শাবির গবেষণা: মহামারী ‘ক্যারিয়ার’ নিয়ে হতাশা বাড়াচ্ছে

কোভিড মহামারীতে ভবিষ্যত কর্মজীবন বা ক্যারিয়ার নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মাঝে বিষণ্নতা ও হতাশা বেড়েছে কয়েকগুণ; এতে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকিও বাড়ছে।

নোমান মিয়া, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 April 2022, 05:04 AM
Updated : 20 April 2022, 05:04 AM

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষকের গবেষণায় এমনটি উঠে এসেছে।

আন্তর্জাতিক জার্নাল 'প্লজ ওয়ান'-এ (PLOS ONE)  'ডিপ্রেশন অ্যান্ড স্ট্রেজ রিগার্ডিং ফিউচার ক্যারিয়ার অ্যামং ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস ডিউরিং কোভিড-১৯ পেন্ডামিক' শিরোনামে গবেষণা প্রবন্ধটি গত ১২ এপ্রিল প্রকাশিত হয়েছে। 

গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন শাবির পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক ড. জামাল উদ্দিন; সঙ্গে ছিলেন বিভাগের শিক্ষার্থী উপমা চৌধুরী, মো. আহসান হাবীব শুভ্র ও সৈয়দ মো. ফারহান।  

গবেষণার জন্য শাবিসহ দেশের ৬২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক শ্রেণির তৃতীয় বর্ষ, চতুর্থ বর্ষ ও স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়।

গবেষণার মূল উদ্দেশ্য ছিল- বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের কোভিড মহামারীতে ভবিষ্যত কর্মজীবন নিয়ে মানসিক অবস্থা এবং হতাশা বৃদ্ধি পায় কি-না, এ থেকে সৃষ্ট বিষণ্নতা এবং মানসিক চাপ তাদেরকে স্বাস্থ্য ঝুঁকির দিকে ঠেলে দিচ্ছে কি না, মহামারীতে কর্মসংস্থানের নিরাপত্তা কেমন ছিল- তা জানা।

দলের প্রধান অধ্যাপক জামাল বলেন, “গবেষণায় দেখা গেছে, ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থীর মধ্যে রয়েছে বিষণ্নতা এবং ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর মধ্যে রয়েছে মানসিক চাপ। ভবিষ্যত কর্মজীবনের পাশাপাশি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ভয়ও মানসিক চাপ বাড়াতে ভূমিকা রাখছে। 

পুরুষ শিক্ষার্থীর তুলনায় নারী শিক্ষার্থী দ্বিগুণের চেয়ে বেশি বিষণ্নতা ও মানসিক চাপের শিকার হয়। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে যাদের ধারণা, কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে তাদের ভবিষ্যতে কর্মসংস্থান অনিশ্চিত, তাদের বিষণ্নতা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি।

স্নাতক সম্পন্ন করে উপযুক্ত কর্মসংস্থান জোগাড়ের বিলম্বের বিষয়টিও গবেষণায় এসেছে উল্লেখ করে দলপ্রধান বলেন, "আজকাল বেশিরভাগ প্রাইভেট কোম্পানি ভালো উদ্ভাবনী ক্ষমতা এবং সহজেই মানিয়ে নিতে পারে এমন যুবকদের পছন্দ করে। তাই শিক্ষার্থীদের স্নাতক বিলম্ব হওয়ায় তাদের এই সুযোগও বিলম্ব হচ্ছে। এটা তাদের অধিক হতাশা এবং মানসিক চাপে রাখছে।"

“গবেষণায় নিজেদের তথ্য দিয়ে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে, যাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা বিভাগ ইন্টার্নশিপের সুযোগ দিয়ে থাকে অথবা ইন্টার্নশিপ তাদের পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত সেসব শিক্ষার্থী বাকি শিক্ষার্থীদের তুলনায় ৩৬ শতাংশ কম বিষণ্নতায় এবং মানসিক চাপে ভোগে। 

গবেষণায় আরও উঠে এসেছে, “যেসব শিক্ষার্থী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা বিভাগে দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য কোনো কার্যক্রম বা কোর্সে অংশ নেয় অর্থাৎ দ্বিতীয় বা তৃতীয় বর্ষে মাঠপর্যায়ের অভিজ্ঞতা থাকে, তাদের ভবিষ্যত কর্মজীবন নিয়ে বিষণ্নতা কম দেখা গেছে। যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এ ধরনের কার্যক্রমের সুযোগ করে দেয়, সেসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের বিষণ্নতা ৪৬ শতাংশ কম পাওয়া গেছে।" 

শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপের কারণগুলো তুলে ধরে অধ্যাপক জামাল বলেন, “গ্র্যাজুয়েশন বিলম্বিত হওয়া, উপযুক্ত চাকরি পাওয়ার জন্য দক্ষতার অভাব, স্টার্টআপ প্ল্যান এবং তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ইন্টার্নশিপ সুবিধা না পাওয়ায় হতাশা ও মানসিক চাপে বড় অবদান রাখছে।”  

শিক্ষার্থীদের এই মানসিক চাপ ও বিষণ্নতা কাটিয়ে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ফিরিয়ে আনার কী কী পদক্ষেপ নেওয়া দরকার- জানতে চাইলে এই গবেষক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গ্র্যাজুয়েশনের পর অনলাইন মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রোগ্রাম এবং ইন্টার্নশিপ প্রদানের মাধ্যমে পরিস্থিতি রোধ করতে সরকারের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সহযোগিতা করা উচিত। যাতে তারা তাদের মানসিক চাপ মুছে ফেলতে পারে এবং হতাশা ও চাপ কাটিয়ে উঠতে পারে।

"নারী গ্র্যাজুয়েটরা অধিক বিষণ্নতার শিকার পুরুষদের তুলনায়; কারণ বেশিরভাগ নারী শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে তাদের কর্মক্ষেত্রের অভিজ্ঞতা কম থাকে। বিভিন্ন পেশার মানুষ বা যারা কর্মসংস্থানের সঙ্গে জড়িত তাদের সঙ্গে নারী শিক্ষার্থীদের অধিক যোগাযোগ হয় না।“ 

যেসব শিক্ষার্থী শুধু পাঠ্যক্রম ভিত্তিক পড়াশোনা করে থাকে তাদের ভবিষ্যত কর্মক্ষেত্র সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকে না উল্লেখ করে এই গবেষক আরও বলেন, এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের হতাশা এবং মানসিক চাপ বৃদ্ধি পায়। তাই শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং ইন্টার্নশিপের সুযোগ প্রদান করার মাধ্যমে তাদের মানসিক হতাশা এবং চাপ কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করা সম্ভব।"

আরও পড়ুন: