‘আশায় ভাটা দেশের বৃহত্তম’ পাইকারি কাপড়ের বাজারে

করোনাভাইরাস মহামারীর প্রভাব কাটিয়ে গত দুই বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার কথা ভাবছিলেন দেশের ‘সবচেয়ে বড়’ পাইকারি কাপড়ের বাজার নরসিংদীর শেখেরচর-বাবুরহাটের ব্যবসায়ীরা।  কিন্তু ‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি আর সুতার দাম বৃদ্ধি’ তাতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

হাসিবুর রহমান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 April 2022, 05:17 PM
Updated : 23 April 2022, 05:20 PM

শনিবার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, অনেক দোকানে কিছু ক্রেতা থাকলেও অনেক দোকান একেবারেই ফাঁকা। অথচ স্বাভাবিক সময় প্রতিবছর ঈদের আগের এই সময় ক্রেতার ভিড়ে বাজারে পা ফেলা যেত না।

শেখেরচর-বাবুরহাট বণিক সমিতির সহ-সভাপতি মোতালিব মিয়া বলেন, “এবার ভিন্ন পরিস্থিতি। বিক্রেতারা কাপড় বিক্রির জন্য প্রস্তুত থাকলেও ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়েছে ঠিকই, ক্রেতার আয় বাড়েনি।

“ক্রেতারা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে তারপর কাপড় কিনতে আসে। এখন নিত্যপণ্য কিনতেই টাকা শেষ। আমরা এইজন্য ক্রেতা পাচ্ছি না।”

তাছাড়া সুতার দাম বৃদ্ধির ফলে কাপড়ের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাজারে ক্রেতার সংখ্যা কম বলে তার দাবি।

মোতালিব মিয়া বলেন, “আমরা ভেবেছিলাম ঈদে করোনাভাইরাসের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারব। কিন্তু এখনও দেখা যাচ্ছে না।”

শেখেরচর-বাবুরহাটে বাজার বসে প্রতি বৃহস্পতি-শুক্র-শনিবার এই তিন দিন। তবে মহামারীর ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অনেক ব্যবসায়ী এবার পুরো সাতদিনই দোকান খোলা রাখছেন।

মোতালিব মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঈদ ঘিরে প্রতিবছর কয়েক হাজার কোটি টাকার কাপড় বিক্রি হয় এই বাজারে। প্রতি সপ্তাহে আমরা একটা হিসাব করি। সপ্তাহের হিসাব অনুযায়ী ঈদের আগ পর্যন্ত দেড় থেকে দুই হাজার কোটি টাকার কাপড় বিক্রি হবে বলে আশা রাখছি। তবে অন্যান্য বছর আড়াই থেকে তিন হাজার কোটি বিক্রি হত ঈদের এই সময়টাতে।"

রসনা প্রিন্ট শাড়ির দোকানের মালিক দুলাল মিয়া জানান, কাপড় উৎপাদনের এবার তাদের ব্যয় বেড়েছে আগের বছরের চেয়ে বেশি।

তিনি বলেন, “কাপড় তৈরিতে গ্যাস-সুতা-চুনের ব্যবহার হয়। তিনটারই দাম বেড়ে যাওয়ায় এবার কাপড়ের দামও বেড়ে গেছে। ঢলে আগে যেখানে ঈদের হাটে ২০-২৫ লাখ টাকার কাপড় বিক্রি করতে পারতাম, এবার তেমনটা হচ্ছে না। ১০-১২ লাখ টাকা বিক্রি করতে পারছি এখন।”

শাহাদাত হোসেন নামে একজন ক্রেতা পাঞ্জাবির কাপড় কিনে ফিরছিলেন।

তিনি বলেন, “পাঞ্জাবির কাপড় কিনলাম গজপ্রতি ১৯০ টাকা। অথচ এই কাপড়টাই গত বছর ১৭০ টাকায় কিনেছিলাম।”

সব কাপড়েরই দাম বেড়েছে কিনা জানতে চাইলে সাইফুল ইসলাম নামে এক দোকানি বলেন, “গজ কাপড়ের দাম বেড়েছে। গজপ্রতি কোনো কাপড়ের দাম ১০ থেকে ২০ টাকা; অনেক কাপড়ের দাম ১০০ টাকাও বেড়েছে।”

শেখেরচর-বাবুরহাট বণিক সমিতির নেতারা দাবি করেন, দেশি কাপড়ের ৭০ শতাংশ পূরণ হয় এই বাজার থেকে। ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ছয় হাজার দোকান রয়েছে এখানে।

শাড়ি, লুঙ্গি, থ্রি-পিস, পাঞ্জাবির কাপড়, থান কাপড়সহ নানা ধরনের দেশি কাপড় বিক্রি হয় এই কাপড়ের বাজারে।