‘অপুষ্ট’ ধান নিয়ে বিপাকে কিশোরগঞ্জের ক্রেতা-বিক্রেতা

বন্যায় তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় তড়িঘড়ি কেটে তোলা ধান ‘অপুষ্ট হওয়ায়’ বিপাকে পড়েছে কিশোরগঞ্জের ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়পক্ষ।

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 April 2022, 03:35 AM
Updated : 22 April 2022, 03:35 AM

‘অপুষ্ট’ ধানের দাম কম হওয়ায় বিপুল লোকসানের আশঙ্কায় চাষিরা; আবার এই ধান কিনতে গিয়ে দ্বিধায়-দুশ্চিন্তায় ভুগছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে বিক্রি নিয়েও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে চাষিদের।

জেলার বিভিন্ন ধানের মোকামে গিয়ে ক্রেতা-ব্রিকতার সঙ্গে কথা বলে এই চিত্র পেয়েছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।

ইটনা উপজেলা থেকে ভৈরব মোকামে ধান বেচতে আসা আব্দুর রউফ বলেন, “আড়তদাররা গত বছরের তুলনায় মণপ্রতি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা কম দিচ্ছেন। এই দরে ধান বিক্রি করলে উৎপাদন খরচ তো দূরের কথা, ধারদেনা পরিশোধ করাও সম্ভব হবে না।”

গত বছর প্রতি মণ ধান ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি বেচতে পারলেও এবার ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকায় বেচতে হচ্ছে বলে তিনি জানান।

এই ধান দিয়ে তাদের সারা বছরের ভাতের ব্যবস্থা ছাড়াও পরের বছর ধান চাষ এবং পরিবারের সদস্যদের অন্যান্য সব ব্যয় নির্বাহ করতে। সেখানে লোকসানে ধান বেচা মানে সবকিছু ঝুঁকির মধ্যে পড়া। এই পরিস্থিতিতে চাষিরা দিশেহারা বোধ করছেন বলে জানান।

রুহুল আমিন নামে আরেকজন চাষি বলেন, “খাদ্যের সংস্থান তো দূরের কথা, ঋণেয় টাকায় যে ধান চাষ করেছি, তাও পরিশোধ করা যাবে না।”

আর যারা ঋণ নেননি তারা পরের বছরের আবাদ নিয়ে পড়েছেন দুশ্চিন্তায়।

ধান ‘অপুষ্ট’ হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরাও।

ভৈরব বাজারের আড়তদার আলী হোসেন বলেন, “ধানের মান ভাল থাকলে তা থেকে মণপ্রতি ২১ থেকে ২২ কেজি চাল পাওয়া যায়। কিন্তু মোকামে আসা ধানে বড়জোর ১৬ থেকে ১৭ কেজি চাল পাওয়া যাবে, যা ব্যবসায়ীদের দুশ্চিন্তায় ফেলছে।”

প্রতিদিন মোকামে হাজার হাজার মণ ধান আসছে। কিন্তু ক্রেতারা কেনাকাটায় সরব না।

সুধীর ঘোষ নামে একজন আড়তদার বলেন, “আগাম কেটে ফেলায় ধান পুষ্ট হয়নি। অপুষ্ট ধান কেনার ক্রেতা নেই। তাই কৃষক ও ব্যবসায়ী দুই পক্ষই বিপাকে পড়েছে।”

ভৈরব চেম্বার অব কমার্স ও ভৈরব খাদ্যশস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. হুমায়ূন কবীর একই কথা জানান।

তিনি বলেন, “বাজারে আসা ধান অপুষ্ট ও ভেজা হওয়ায় দাম কম। এতে কৃষক ও ব্যবসায়ী উভয়ই বিপাকে পড়েছে। কৃষক টাকা পাচ্ছে না আর ব্যবসায়ী চাল পাচ্ছে না।”

সংকট থেকে উত্তরণে দ্রুত সরকারি ক্রয়কেন্দ্র চালুর দাবি জানিয়েছেন চাষিরা।

তবে কৃষি বিভাগ ধানের পুষ্টিগুণ নিয়ে তাদের বক্তব্য পরিষ্কার করেনি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. ছাইফুল আলম বলেন, “আবহাওয়া প্রতিকূল থাকায় এবং ভেজা ধান সংরক্ষণের সক্ষমতা না থাকায় কৃষক বিক্রি করে দিচ্ছে।

“ভেজা ধান সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় হয়ত ব্যবসায়ীরা দাম কমিয়ে সুযোগ নিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বাজার মনিটরিংয়ে যদি স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতারা তৎপর হন তবে ধানের দাম হয়ত কিছুটা বাড়তে পারে।”

ধানের পুষ্টিগুণ নিয়ে তিনি কিছু বলতে চাননি।

তবে জেলায় এ বছর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে তেমন প্রভাব পড়বে না বলে মনে করেন কৃষি কর্মকর্তা ছাইফুল আলম।

হাওরে পানি আসায় জেলা এবার ৭০৫ হেক্টর জমির বোরো ধান তলিয়ে গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, চলতি বছরে জেলায় এক লাখ ৬৪ হাজার ৪৮৫ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ করা হয়েছে, যা থেকে ১০ লাখ ৯০ হাজার মেট্রিকটন ধান উৎপন্ন হবে বলে কৃষি বিভগ ধারণা করছে।

এখন পর্যন্ত জেলার হাওর এলাকায় ৪৪ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে; শেষ হতে আরও দুই সপ্তাহ লাগবে বলে জানান ছাইফুল আলম।