গরিবের ডাক্তার হতে চান টাঙ্গাইলের সাগর

‘কোনো সুযোগ-সুবিধা ছাড়াই, কেবল অদম্য ইচ্ছাশক্তির জোরে’ মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন টাঙ্গাইলের পরিবহন শ্রমিকের সন্তান সাগর মিয়া।

টাঙ্গাইল প্রতিনিধিএম এ রাজ্জাক, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 April 2022, 03:54 AM
Updated : 17 April 2022, 05:26 AM

জেলার বাসাইল উপজেলার আদাজান পশ্চিমপাড়া গ্রামের আব্দুল আউয়াল মিয়ার ছেলে সাগর। বাসাইল গোবিন্দা সরকারি উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে জিপিএ-৫ ও নলুয়া বিএফ শাহীন কলেজ থেকে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন।

সাগর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মেডিকেল কলেজে ভর্তিপরীক্ষায় ১০০ নম্বরের মধ্যে ৭৭.৫ নম্বর পেয়ে মেধাক্রমে তার অবস্থান ১৫৮৯তম। তার ভর্তির সুযোগ হয়েছে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজে। কিন্তু এখনও তার ভর্তি ফি ও সিলেটে থাকার খরচাদির ব্যবস্থা হয়নি। প্রাথমিকভাবে অন্তত ২৫ হাজার টাকা দরকার তার।

লক্ষ্যের কাছাকাছি পৌঁছেছেন জানিয়ে সাগর বলেন, “মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পাওয়ার ক্ষেত্রে আমার মা ও বাবার অবদান সবচেয়ে বেশি। মা-বাবা আমার জন্য যে পরিশ্রম করেছেন সে কথা মনে হলে চোখের পানি ধরে রাখতে পারি না।

“লেখাপড়ার মূল খরচের জগিয়েছেন অটোরিকশা চালক বাবা। মা-ও খেটেছেন দিনরাত। বাড়িতে গরু, হাঁস-মুরগি লালনপালন করেন মা। সেসব বেচে সংসারের জোয়াল টেনেছেন। গরিবের যে কত কষ্ট তা আমি বুঝি। এজন্যই আমি গরিবের ডাক্তার হতে চাই।”

স্কুল তার কাছ থেকে বরাবরই কম বেতন নিয়েছে বলে জানান সাগর।

জরাজীর্ণ একটি টিনের ঘরে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে গাদাগাদি করে থাকেন সাগর।

প্রতিবেশীরা জানান, খেয়ে-না-খেয়ে, বছরে একটিও ভাল পোশাক না পরেও পাড়াশোনা চালিয়ে যান সাগর, যা সহজ ছিল না।

প্রতিবেশী শিপন মিয়া বলেন, “কোনো সুযোগ-সুবিধা ছাড়াই, কেবল অদম্য ইচ্ছাশক্তির জোরেই সাগর সব বাধা জয় করে মেডিকেলে পড়ার সুযোগ পেয়েছে। তবে মেডিকেলে ভর্তি ও পড়াশোনার খরচ চালানো তার পরিবারের জন্য খুব কষ্টকর হবে।”

তিনি সাগরের জন্য আর্থিক সহযোগিতা চেয়েছেন।

শিপন বলেন, “কেউ যদি তাকে সহায়তা করে তাহলে তার পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া সহজ হবে। মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পাওয়ায় আমরা এলাকাবাসী গর্বিত। কিন্তু সামর্থ্য নেই যে তাকে সহযোগিতা করব।”

সাগর তার বাবা-মায়ের একমাত্র ছেলে। তার আছে তিন বোন।

সাগরের বাবা বলেন, “আমরা দিন আনি দিন খাই। সাগর আর তিন মেয়ের খরচ জোগাতে হিমশিম খেতে হয়। সিএনজি চালিয়ে, গরু পালন করে আমাদের সংসার চলতে চায় না। এর মাঝেও কষ্ট করে না খেয়ে সন্তানদের পড়ালেখার খরচ চালিয়ে যাচ্ছি।”

তার ছেলে যেন ডাক্তার হয়ে গরিবের সহায় হন সেই প্রত্যাশা করেন তিনি।