শিমুলিয়ায় ২১ ফেরির পাঁচটি সচল: ‘ঈদে কী হয় আল্লাই জানে’

মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাট থেকে দুটি নৌ-পথে আগে ২১টি ফেরি চললেও কমতে কমতে তা এখন পাঁচটিতে এসে ঠেকেছে। ফেরি সঙ্কটে স্বাভাবিক সময়েই নাকাল যাত্রীরা এই ঘাটে ঈদের সময় ভোগান্তি কতোটা হবে তা ভাবতেই যেন শিউরে উঠছেন। 

ফারহানামির্জা, মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 April 2022, 11:08 AM
Updated : 24 April 2022, 02:15 PM

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) আশ্বাস, ‘শিমুলিয়া-বাংলাবাজার’ ও ‘শিমুলিয়া-মাঝিরকান্দি’ (সাত্তার মাদবর-মঙ্গল মাঝির ঘাট) নৌ-পথে বাড়তি চাপ নিয়ন্ত্রণে ফেরি বাড়ানো হবে।

তবে কতটা ফেরি এখানে যুক্ত হবে আর কবে থেকেই-বা যুক্ত হবে তা জানাতে পারেনি ঘাট পরিচালনাকারী সংস্থা।

দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার প্রবেশদ্বার হিসেবে খ্যাত শিমুলিয়ার গত সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাবাজার পর‌্যন্ত ফেরি চলে শুধু দিনের বেলায় এবং আট মাস ধরে এই পথে ভারী যান পারাপারও বন্ধ।

সন্ধ্যার পর শিমুলিয়া থেকে শরীয়তপুরের মাঝিরকান্দি ফেরিঘাটে দুটি ফেরি চলাচল করলেও তাতে অল্পসংখ্যক যানবাহন এবং অ্যাম্বুলেন্স পারাপার হতে দেওয়া হয়।

দুই নৌ-পথে কোনো রো রো ফেরি নেই। বেড়েছে নাব্যতা সঙ্কট। চলতি মৌসুমে পদ্মায় পানি বেড়ে যাওয়ায় এবং খারাপ আবহাওয়া ও কালবৈশাখীর কারণে লঞ্চ বা স্পিডবোটের পরিবর্তে ফেরি ব্যবহারই নিরাপদ মনে করছেন যাত্রীরা। তাই ঘাট এলাকায় যানবাহনের দীর্ঘ লাইন লেগেই থাকে।

আর শিমুলিয়া থেকে ৮৬টি লঞ্চ ও ১৫৩টি স্পিডবোট যাত্রী পারাপার করছে। তাই এখনই শিমুলিয়ায় জরুরি ভিত্তিতে ফেরি বাড়ানোর দাবি যাত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের।

বিআইডব্লিউটিএর স্থানীয় কর্মকর্তারা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, ফেরি বাড়ানো না হলে এবার ঈদে ঘরমুখো মানুষের চাপ সামলাতে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ তৈরি হতে পারে।

ঈদযাত্রার দুর্ভোগের আশঙ্কায় এখনই ভীত বরিশালের মাহাবুব।

তিনি বলেন, "আমি ঢাকায় একটি ফ্যাক্টরিতে কাজ করি। জরুরি কাজ থাকায় দুদিন আগে দেশের বাড়ি বরিশাল গিয়েছিলাম। আগামীকাল কাজে যোগ দেব। ঈদের দুদিন আগে ছুটি হবে, তখন পরিবার নিয়ে বাড়িতে যাব ঈদ করতে। গত বছরের কথা চিন্তা করে এবার পরিবার নিয়ে যেতে ভয় করছে।"

খুলনা থেকে ঢাকার যাত্রী মাসুম শেখ এবারে ফেরির সংখ্যা কম হওয়ায় আসন্ন ঈদযাত্রার পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কিত।

"ঢাকা যাচ্ছি ঈদের আগে, আর আশা হবে না বাড়িতে। গতবার বাড়ি যেতে ১৫ ঘণ্টা সময় লেগেছে। চারিদিকে খালি মানুষ দেখেছি। এবার ফেরির সংখ্যাও কম, আল্লাহ জানে এবার কী হয়।"

