সুনামগঞ্জে অর্ধেক ধান গোলায় উঠেছে: কৃষি বিভাগ

পাহাড়ি ঢলে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি ও ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ রক্ষার লড়াইয়ের মধ্যেই সুনামগঞ্জের হাওরে দ্রুত গতিতে ধান কাটছে কৃষক; যদিও কিছু স্থানে ফসল ডুবছেও।

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 April 2022, 07:26 AM
Updated : 22 April 2022, 07:27 AM

সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় হাওরের ভেতরে মোট ১ লাখ ৬৫ হাজার ২৩০ হেক্টর জমিতে বোরো ফসল আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে মোট ৫ হাজার ৬৩৫ হেক্টর জমির বোরো ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১১ উপজেলার বিভিন্ন হাওরে ৯৪ হাজার ২০০ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে; যা মোট আবাদের ৫৭ শতাংশ।

তবে কৃষি বিভাগের এই তথ্যের সঙ্গে ভিন্নমত প্রকাশ করেছে কৃষক সংগঠন-‘হাওর বাঁচাও আন্দোলন’ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি। তাদের দাবি, কৃষি বিভাগের দেওয়া তথ্যে গড়মিল আছে।

হাওর বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায় বলেন, “আমরা মাঠ পর্যায়ের কৃষক ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা জানিয়েছেন, অন্তত ১৫ হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর ধান কাটা হয়েছে ৪০ ভাগের মতো। কৃষি বিভাগ ক্ষতি ও কর্তনের যে হিসেব দিয়েছে তা সঠিক নয়। তারা ঘরে বসে মাঠের প্রতিবেদন দিয়েছে। যাতে মাঠের প্রকৃত তথ্য উঠে আসেনি।”

সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম জানান, জেলায় মোট ২ লাখ ২২ হাজার ৫০৮ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে হাওরের ভেতরে আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৬৫ হাজার ২৩০ হেক্টর জমিতে। আর হাওরের বাইরে আবাদ হয়েছে ৫৭ হাজার ৫৭৫ হেক্টর জমিতে।

বৃহস্পতিবার পর্যন্ত জেলায় হাওরের ভেতরে ৯৪ হাজার ২০০ হেক্টর জমির বোরো ধান কাটা হয়েছে; যা মোট আবাদের ৫৭ শতাংশ।

উপজেলায় কর্তনের পরিমাণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় ৫ হাজার ৩৭৫ হেক্টর, শান্তিগঞ্জ উপজেলায় ১০ হাজার ৬২৩ হেক্টর, দোয়ারাবাজার উপজেলায় ২ হাজার ৭৯৩ হেক্টর, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় ৫ হাজার ৮৩৫ হেক্টর, জগন্নাথপুর উপজেলায় ৮ হাজার ৬৯৭ হেক্টর, জামালগঞ্জে ৮ হাজার ৫৩৯ হেক্টর, তহিরপুরে ৬ হাজার ৪১১ হেক্টর, ধর্মপাশায় ১৫ হাজার ১০২ হেক্টর, ছাতকে ১ হাজার ৭২৬ হেক্টর, দিরাইয়ে ১৪ হাজার ৩৫৭ হেক্টর ও শাল্লায় ১৩ হাজার ৫৪৯ হেক্টর জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে।

কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালকের কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় ১০০ হেক্টর, দোয়ারাবাজারে ২০ হেক্টর, জগন্নাথপুরে ২০ হেক্টর, তাহিরপুরে ৩০০ হেক্টর, ধর্মপাশায় ১ হাজার ১৬৫ হেক্টর, ছাতকে ১৩০ হেক্টর, দিরাইয়ে ৩ হাজার ৭০০ হেক্টর এবং শাল্লায় ২০০ হেক্টরসহ মোট ৫ হাজার ৬৩৫ হেক্টর জমির বোরো ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

পুরোদমে ধান পাকতে আরও এক সপ্তাহের বেশি সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন হাওরের একাধিক কৃষক। তবে তবে বৈরি প্রকৃতির কারণে অকাল বন্যার ভয়ে ক্ষেতের আধাপাকা ধান কাটতে দেখা গেছে অনেক কৃষককে।

শান্তিগঞ্জ উপজেলার ঠাকুরভোগ গ্রামের কৃষক মোহর আলী বলেন, “নদীতে পানি বেশি। এই অবস্থা দেখে সবাই মিলে ধান কাটতে এসেছি। তবে আমাদের হাওরে প্রায় ৪০-৪৫ ভাগ জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে। দু-তিন দিন সময় পেলে কৃষক মোটামুটি সব ধান কেটে তুলতে পারবে।”

শান্তিগঞ্জ উপজেলার খাই হাওরের সলফ গ্রামের কৃষক জুনায়েদ মিয়া বলেন, “আমরার মাসিং নদীতে পানি শুধু বাড়ছে। নদীর দুই তীর ছুঁই ছুঁই করছে। আমি সাত কেদার জমিতে আবাদ করেছিলাম। কেটেছি মাত্র তিন কেদার জমির ধান। এখন পানির ভয়ে সেই জমিও কাটার প্রস্তুতি নিচ্ছি। কিন্তু পর্যাপ্ত শ্রমিক পাচ্ছি না।”

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার মুক্তিখলা গ্রামের খরচাওর হাওরের কৃষক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, “চার কেদার জমিতে ধান চাষ করেছিলাম। অর্ধেক কেটেছি; এখনও অর্ধেক বাকি আছে। সেই জমি কাটার জন্য এখন অস্থির আছি।”

শাল্লা উপজেলার বাহাড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বিশ্বজিৎ চৌধুরী নান্টু বলেন, দিনের গতি প্রকৃতি ও নদীর ফুলে ওঠা দেখে পুরোপুরি পাকার আগেই কাঁচা ধান কাটছেন কৃষক। আমাদের এলাকায় সব মিলিয়ে ৪০ ভাগ জমির ধান কাটা হয়েছে। এই সপ্তাহ ভাল থাকলে এবং ঝূঁকিপূর্ণ বাঁধগুলো টিকে থাকলে হাওরের অবশিষ্ট ফসল কাটতে সক্ষম হবেন কৃষক।

ধানের ক্ষতি ও কর্তনের হিসাব নিয়ে যে অভিযোগ উঠেছে সে বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিমল বলেন, “আমরা মাঠে ঘুরে, মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে ক্ষয়ক্ষতি ও ধান কর্তনের প্রতিবেদন তৈরি করি। আমাদের প্রতিবেদন ভুল হতে পারে না।

তিনি বলেন, বৈরি প্রকৃতির কারণে কৃষক ফসলের মায়ায় সবাইকে নিয়ে মাঠে নেমেছেন ধান কাটতে। তাছাড়া সরকারিভাবে ৪৩৫টি কম্বাইন হার্ভেস্টর, ১০৮টি রিপার যন্ত্র দ্রুত গতিতে ধান কাটতে সহায়তা করেছে। এর সঙ্গে বাইরের জেলার প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক এবং জেলার পোনে তিন লাখ শ্রমিকসহ কৃষকরাও ক্ষেতে নেমে ধান কাটছেন।

আরও পড়ুন: