শুক্রবার এ কে এম এনামুল হক শামীম দিরাই উপজেলার চাপতি হাওরপাড়ের মানুষদের সঙ্গে কথা বলেন; বৃহস্পতিবার তিনি ধর্মপাশা উপজেলার চন্দ্রসোনার তাল হাওরের ক্ষতিগ্রস্ত ডুবাইল বাঁধ পরিদর্শন করেন।
এ সময় মন্ত্রী জানান, পাউবোর স্থানীয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিলের ঘোষণা করা হয়েছে, পাউবোর সিলেট অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলীকে সিলেটে অফিস না করে সুনামগঞ্জে অফিস করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, পাউবোর প্রধান প্রকৌশলীর কার্যালয় সুনামগঞ্জ থেকে নিয়ন্ত্রিত হবে।
কৃষকদের অভিযোগ বিষয়ে উপমন্ত্রী বলেন, ফসল রক্ষা বাঁধ কারও অবহেলায় ভাঙলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি বোরবার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে হাওরের বাঁধে অনিয়মের বিষয়ে একটি উচ্চতর তদন্ত কমিটি গঠন ও জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া আশ্বাসও দেন তিনি।
২ এপ্রিল থেকে পাহাড়ি ঢলের কারণে সীমান্ত নদ-নদীর পানি বাড়তে থাকে। এই পানি প্রবাহিত হয় ভাটির হাওরের নদ-নদীতে। প্রবল পানির চাপে হাওরের নীচু জমিগুলো তলিয়ে যায় প্রথম ধাক্কাতেই; যাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় পাউবোর বাঁধের বাইরের এলাকা। হাওরের বাঁধ নিয়ে অনিয়ম, সময়মতো কাজ না হওয়ার অভিযোগ শুরু থেকেই করে আসছিল কৃষক।
মঙ্গলবার সন্ধ্যার আগে পাউবোর প্রকল্পভুক্ত ধর্মপাশা উপজেলার চন্দ্রসোনার তাল হাওরের ডুবাইল বাঁধ ভেঙে ১৮৫ হেক্টর জমির বোরো ধান তলিয়ে যায়। গত দুদিনে উজানের পানি একটু কমলেও বাঁধগুলো যে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে সেই আশঙ্কার কথা জানিয়েছিল পাউবো ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এর মধ্যেই বৃহস্পতিবার দিরাইয়ের চাপতির হাওর ডুবে সাড়ে তিন হাজার হেক্টর জমির ধান তলিয়ে গেছে।
ফসল নিয়ে শঙ্কার মধ্যে পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রথম পরিদর্শনে যান ধর্মপাশা উপজেলার চন্দ্রসোনার তাল হাওরের ডুবাইল বাঁধ এলাকায়। সেখান থেকে ফিরে রাতে তিনি সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা কমিটি, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক দলের নেতা, কৃষক, সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
অনিয়মের কারণে প্রতি বছরই এই ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ ভেঙে ফসলের ক্ষতি হয় বলে কৃষকরা অভিযোগ করেন।
এ সময় এ কে এম এনামুল হক শামীম সাংবাদিকদের বলেন, “তালিকা করে জেলা প্রশাসক ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের কিছু ত্রাণ দিচ্ছেন। হাওরের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ত্রাণের বিষয়ে গত পরশু আমি জাতীয় সংসদে ত্রাণমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। গতকাল প্রধানমন্ত্রীও এ বিষয়ে কথা বলেছেন।”
উপমন্ত্রী আরও বলেন, “আমরা প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে হাওরের ক্ষতিগ্রস্ত ও ফসলহারা কৃষকদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করব। আমি আজ সরাসরি দেখে গেলাম। যারা বোরো ফসল হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদেরকে আমরা সহযোগিতা করব।”
এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুরে ধর্মপাশা উপজেলার চন্দ্রসোনার তাল হাওরের ক্ষতিগ্রস্ত ডুবাইল বাঁধ পরিদর্শন করে উপমন্ত্রী বলেন, “এ বাঁধ কারও অবহেলায় ভাঙলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অনিয়মের ক্ষেত্রে কোনো ছাড় নেই।”
পরে রাতে উপমন্ত্রী সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে মতবিনিমিয় সভায় জানান, এখানে পাউবোর আরও কর্মকর্তা লাগলে নিয়ে আসা হবে। সরকার হাওরের ফসল রক্ষায় সর্বোচ্চ আন্তরিক।
বাঁধ নির্মাণে জড়িত সংশ্লিষ্টদের হুঁশিয়ার করে এ কে এম এনামুল হক শামীম বলেন, “আমি সুধীজনদের কাছ থেকে যা শুনলাম তার তথ্য যদি সঠিক হয় তাহলে অভিযুক্তদের শাস্তি দেওয়া হবে। এই পবিত্র রমজানে আমি কথা দিয়ে যাচ্ছি, সততার প্রশ্নে আমরা কখনও আপস করি না।”
সভায় উপস্থিত ছিলেন সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, সুনামগঞ্জ-সিলেট সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য শামীমা শাহরিয়ার, পাউবোর মহাপরিচালক মো. ফজলুর রশিদ, পাউবোর উত্তর পূর্বাঞ্চল জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী এস এম শহীদুল ইসলাম, জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন প্রমুখ।
আরও পড়ুন: