ডেনমার্কের ক্রাইন প্রিন্সেস। সফরের কেন্দ্রে জলবায়ু পরিবর্তনকে রাখার কথা প্রথমদিন এক ভিডিওবার্তায় জানান তিনি।

রোদ্রৌজ্জল দিনে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখেন মেরি। শিশুদের সঙ্গে সময় কাটানোর পাশাপাশি ক্যাম্পের খুপড়ি ঘরে গিয়ে শরণার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময়ও করেন তিনি।

টেকনাফে দুপুরের তাপমাত্রার পারদ যখন ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে চড়েছে, তখন ক্যাম্পের বিভিন্ন প্রান্তে যান মেরি এলিজাবেথ।

পরিদর্শনের সময় নীলাভ ক্যাজ্যুয়াল শার্ট আর হলুদাভ প্যান্টের সঙ্গে ওয়াকিং ‍সু পরেছিলেন ডেনিশ রাজবধূ। রোদের তীব্রতা থেকে বাঁচতে মাথায় তোলেন লম্বা প্রান্তওয়ালা হ্যাট।

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলায় মঙ্গলবার রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেন ডেনমার্কের যুবরাজ্ঞী মেরি এলিজাবেথ।

কুতুপালংয়ের ৫ নম্বর রোহিঙ্গা শিবিরে পৌঁছালে তাকে স্বাগত জানান শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার শাহ্‌ রেজওয়ান হায়াত।

এ সময় তিনি ডেনিশ রিফিউজি কাউন্সিলের (ডিআরসি) উদ্যোগে বাস্তবায়নাধীন রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে পাহাড় ধস রোধ এবং পরিবেশ রক্ষায় বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পর্যবেক্ষণ করেন। মেরি এলিজাবেথ ডিআরসির অন্যতম পৃষ্ঠপোষক।

এরপর মেরি উখিয়া উপজেলার ৮ ও ৬ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে যান। তিনি হেঁটে হেঁটে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘুরে দেখেন এবং বলপ্রয়োগে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া নারী-শিশুদের সঙ্গে কথা বলেন।

পরিদর্শনকালে যুবরাজ্ঞী গাছের চারা রোপণ করেন এবং রোহিঙ্গা কোর্ডিনেশন অফিসে উপকারভোগী রোহিঙ্গাদের সঙ্গেও কথা বলেন।

রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে তিনিউখিয়ার রাজাপালং ইউনিয়নের পাতাবাড়ী এলাকায় স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

রোহিঙ্গা শিশুদের সঙ্গে মেরি এলিজাবেথ। ছবি: পিআইডি

টেকনাফ ও উখিয়ায় বিস্তীর্ণ শরণার্থী শিবিরগুলোতে আশ্রয় নিয়ে আছে ২০১৭ সালের অগাস্টের পর রাখাইন রাজ্য থেকে নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা সাত লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী। আগে থেকে সেখানে আশ্রয়ে ছিল আরও চার লাখের মতো মিয়ানমার নাগরিক। এদের কিছু মানুষকে গত এক বছরে ভাসানচরে সরিয়ে নেওয়া হয়।

ক্যাম্প পরিদর্শনশেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বাঁশ-প্লাস্টিকের খুপড়ি ঘরগুলোতে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের দুর্দশার কথা তুলে ধরেন তিনি। বলেন, “এমন কেউ নেই যে পালাতে চায়। এটা সংঘাতের কারণে তৈরি পরিস্থিতি।”

ডেনমার্কের পত্রিকা বিল্ড-ব্লাডেট লিখেছে, শরণার্থীদের কষ্টের কথা হৃদয় ছুঁয়েছে মেরি এলিজাবেথের। দুর্দশার কথা বলার সময় সেটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল তার চোখেমুখে।

কক্সবাজারের উখিয়ার ৫ নম্বর রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে মঙ্গলবার সকালে পৌঁছলে ডেনিশ যুবরাজ্ঞী মেরি এলিজাবেথকে স্বাগত জানান শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার শাহ মো. রেজওয়ান হায়াত।

ঢাকায় পৌঁছে সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন মেরি এলিজাবেথ। এরপর একটি হোটেলে ডেনমার্কের সঙ্গে বাংলাদেশের ‘গ্রিন ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট’ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি।

চুক্তিপত্রে সই করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ও সফররত ডেনিশ উন্নয়ন ও সহযোগিতামন্ত্রী ফ্লেমিং মুলার মর্টেনসেন।

সফরের শেষ দিন সাতক্ষীরায় সুন্দরবন এলাকা পরিদর্শনে যাবেন মেরি এলিজাবেথ। সেখানে স্থানীয়দের সঙ্গে মতবিনিময়ের পাশাপাশি নৌকায় ঘুরবেন তিনি। ঘুর্ণিঝড় প্রস্তুতি কার্যক্রম পরিদর্শনের কথাও রয়েছে তার।

 

আরও পড়ুন: