ধনু নদীর ঢেউয়ে কীর্তনখোলা হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের মাটি ক্রমে আলগা হয়ে যাচ্ছে; প্রায় আধাকিলোমিটারের মধ্যে দেখা দিয়েছে চারটি ফাটল। বাঁধ রক্ষায় চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন হাওর পারের চাষিরা।
চাকুয়া গ্রামের কৃষক আকাশচন্দ্র দাস তাদেরই একজন। কীর্তনখোলা হাওরে তার রয়েছে পাঁচ একর জমি।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “বান্দেই দিন-রাইত পইড়া আছি, বান্দেই খাইতাছি। গোসল নাই দুই দিন ধইর্যা। বাড়িত যাওনের সময়ও নাই। কোন সময় কী অইয়া যায়। জানডা ধইর্যা দিয়া চেষ্টা চালাইতাছি। কোনো রহমে যদি বানডা টিকাইয়া ফালাইয়াতাম পারি।”
ভারতের মেঘালয়ে বৃষ্টি হলে নেত্রকোণার হাওরাঞ্চলে পানি বাড়ে; ফসল তলিয়ে যায় মাঝে মাঝে। ফসল রক্ষায় বাঁধ তৈরি করা হলেও তা মাঝে মাঝেই ঝুঁকিতে পড়ে, ভেঙে যায় মাঝে মাঝে। বাঁধ ভেঙে মূল হাওরে পানি ঢুকলে সব বোরো ফসল তলিয়ে যায়।
আকাশচন্দ্র বলেন, “চোখের সামনে সোনার ফসল তলিয়ে যাওয়ার দৃশ্য চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার থাকবে না।”
আকাশ বলেন, “দেহেন, এই একডাই ফসল আমরার। এইডার ওপরেই জীবনডা। পুরা সংসারডা বছর ভরা চালাই এই জমির ধান দিয়াই।আরও অন্তত আট-নয়টা দিন গেলে ধানডা পাইক্যা যাবে। এই সময়টা লাগাত বানডা টিকাইয়া রাখতে পারলেই তাড়াহুড়া কইর্যা ধানডা কাইট্যা বাড়ি লইয়া যাইতামগা।”
চাকুয়া গ্রামের আরেক কৃষক রানা মিয়া। মঙ্গলবার বিকালে বাঁধে বসে অন্য আরও ১৫-১৬ জনের সঙ্গে গুড় দিয়ে মুড়ি খাচ্ছিলেন।
এই বাঁধ টিকিয়ে রাখা ছাড়া তাদের আর কোনো পথই খোলা নেই বলে জানান কৃষক নয়ন বর্মণ, আকাশ সূত্রধরসহ অনেকে। তারাও রাত জেগে বাঁধ টিকিয়ে রাখতে কাজ করছেন।
“ধনুতীরের এই বাঁধে পানির চাপ বেশি। প্রায়ই এটা ভেঙে যায়। জেলার মোহনগঞ্জের চরহাইজদায় যেভাবে স্থায়ী বাঁধ করা হয়েছে, সেই আদলে এখানে বাঁধ নির্মাণ করলেই এলাকার হাজার হাজার কৃষকের ফসল বন্যা থেকে রক্ষা পাবে।”
বাঁধের পাশের পতিত জমি থেকে মাটি কেটেও দেওয়া হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে।
একই সঙ্গে জেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড, স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন, কৃষি বিভাগ , জনপ্রতিনিধিও বাঁধ টিকিয়ে রাখতে কাজ করছেন।
তবে ধনুর পানি ধীরে কমতে শুরু করেছে। মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার সকাল ৯টা নাগাদ ৯ সেন্টিমিটার পানি কমেছে বলে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এম এল সৈকত জানিয়েছেন।
“আশা করছি বাঁধটা টিকিয়ে রাখতে পারব। এলাকার জনগণ সঙ্গে সঙ্গে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সাপোর্ট দেওয়ার পাশাপাশি সার্বক্ষণিক তদারকি করছে।”
কীর্তনখলা বাঁধ স্থায়ী করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ওপর মহল এলাকা পরিদর্শন করেছে। এখন দেখা হচ্ছে স্থায়ী বাঁধ পরিবেশের ওপর কোনো খারাপ প্রভাব ফেলবে কিনা।
পরে তিনি সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরের কর্মকর্তাদের বাঁধ টিকিয়ে রাখাসহ হাওরের পুরো বোরো ফসল যাতে কৃষক ঘরে তুলতে পারেন সে বিষয়ে বিভিন্ন নির্দেশনা দেন।