দক্ষিণাঞ্চলের ‘প্রবেশদ্বার’ হিসেবে খ্যাত পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া, শিমুলিয়া-বাংলাবাজার, শিমুলিয়া-মাঝিরকান্দি ঘাটে ঘরমুখো মানুষের ভিড় রোববার থেকেই বাড়তে শুরু করেছে; সৃষ্টি হয়েছে যানজটের।
সোমবার দিনভর সরজমিনে দেখা গেছে, যাত্রীদের পদ্মা পরাপারে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রোদ আর গরমের মধ্যে অপেক্ষা করতে হচ্ছে ফেরিতে উঠার জন্য। ফেরি না পেয়ে কেউ কেউ লঞ্চ বা স্পিডবোটে পদ্মা পাড়ি দিচ্ছেন। ফেরি সঙ্কট, ঘাটে উপযুক্ত পরিবেশ না থাকার অভিযোগও করেছেন তারা।
সোমবার বিকালে বিআইডব্লিউটিসির পাটুরিয়া কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক মহীউদ্দিন রাসেল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সোমবার সকাল থেকে দুপর পর্যন্ত ছোট গাড়ির চাপ অনেক বেশি ছিল। সকালের দিকে দুই শতাধিক ছোট গাড়ি পাটুরিয়া ঘাট ও সড়কে ছিল। অর্ধশতাধিক বড় গাড়িও ছিল। তবে বিকেলের দিকে ঘাটে চাপ কমে গেছে।
ঢাকা থেকে সন্তানদের নিয়ে খুলনায় পথ দিয়েছেন রোকসানা বেগম (৪০)। হানিফ পরিবহন বাসের এই যাত্রী বলেন, “ঈদের ছুটির সময় যাত্রীদের চাপ বেশি থাকে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয়। তাই সন্তানদের নিয়ে আগেই বাড়ি যাচ্ছি।”
যশোরগামী ঈগল পরিবহনের যাত্রী রফিক মিয়া জানান, তিনি ঢাকা থেকে ছেলের বউ আর নাতিদের নিয়ে বাড়ি যাচ্ছেন।
“ছেলে ঈদের সময় আসবে। এখন ঘাট ফাঁকা থাকবে বলেই আগেই বাড়ি যাচ্ছি।”
মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে গোপালগঞ্জগামী আলেয়া আক্তার জানান, তিনি স্বামীর সঙ্গে গাজীপুর থাকেন। স্বামী গাজীপুরের একটি তৈরি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। স্বামীর এখনও ছুটি হয়নি। ঈদের যানজট এড়াতে আগেভাইে তিন সন্তান ও শাশুড়িকে নিয়ে বাড়িমুখো হয়েছেন।
“সেহেরির পর গাজীপুর থেকে রওয়ানা দিছি। কিন্তু ঘাটে এসে দীর্ঘসময় ফেরির জন্য বসে আসি। কখন ফেরি পাব আর কখন বাড়ি পৌঁছব বুঝতে পারছি না।”
মাগুরাগামী সৈকত হোসেন নারায়ণগঞ্জে একটি বেসরকারি কলেজে শিক্ষকতা করেন। সকাল ১০টায় তিনি ছয় মাসের কন্যা ও স্ত্রীসহ শিমুলিয়া ঘাটে পৌঁছান। দুপুর ১২টা অবধি তিনি ফেরির দেখা পাননি।
একই ঘাটে কথা হয় ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরীজীবী সুলতানা আক্তারের সঙ্গে। তার বাড়ি খুলনায়। বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা-মা আর ছোট দুই ভাই আছে। ঢাকা থেকে অনেকটা নির্বিঘ্নে এলেও শিমুলিয়া ঘাটে এসে বিপাকে পড়েছেন; ফেরির দেখা পাচ্ছেন না।
“এবারের ঈদ পরিবারের সঙ্গে করব, এ কারণে অনেকদিন বাড়ি যাইনি। ঈদের ছুটি হয়নি এখনও। আমি ছুটি নিয়ে চাপ এড়ানোর জন্য বাড়ি রওয়ানা হয়েছি।”
রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাটের যাত্রী মিকাইল বিন মাসুম বলেন, “আমি ঢাকাতে লেখাপড়া করি। প্রতি ঈদেই ঢাকা থেকে বাড়িতে ফেরার পথে যানজটে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আগেভাগেই রওনা দিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, “এক সপ্তাহ আগে রওনা হয়েও ফেরিঘাটের যানজটে তিন ঘণ্টা বসেছিলাম। পরে লঞ্চে পদ্মা পাড়ি দিয়েছি। এখনই ঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা থাকতে হচ্ছে। ঈদের সময় যে কী হবে সেটা সৃষ্টিকর্তাই জানেন।”
“প্রতি বছরই ঈদের আগে ও পরে এই ভোগান্তিতে পড়তে হয়। ভোগান্তি এড়াতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আগেই বাড়িতে যাচ্ছি।”
বৃষ্টি খাতুন বলেন, তার স্বামী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। তিনি যখন ঈদের ছুটি পাবেন তখন বাড়িতে ফিরতে হলে পদে পদে ভোগান্তিতে পড়তে হবে।
“একসঙ্গে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার কথা থাকলেও আগেই আমি রওনা দিছি। কারণ দুই বছর বয়সী শিশুকে নিয়ে ফেরিঘাটে এসে আট-দশ ঘণ্টা বসে থাকা সম্ভব না। আগে বাড়িতে যাওয়ার কারণ একটাই, ফেরিঘাটের ভোগান্তি।”
“ঈদ ঘনিয়ে আসায় ঘাটে যাত্রী ও ছোট-বড় বিভিন্ন যানবাহনের চাপ বাড়তে শুরু করেছে।”
শিমুলিয়া ঘাটের বিআইডব্লিউটিসির পরিচালক (বাণিজ্য) এস এম আশিকুজ্জামান বলেন, শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ও শিমুলিয়া-মাঝিকান্দি নৌ-পথে ঈদে ফেরি বাড়বে। আমরা আশা করছি, বুধ-বৃহস্পতিবার থেকেই ঘাটে যাত্রীদের চাপ শুরু হবে। এখনও আসছে, তবে কম।
আরও পড়ুন: