কুড়িগ্রামে পানি বাড়ছে, আগাম বন্যার শঙ্কা

টানা বৃষ্টি আর ঢলের কারণে কুড়িগ্রাম জেলায় নদ-নদীর পানি বাড়ছে; ফলে আগাম বন্যার শঙ্কার কথা বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 April 2022, 11:55 AM
Updated : 11 April 2022, 11:55 AM

এরই মধ্যে জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ফসলের ক্ষতি হয়েছে। তাতে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা।

সোমবার জেলার রাজারহাট কৃষি ও আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের পর্যবেক্ষক মোফাখারুল ইসলাম বলেন, “দুই সপ্তাহ ধরে টানা ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এরই মধ্যে কুড়িগ্রামে সাড়ে ৩০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

“আগামী ১৫-১৬ এপ্রিল পর্যন্ত মাঝারি ও ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। ফলে জেলার নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে একটি ছোট বন্যার আশঙ্কা রয়েছে।”

জেলা কৃষি অধিদপ্তরের উপপরিচালক আব্দুর রশীদ বলেন, রাজারহাট, উলিপুর, সদর, ভূরুঙ্গামারী ও চিলমারী উপজেলায় ২৭৩ হেক্টর বোরো ধান, পেঁয়াজ, তরমুজ, পাট, ভুট্টা, চিনাবাদাম, শাকসবজি আক্রান্ত হয়েছে। বৃষ্টিপাত বেশি হলে ক্ষতির সম্ভাবনা বাড়বে।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা করা শুরু হয়েছে। আউশ মৌসুমে সরকারের প্রণোদনা রয়েছে। সেই তালিকায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে এবং কৃষক তাদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের তৈয়ব খাঁ গ্রামের কৃষক হাক্কানী ব্যাপারী। চৈত্রের অসময়ের বৃষ্টিতে নদীর পানি বেড়ে চরাঞ্চলের আবাদ করা তার জমির পুরোটাই নিমজ্জিত হয়ে গেছে।

কৃষক হাক্কানি বলেন, বোরো ধান, পেঁয়াজ, কালোজিরা, ধনিয়া, পালং শাকের বীজ, ৩২৮টি মিষ্টি কুমড়া গাছসহ প্রায় ছয় একর জমি ডুবে গেছে। অনেক ঋণ করেছেন, সেই ঋণ কীভাবে শোধ করবেন তা নিয়েই এখন তার যত চিন্তা।  

“স্বপ্নেও জানি না চত্রি (চৈত্র) মাসে এমন বন্যা হবে। এর আগে কার্তিক মাসে আলু চাষ করলেও বন্যার পানির জন্য পুরোটাই ধ্বংস হয়ে গেছে। এখন কিভাবে দেনা শোধ করব চিন্তায় ঘুম আসে না।“

একই গ্রামের কুদ্দুস মিয়া বলেন, “আমি মাস্টার্স পাশ করে কোনো চাকরি খুঁজিনি। ইচ্ছে ছিল বাবার সঙ্গে কৃষিকাজ করব, আত্মনির্ভরশীল হব। কিন্তু অকাল বৃষ্টির কারণে সব ফসল ভেসে গেছে।”

কৃষক ফখরুল ইসলাম জানান, তিনি চরের মধ্যে পাঁচ একর জমিতে পেঁয়াজ এবং চার একর জমিতে বোরো ধান চাষ করেছিলেন। পাঁচ লাখ টাকার উপর ঋণ তার। হঠাৎ এমন বন্যায় সব শেষ হয়ে গেল।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম রেজা বলেন, “অকাল বৃষ্টির কারণে আলুর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া স্কিমের আবাদ পানিবদ্ধ হয়ে পড়ায় বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। কৃষকের খুব ক্ষতি হবে।”