ঈদযাত্রা: দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া পারাপারে দুর্ভোগ বাড়ার শঙ্কা

চলমান যানজটের মধ্যে আসন্ন ঈদে ঘরমুখো মানুষের চাপের কারণে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌ-রুটে যাত্রী পারাপারে দুর্ভোগ আরও বাড়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন এই রুটে চলাচলকারী যাত্রী, চালকসহ সংশ্লিষ্ট অন্যরা।

রাজবাড়ী প্রতিনিধিশামিম রেজা, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 April 2022, 02:13 PM
Updated : 19 April 2022, 04:28 AM

ফেরি ও ঘাট সংকটসহ নদীর নাব্যতা হ্রাসের কারণে কিছুদিন ধরে এ রুটে যানজট লেগে আছে। ঈদে ঘরমুখো মানুষের যানবাহনের চাপ আরও বাড়বে।  

তাই আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ায় নৌ-রুটে যাত্রী পারাপারে ভোগান্তি কমাতে ফেরি ও ঘাট বাড়ানোর দাবি সংশ্লিষ্ট সবার।  

স্বাভাবিক সময়ে দিনে তিন থেকে চার হাজার যানবাহন পারাপার করে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ায় নৌ-রুটে

রাজধানীর সঙ্গে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম এই রুটটিতে বর্ষার তীব্র স্রোত বা শীতের ঘন কুয়াশায় যাত্রী ভোগান্তি লেগেই থাকে। সেইসঙ্গে ঘাট ও ফেরি সংকট তো আছেই। স্বাভাবিক সময়ে দিনে তিন থেকে চার হাজার যানবাহন পারাপার হলেও ঈদের আগে তা বেড়ে যায় কয়েক গুণ, সঙ্গে তীব্র আকার নেয় দুর্ভোগও।

ঈদযাত্রায় ২২টি ফেরি প্রস্তুতসহ দুই পাড়ে পাঁচটি ঘাট রাখার উদ্যোগ নিয়েছে বলে বিআইডব্লিউটিসি জানিয়েছে

ঈগল পরিবহনের চালক ইকরাম মোল্লার ভাষ্য, ফেরি পেতে যাত্রীবাহী পরিবহনগুলোকে এখনই চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে। ঈদে যাত্রী ‘কয়েকগুণ’ বেড়ে যাবে; সে সময়ে প্রতিটি যানবাহনকে অন্তত ১২ ঘণ্টা অপেক্ষায় থেকে ফেরিতে উঠতে হতে পারে।

ঈদের তিন দিন আগে ও পরে বন্ধ থাকবে পণ্যবাহী ট্রাক পারাপার

সাতক্ষীরা থেকে আসা ট্রাকচালক জসিম উদ্দিন বলেন, "ঘাটে জ্যাম লেগেই আছে। এখনই দুই তিনদিন বসে থাকতে হয়। ঈদে তো ভয়াবহ অবস্থা হবে। একটা গাড়ি পার হতে তিন চার দিন সময় লেগে যাবে। ঈদের আগে ফেরি বাড়াতে হবে। ঘাট বাড়াতে হবে। তাহলে যদি মুক্তি মেলে।"

নদীতে পানি বাড়ছে, ধীরে ধীরে আরও বাড়বে

যাত্রীদের মধ্যে নারী ও শিশুর অশেষ দুর্ভোগের কথা উল্লেখ করে যমুনা লাইনের যাত্রী নূরে আলম বলেন, “ঈদযাত্রায় প্রতি বছরই ফেরি পার হতে এসে ভোগান্তির শিকার হতে হয়। ঈদের পর কর্মস্থলে ফেরার সময়ও একই অবস্থা। দীর্ঘ যানজটে আটকে থেকে সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয় নারী ও শিশুদের।”

চলতি জুনে পদ্মাসেতু চালু হলে ভোগান্তি অনেকটাই কমে আসবে বলে আশা করছেন ঘাটের ভুক্তভোগীরা

নূরে আলম আরও বলেন, "চলতি বছরে পদ্মা সেতু চালু হলে এই ভোগান্তি থাকবে না দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের। শেষবারের মতো ফেরি পারাপারে কর্তৃপক্ষের উচিৎ ‘ভোগান্তিমুক্ত ঈদ’ উপহার দেওয়া।

ঈদ যাত্রায় ২২টি ফেরি প্রস্তুতসহ দুই পাড়ে পাঁচটি ঘাট রাখার উদ্যোগ নেওয়ার খবর জানিয়েছেন বিআইডব্লিউটিসির মানিকগঞ্জের আরিচা বন্দরের উপ-পরিচালক মো. খালেদ নেওয়াজ।

ঈদযাত্রায় প্রতি বছরই ফেরি পার হতে এসে ভোগান্তির শিকার হতে হয়

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "এরই মধ্যে বিকল ফেরিগুলো মেরামত করা হয়েছে। দৌলতদিয়াতে চারটি এবং পাটুরিয়াতে চারটি ঘাট আছে। ঈদের আগে দুই পাড়ে পাঁচটি করে ঘাট সচল রাখা হবে। এ ছাড়া যানবাহনের বাড়তি চাপ কমাতে ঈদের তিন দিন আগে ও পরে বন্ধ থাকবে পণ্যবাহী ট্রাক পারাপার। "

নদীর নাব্যতা সংকট অনেকাংশে কমে গেছে এবং ফেরি যা আছে তা দিয়েই যানজট পরিস্থিতি মোকাবিলা করার বিষয়ে আশাবাদী এই কর্মকর্তা।

ঈদের সময়ে প্রতিটি যানবাহনকে অন্তত দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় থেকে ফেরিতে উঠতে হবে বলে অনেকের ভাষ্য

"তবে সব থেকে বড় বাধার কারণ হতে পারে রাতে পদ্মার বুকে; কারণ এখন নদীতে পানি বাড়ছে; সামনে আরও বাড়বে।"

ঈদকে কেন্দ্র করে ঘাট এলাকায় বিভিন্ন ধরনের অপরাধ প্রবণতা বেড়ে যাওয়ার কথা বলেছেন রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার এম. এম. শাকিলুজ্জামান।

"অজ্ঞান পার্টি ও ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে সর্বস্ব হারিয়ে বাড়ি ফিরতে হয় অনেক যাত্রীকে। এবারের ঈদযাত্রায় যাত্রীদের এমন পরিস্থিতিতে যেন না পড়তে হয় সেজন্য তৎপর রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। মোটকথা আসন্ন ঈদুল ফিতরে মানুষ যেন নির্বিঘ্নে এই ঘাট পারাপার হতে পারে তার চেষ্টা করব।”
মহাসড়কে পুলিশের টহল টিম থাকবে এবং ঘাট এলাকায় পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব, সাদা পোশাকে পুলিশ ও আনসার সদস্য থাকবে বলেও এই পুলিশ কর্মকর্তা জানান।