দেশের পূর্বাঞ্চলের অন্যতম বৃহৎ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মেঘনার তীরবর্তী আশুগঞ্জ ধান-চালের মোকামে এখন প্রতিদিনই হাজার হাজার মণ নতুন ধান আসছে। ওপারে কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব বাজারও এখন সরগরম নতুন ধানে।
কৃষকরা গেল বছরের তুলনায় মণপ্রতি ধানে অন্তত ১০০ টাকা কম পাওয়ার কথা বললেও, আড়তদাররা বলছেন ধানের মান গতবারের চেয়ে খারাপ, চাল কম হবে।
রোববার আশুগঞ্জ ধানের আড়তে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, মোকামগুলোতে কিশোরগঞ্জ, জামালপুর, নেত্রকোণা, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট, সুনামগঞ্জসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কৃষক ধান নিয়ে আসছেন। প্রতিদিন কাকডাকা ভোর থেকেই ক্রেতা-বিক্রেতার পদচারণায় বাজারটি চাঙ্গা হয়ে ওঠে।
আড়তদাররা জানান, নতুন ধানের বাইরে কিছু পুরনো ধানও আসছে। নতুন ধান উঠার পর গতবারের ধান বিক্রি করে দিচ্ছেন কৃষক। বিআর-২৯ পুরাতন ধান বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ১৩০ থেকে এক হাজার ১৪০ টাকায়। বিআর-২৮ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ২৫০ টাকা মণপ্রতি। পুরাতন মোটা ধান বিক্রি হচ্ছে ৯০০ টাকা মণপ্রতি। এ ছাড়া বিআর-৩৯/৪৯ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৪০ টাকা মণপ্রতি।
কিশোরগঞ্জের মিটামইনের কৃষক সবুর মিয়া বলেন, হাওরে বন্যার কারণে ধান ভালভাবে না পাকলেও কেটে ফেলতে হয়েছে। আর এই ধান বিক্রি করা যাচ্ছে না মোকামে। আড়তদার ও পাইকাররা ধানের দাম দিতে চায় না। ভাল ধানেরও দাম পাচ্ছি না। গত বছরের তুলনায় এই বছর ধানের দাম মণপ্রতি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা কম দিচ্ছে আড়তদাররা।
কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার কৃষক সামসুল ইসলাম বলেন, গত বছরের এই দিনে ভাল ধানগুলো বিক্রি হয়েছে ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকা মণ। কিন্তু বর্তমানে একই ধান মোকামে দাম বলছে মণপ্রতি ৭৭০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার পানিস্বর এলাকার বেপারী নান্নু মিয়া বলেন, গত বছর ভাল ধানগুলো মণপ্রতি বিক্রি হয়েছে ৯০০ থেকে ৯৫০ টাকা। এই বছরে এই ধান বিক্রি করতে হচ্ছে ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা। এতে কৃষক ও পাইকার উভয়ের লোকসান হচ্ছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার গোয়ালনগর গ্রামের কৃষক আবদুল আজিজ বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর প্রতি মণ ধানে চালের উৎপাদন কমেছে।
এর কারণ হিসেবে এই কৃষক উল্লেখ করেন, “এবার বোরো মৌসুমে খরা আক্রান্ত হয়েছে জমি। এ ছাড়া পাহাড়ি ঢলের কারণে আগাম জমি কাটতে হয়েছে। ফলে ধান পরিপক্ক হয়নি, পুষ্ট কম। এ কারণে প্রতি মণ ধানে চাল হবে কম।“
আশুগঞ্জ মোকামের আড়তদার মো. মহিউদ্দিন বলেন, “আগের বছরের ধানের মান ভাল থাকায় সেই ধান থেকে মণপ্রতি ২১ থেকে ২২ কেজি চাল পাওয়া যেত। বর্তমানে যেসব ধান মোকামে আসছে সেসব ধান থেকে মণপ্রতি চাল পাওয়া যায় ১৬ থেকে ১৭ কেজি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক রবিউল হক মজুমদার বলেন, “এখনই বলা ঠিক হবে না যে, চালের উৎপাদন কম হবে। তবে চালের উৎপাদন কম হওয়ার তিন-চারটি কারণ আছে।
“খরা, সুষম সারের ব্যবহারের অভাব, আগাম ধান কাটা এবং সঠিক সময়ে সেচ না দেওয়া। এসব কারণে সাধারণত ধান কম পুষ্ট হয়।
তিনি আরও বলেন, “ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সব এলাকায় এমন হয়নি। কিছু কিছু এলাকায় ভাল ফলন হচ্ছে। এখনই বলা যাবে না যে, প্রতিমণ ধানে ১৭ থেকে ১৮ কেজি চাল হচ্ছে। এ জন্যে একটু অপেক্ষা করতে হবে।“