শেরপুরে ‘অজ্ঞাত’ রোগে গরুর মৃত্যু, ক্ষতির মুখে খামারিরা

শেরপুর সদরের তিলকান্দি পূর্বপাড়া ও ভাটিয়া পাড়া গ্রামে বেশকিছু গরুর খামারে ‘অজ্ঞাত’ রোগে বেশকিছু গরু মারা গেছে।

শেরপুর প্রতিনিধিআব্দুর রহিম বাদল, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 April 2022, 03:03 PM
Updated : 18 April 2022, 03:03 PM

এর মধ্যে কিছু গরু খুরা রোগে মারা গেছে বলে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা ধারণা করলেও আরও কিছু মৃত গরুর নমুনা পরীক্ষার জন্য ঢাকায় কেন্দ্রীয় রোগ অনুসন্ধান গবেষণাগারে পাঠানো হয়েছে।

তিলকান্দি পূর্বপাড়া ও ভাটিয়া পাড়া গ্রামে ছোট ছোট অন্তত একশ গরুর খামার রয়েছে, যেগুলোর আয়ে ক্ষুদ্র এই খামারিদের সংসার চলে। হঠাৎ এই রোগের সংক্রমণে খামারিরা বিপাকে পড়ে গেছেন।

রোববার খামারিদের সঙ্গে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে কথা হয়।

খামারিরা বলছেন, গরুর দুধ বেচে তাদের সংসার চলে। করোনা মহামারীতে দুই বছরের মন্দাভাব কাটাতে লাভের আশায় অনেকেই নতুন করে পুঁজি খাটিয়েছেন খামারে। আশা ছিল দুধ বিক্রি করে এবং আগামী কোরবানিতে গরু বিক্রি করে লাভের মুখ দেখবেন।

আক্রান্ত গরুগুলোর মুখ দিয়ে লালা পড়ে কিংবা অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়। একের পর এক মারা যাচ্ছে দুধদেয়া গাভি, গর্ভবতী গাভি, ষাঁড়, এঁড়ে ও বকনা বাছুর।

খামারিরা পশু চিকিৎসকের পরামর্শমতো ওষুধ কিনতে মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করছেন। কিন্তু তাতেও তেমন লাভ হচ্ছে না।

তিলকান্দি পূর্ব পাড়া গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আজিজুল হক বলেন, “আমার দুইটি গাভি অজ্ঞাত রোগে মারা গেছে, যার মূল্য সাত লাখ টাকা। অনেক চিকিৎসা করেছি কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।”

একই গ্রামের মোহাম্মদ আলী হাজি বলেন, “আমার তিন লাখ টাকার গাভি মারা গেছে। কিন্তু সরকারি ডাক্তাররা আসলেও রোগ ধরতে পারেননি।”

তিলকান্দি গ্রামের দিনমজুর হামিদুর ও জহুরুল বলেন, তাদের দুজনেরই দুটি ষাঁড় মারা গেছে, যেগুলো কোরবানির জন্য রেখেছিলেন। এগুলোর বর্তমান মূল্য এক লাখ টাকা। কোবানির ঈদে প্রতিটির দাম অন্তত একলাখ টাকা হতো।

একই গ্রামের রাজ্জাক কারী, হেলাল উদ্দিনসহ অনেকেই জানান, তাদের কারও ছয় দিনের এঁড়ে ও বকনা বাছুর, কারও দুধের গাভি,কিারও ষাঁড় মারা গেছে। এতে তারা লাখ লাখ টাকা লোকসানে পড়েছেন। এছাড়া অনেকের আয়ের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। 

খামারিরা বাকি গরুগুলো কীভাবে বাঁচিয়ে রাখবেন সেই চিন্তায় দিন পার করছেন।

শেরপুর সদর উপজেলা কৃষক সমিতির নেতা সোলেয়মান আহমেদ বলেন, পাকুড়িয়ার তিলকান্দিসহ আশ পাশের খামারিরা গরু পালন করে জীবিকা নির্বাহ করত। প্রায় এক মাসের মধ্যেই ওইসব এলাকায় শতাধিক গরু অজ্ঞাত রোগে মারা যায়, যার অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ দুই কোটি টাকার ওপরে।

“যারা দুইটা বা একটা গরু পালন করত তাদের সমস্ত পুঁজিই শেষ হয়ে গেছে। তারা এখন অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করছে এবং তাদের ভবিষ্যতের স্বপ্ন ভেঙে গেছে।” 

এ ব্যাপারে চাষিদের পরামর্শ দেয়নি অভিযোগ করে তিনি প্রাণিসম্পদ বিভাগের সংশ্লিষ্টদের সমালোচনা করেন।

শেরপুর সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. পলাশ কান্তি দত্ত বলেন, কিছু কিছু বেসরকারি বীজ বিক্রয়কর্মী রয়েছেন যারা খামারিদের দ্রুতবর্ধন বাছুরের লোভ দেখিয়ে শতভাগ ফ্রিজিং করা বীজ সরবরাহ করেন। আর তা থেকে যেসব গরু প্রসব করে সেগুলোর বাছুর শ্বাসকষ্টে ভুগে মারা পড়ে।

“কারণ, সেসব গুরু আমাদের দেশের আবহওয়ার উপযোগী নয়। এছাড়া কিছু স্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনাকেই তারা এর সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেছে। তবে  আমরা প্রথমে তিনটি গরুর অজ্ঞাত কারণে মারা যাওয়ার খবর পেয়েছি এবং সেগুলোর মৃত্যুর কারণ জানতে ঢাকায় ল্যাবে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট পেলে বিস্তারিত জানতে পারব।”

শেরপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, দুধগ্রামের খামারিদের গরুর মৃত্যুর খবর পেয়ে তিলকান্দিতে বিনামূল্যে মেডিকেল ক্যাম্প করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই শনিবার থেকে দিনব্যাপী ওই এলাকার খামারিদের নিয়ে মতবিনিময় সভার পাশাপাশি খামারের গরুগুলোকে ভ্যাকসিন প্রদান করা হয়েছে।

এছাড়া তিলকান্দি দুধগ্রামের জন্য সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. পলাশ কান্তি দত্ত, জেলা ভেটেরিনারি সার্জন ডা. মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ও এলইও ডা. ফারজানা মৌকে প্রধান করে পৃথক তিনটি ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।

এই কর্মকর্তা আরও বলেন, “আমরা ২৫টি গরু ও বাছুরের মৃত্যুর তথ্য পেয়েছি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, বিভিন্ন এলাকা থেকে আনা গরুর মাধ্যমে ক্ষুরা রোগ ছড়িয়েছে। গরুগুলো মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ এটি। তবে কিছু গরু অন্যান্য রোগেও মারা গেছে।”

মৃত গরুর নমুনা সংগ্রহ করে ইতোমধ্যে পরীক্ষার জন্য কেন্দ্রীয় রোগ অনুসন্ধান গবেষণাগারে পাঠানো হয়েছে বলে তিনি জানান।