সরেজমিনে দেখা গেছে, জেলার চরাঞ্চলের লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নের হরিহরদিয়া, পাটগ্রামের কৃষানিরা বাড়িতে কালোজিরা পরিষ্কার করছেন। এছাড়া হরিরামপুর, গঙ্গাধর্দি, আজিমনগর ইউনিয়নের হাতিঘাটা, বসন্তপুর এলাকাতেও কলোজিরা সংগ্রহে দম ফেলার ফুসরত নেই তাদের।
প্রতিমণ কালোজিরার বাজার মূল্য এবার নয় থেকে ১০ হাজার টাকা জানিয়ে হরিহরদিয়া গ্রামের কৃষক মিলন খাঁ জানান, বিঘা প্রতি কৃষকদের আবাদ খরচ হয়েছে ১১ থেকে ১২ হাজার টাকা। আর প্রতি বিঘায় উৎপাদন হয় ৪ থেকে ৫ মণ।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচলাক আবু এনায়েতুল্লাহ বলেন, জেলায় এ বছর ৪৮ হেক্টর জমিতে কালোজিরা চাষ হয়েছে। এর মধ্যে হরিরামপুর চরাঞ্চলেই ১৯ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে। প্রতিবছরই কালোজিরা চাষের পরিমাণ বাড়ছে।
ক্ষেত থেকে তোলার পর কালোজিরা পরিস্কার করার কাজে ব্যস্ত কৃষাণীরা
এই এলাকার আবহাওয়াকে জিরা চাষের জন্য উপযোগী মনে করেন কৃষকরা। আজিমনগর ইউনিয়নের হাতিঘাটা আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা বারেক আলী বলেন, "আমাগো আবহাওয়া জিরা চাষের জন্য খুবই উপযোগী। তবে এবার বৃষ্টির জন্য কিছু ক্ষতি হইছে। আমি দশ পাখি (এক পাখি জমির পরিমাণ ৩০ শতাংশ) জমিতে কালোজিরা চাষ করছিলাম। ৪০-৪২ মণ কালোজিরা পাইছি।"
আগামীতে আরও জমিতে কালোজিরা চাষ করার ইচ্ছা প্রকাশ করে বারেক আলী বলেন, "কালোজিরা সাড়ে ৮ থেকে সাড়ে ৯ হাজার করে মণ বিক্রি হচ্ছে।"
লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নের হরিহরদিয়া গ্রামের কৃষক মিলন খাঁ তার ৪০ শতাংশ জমিতে চাষাবাদ করে কালোজিরা পেয়েছেন সাড়ে চার মণের মতো, দাম যাচ্ছে নয় হাজারের কাছে। এই পরিমাণ ফলন ও দামে তিনি খুশি।
"এ বছর প্রথমবারের মতো চাষ করেছি ফলন খারাপ হয়নি। সামনের বছর আরো বেশি জমিতে কালোজিরা চাষ করব।"
বিঘায় ৪ থেকে ৫ মণ কলোজিরার উৎপাদনকে বাম্পার ফলন হিসেবেই দেখছেন চাষিরা।
কালোজিরা তোলায় স্বামীক হাতে হাতে কাজ এগিয়ে দেন গৃহবধূ চায়না বেগম।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, "আমার স্বামী দুই পাখি জমিতে কালো জিরা চাষ করেছে। স্বামী জিরা গাছ ছড়ায় দেয়, ফল বের করে দেয়। আমি রোদে দেই, ঝাইরা কালোজিরা থেকে ময়লা বের করি।"
কৃষকদের লাভবান করতে বিভিন্ন সময়ে মশলা চাষে উদ্বুদ্ধ করেছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
কম আবাদ খরচে বেশি দামে বিক্রি করা যায় বলে কলোজিরাকে 'কালোসোনা' বলছে জেলা কৃষি বিভাগ।
হরিরামপুরের চরাঞ্চলের আবহাওয়া কালোজিরা চাষের জন্য খুবই উপযোগী জানিয়ে উপজেলা কৃষি কমকর্তা আব্দুর গাফফার বলেন, "কালোজিরাকে আমরা কালোসোনা হিসেবে আখ্যায়িত করেছি।"
অল্প খরচে চাষ করে বেশি দামে বিক্রি করা যায় বলে, কৃষকরা বেশি লাভবান হয় বলে জানান এই কৃষি কর্মকতা।
চাষাবাদে প্রয়োজনীয় কৃষি পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন সহযোগিতা নিয়ে তারা পাশে থাকবেন বলেও জানান।