পদ্মা সেতু চালু হলে সমস্যা কেটে যাবে বলে আশাবাদী মাসুম।

তিনি বলেন, "পদ্মা সেতু চালু হওয়ার আগে এ সমস্যা যাবে বলে মনে হচ্ছে না।"

মাদারীপুরের শিবচরগামী যাত্রী সখিনা বিবি বাচ্চাদের নিয়ে যাচ্ছেন অসুস্থ বাবাকে দেখতে, এখন ঘাটে এসে ফেরির অপেক্ষায় বসে গরমে কষ্ট পাচ্ছেন।

"বাবা অসুস্থ তাই পরিবার নিয়ে সাভার থেকে সেহেরির পরে রওয়ানা দিয়েছি। ঘাটে এসে বাচ্চাদের নিয়ে ফেরির জন্য সিরিয়ালে আছি। রোজার দিন প্রচণ্ড রৌদ্রের তাপে খুব কষ্ট হচ্ছে।"

বিআইডব্লিউটিএর শিমুলিয়া ঘাটের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মো. ফয়সাল আহমেদ বলেন, "শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌ-পথে ঈদে বাড়তি চাপ নিয়ন্ত্রণে আরও ফেরি বাড়ানো হবে।"

তবে সেই সংখ্যা ঠিক কতো এবং কত তারিখে নতুন ফেরি যুক্ত হচ্ছে সে সম্পর্কে এই কর্মকর্তা কিছু জানাননি।

বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক বলেন, "পরিস্থিতি মোকাবেলায় মাঝিরকান্দিতে আরও একটি ঘাট বাড়ানো করা হচ্ছে। এ ছাড়া শিমুলিয়া-বাংলাবাজার রুটেও ২৪ ঘণ্টা ফেরি চালুর ব্যাপারেও চেষ্টা চলছে।"

এ ছাড়া মুন্সীগঞ্জ-নারায়ণগঞ্জ রুটেও মাঝারি আকারের ১০টি লঞ্চ দু-একদিনের মধ্যেই চালু হচ্ছে বলে জানান চেয়ারম্যান।

ঈদযাত্রায় ‘শিমুলিয়া-বাংলাবাজার’ ও ‘শিমুলিয়া-মাঝিরকান্দি’ নৌ-পথে রাত ১০টা পর্যন্ত লঞ্চ চলাচল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ। আগামী ২০ দিনের জন্য দুই ঘণ্টা সময়সীমা বাড়িয়েছে কর্তৃপক্ষ। স্বাভাবিক সময়ে এ নৌ-পথে রাত ৮টা পর্যন্ত লঞ্চ চলাচল করে।

৮৬টা লঞ্চ চলাচল করবে জানিয়ে শিমুলিয়া নদী বন্দরের বিআইডব্লিউটিএর সহকারী পরিচালক মো. শাহাদাত হোসেন জানান, লঞ্চ মালিক সমিতির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান সময়সীমা বাড়ানোর অনুমতি দিয়েছেন।

লিখিত ওই আবেদনে শিমুলিয়া জোনের লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতি আতাউর রহমান বলেন, "রাত ৮টায় লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে এ নৌ-পথে যাত্রীদের চলাচলের জন্য আর কোনো উপায় থাকে না। ফলে যাত্রীদের টার্মিনালের খোলা জায়গায় বাধ্য হয়ে রাতভর অবস্থান করতে হয়। ঈদে যাত্রীদের চলাচলের সুবিধার্থে দুই ঘণ্টা বৃদ্ধি করা হলে যাত্রীদের যাত্রা সহজ হবে।"

মহামারীর গত দুই বছরে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার সময় শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌ-পথে ঘরমুখী মানুষের চাপ ছিল লাগামহীন। পদ্মায় তীব্র স্রোত থাকায় লঞ্চ ও স্পিডবোট বন্ধ থাকায় পারাপারের একমাত্র ভরসা ছিল শুধু ফেরি। গতবছর দেখা গেছে, যাত্রীদের চাপে যানবাহনের পরিবর্তে শুধু যাত্রী নিয়েই পারাপার হয়েছে ফেরিগুলো।

আরও পড়ুন: