মধুপুরের রক্তচন্দন গাছটি দেখতে হঠাৎ কেন ভিড়

টাঙ্গাইলের মধুপর জাতীয় উদ্যানে একটি রক্তচন্দন গাছ ঘিরে সম্প্রতি মানুষের আগ্রহ খুব বেড়ে গেছে; যার পেছনে রয়েছে একটি তেলেগু সিনেমার গল্প। এখন অতি উৎসাহী মানুষের স্পর্শ থেকে গাছটিকে বাঁচাতে ও অক্ষত রাখতে বন বিভাগকে নিতে হয়েছে উদ্যোগ।

টাঙ্গাইল প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 April 2022, 07:23 AM
Updated : 17 April 2022, 05:07 AM

'পুষ্পা দ্য রাইজ' সেই তেলেগু চলচ্চিত্র; যেখানে অন্ধ্র প্রদেশের গভীর বনের রক্তচন্দন পাচারের কাহিনি তুলে ধরা হয়েছে। মধ্য ডিসেম্বরে মুক্তি পাওয়া বাণিজ্যিকভাবে সফল অ্যাকশনধর্মী সিনেমাটি এরই মধ্যে বাংলাদেশি দর্শকদেরও মন জয় করে নিয়েছে।      

তারপর থেকে যারাই এই উদ্যানে আসছেন তারা অন্তত একবার এই রক্তচন্দন গাছের সামনে এসে দাঁড়ান। মুখে মুখে রটতে থাকে উদ্যানের এই বিরল গাছটির কথা। গাছ দেখতে প্রতিদিনই আগ্রহী মানুষের ভিড় বাড়ছে।

গাছটির কাণ্ডে একটু শক্ত করে খোঁচা দিলেই সেখান থেকে লাল রঙের কষ ঝরতে

অতি কৌতূহলী মানুষের হাত থেকে গাছটি রক্ষায় এবং এর সংরক্ষণ ও বংশ বিস্তারে পদক্ষেপ নেওয়ার কাজ শুরুর কথা জানিয়েছে টাঙ্গাইলের মধুপুরের দোখলা রেঞ্জ এবং টাঙ্গাইল বন বিভাগ।  

গাছটির কাণ্ডে একটু শক্ত করে খোঁচা দিলেই সেখান থেকে লাল রংয়ের কষ ঝরতে থাকে, যা দেখতে রক্তের মতো। এই বিষয়টি মানুষের কৌতুহল বাড়িয়ে দিয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বিভিন্ন জায়গা থেকে আগত দর্শনার্থীরা এসে গাছের গায়ে খুঁচিয়ে লাল কষ বের করছেন, সেগুলো আবার আঙুলে ডগাতেও লাগিয়েছেন। কেউ আবার মোবাইল ফোনে ছবি তুলছেন বা ভিডিও করছেন।

মধুপুরের দোখলা রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. ইসমাইল হোসেন জানিয়েছেন, মধুপুর জাতীয় উদ্যানের রেস্টহাউসের ঠিক সামনে সটান দাঁড়িয়ে থাকা রক্তচন্দনের গাছটির বয়স হবে ৪০ বছর।

উৎসুক জনতার খোঁচাখুঁচি থেকে গাছটি বাঁচাতে এর চারপাশে ঘেরার ব্যবস্থা করা হয়েছে

গাছ দেখতে আসা এক দর্শনার্থী বলেন, "ইন্ডিয়ার ‘পুষ্পা দ্য রাইজ’ ছবিতে রক্তচন্দনের গাছ দেখেছিলাম। এখানে এই গাছ আছে শুনেছি।

“আজকে আমি এদিকে ঘুরতে এসেছিলাম, তো ঘুরতে এসে দেখি আসলেই সেটা, একদম অবাক করা কাহিনি, গাছে ভেতর থেকে রক্তের মতো বের হচ্ছে, তো আমার খুবই ভালো লাগতেছে।"

রক্তচন্দন সংরক্ষণে সরকারের পদক্ষেপ চেয়ে এই দর্শনার্থী বলেন, “আমি বলব, সরকারি পর্যায়ে যারা রয়েছেন তারা যেন গাছটি সংরক্ষণ করেন। কারণ গাছটি বিরল, সব জায়গায় পাওয়া যায় না, গাছটি যদি সংরক্ষণ করা হয় বা প্রজনন করা হয় তাহলে খুবই ভালো হয়।”

আরেক যুবক ছুটিতে মধুপুরে বেড়াতে এসেছেন। এই গাছের কথা শুনে সেটি দেখতে এসেছেন।

তিনি বলেন, “গাছে নাকি টোকা দিলেই রক্ত বের হয়, এটা নিজের চোখে দেখার জন্য চলে আসলাম। টোকা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যে রক্তের মতো বের হয় সেটা না দেখলে বিশ্বাস হয় না।”

লাল চন্দন গাছটি সংরক্ষণ ও বংশ বিস্তারে পদক্ষেপ নেওয়ার পদক্ষেপ নিয়েছে টাঙ্গাইল বন বিভাগ

“কিছু দিয়ে খোঁচা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই রক্ত বের হয়, তো খুব ভালো লাগল জিনিসটা, সরকারের কাছে আবেদন থাকবে গাছটা যেন সংরক্ষণ করা হয় এবং গাছের বংশ বিস্তারে পদক্ষেপ নেওয়া হয়।”

রক্তচন্দনের বহুমুখী উপকারিতার মধ্যে বাতের ব্যথা ও জীবাণুনাশক হিসেবে এর কার্যকারিতার কথা জানা গেছে। ব্রাজিল ও ভারতের আবহাওয়া গাছটির বেড়ে উঠার পক্ষে সহায়ক।

উৎসুক জনতার খোঁচাখুঁচি থেকে গাছটি বাঁচাতে এর চারপাশে বেড়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দোখলা রেঞ্জ কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেন।

তিনি বলেন, “বিভাগীয় বন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছি যাতে গাছের টিস্যু কালচারের মাধ্যমে এর বংশ বৃদ্ধি করা যায়। যেহেতু এটি বিরল প্রজাতি, যাতে আরও গাছ লাগানো যায় সে বিষয়ে আলাপ করেছি।"

লাল চন্দনের খবর চাউর হওয়ার পর থেকেই উৎসুক মানুষের ভিড় বাড়ছে

সম্প্রতি গাছের খবর চাউর হওয়ার পর থেকেই ভেষজ গুণের এই গাছটি দেখতে আশপাশের বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষজন আসছেন বলেও জানান রেঞ্জ কর্মকর্তা।

“এটি দেখার জন্য প্রতিদিন মানুষজন আসছে। আমরা এই গাছটিকে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ঘেরাওয়ের ব্যবস্থা করেছি। দর্শকরা যাতে গাছের কোনো ক্ষতি না করতে পারে, খোঁচা না দিতে পারে সেজন্য বাইরে থেকে দেখার ব্যবস্থা করেছি।"

টাঙ্গাইলের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. সাজ্জাদুজ্জামান বলেন, “রক্তচন্দন গাছটি সংরক্ষণ এবং এর বংশ বিস্তারের জন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ গ্রহণ করতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ চলছে।“