কৃষকরা বলেছেন, নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে হাওরাঞ্চলের বোরো চাষিদের মধ্যে উৎকণ্ঠা রয়েছে। নিম্নাঞ্চলের জমির অনেকেই পানিতে ডোবা আধাপাকা ধান কেটে কিছুটা হলেও ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।
মঙ্গলবার বিকালে দুপুরে নেত্রকোণা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী এম এল সৈকত বলেন, “গত কয়েকদিন ভারতের মেঘালয় রাজ্যের চেরাপুঞ্জিতে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় যেসব জায়গায় পানি ঢুকেছে তাতে আরও ১০ হেক্টর জমির ধান তলিয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন নেত্রকোণা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এফ এম মোবারক আলী।
“আগে ১১৩ হেক্টর জমির ফসল তলিয়েছিল। এখন আরও ১০ হেক্টর তলিয়েছে। মোট ১২৩ হেক্টর জমির ধান তলিয়েছে এখানে। অনুমানিক এক হাজার মেট্রিক টন ধানের ক্ষতি হয়েছে।”
ঢলের পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করা হচ্ছে জানিয়ে মোবারক বলেন, “ঢলের পানিতে হাওরাঞ্চলের ১২৩ হেক্টর জমির যে ফসল নষ্ট হয়েছে সেসব জমির কৃষকদের তালিকা করা হচ্ছে। অন্তত ৫০০ কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে ক্ষতি আরও বেশি হতে পারে।”
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মতে, এই বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হলে উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের মধ্যে পাঁচটি ইউনিয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। উপজেলায় যে ২১ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে, তার মধ্যে অন্তত ১২ হাজার হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে যাবে।
এ ছাড়া কীর্তনখোলা বাঁধ ভেঙে গেলে এই পানি গিয়ে আঘাত হানবে শাল্লা ও দিরাই উপজেলার নদ-নদী ও হাওরে।
“তিন-চার দিন যদি এইবায় বাড়ে তাইলে আর রক্ষা নাই। বেবাক ফসল পানির নিচে তলায়া যাবে।”
খালিয়াজুরী সদরের পুরানহাটি গ্রামের আয়েন উদ্দিন বলেন, “নদীর আশপাশে নিচু জমির ধান পাকতে আরও ১০-১২টা দিন লাগত।
“কিছুডা পাকছে। সবাই এইগুলাই কাইট্যা ফালাইতাছে। কি করব। যাই পাওয়া যায়।”
খালিয়াজুরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ এইচ এম আরিফুল ইসলাম বলেন, “হাওরের কিছু এলাকায় আগাম জাতের ধান (ব্রি-২৮) কিছুটা কাটা শুরু হয়েছে। তবে পুরোদমে কাটা-মাড়াই শুরুর সময় আরও ১০-১৫ দিন পর। এরই মধ্যে পাহাড়ি ঢল আসতে শুরু করায় আমরা অনেকটা শঙ্কিত।”
পাউবোর জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী সৈকত বলেন, “আমাদের শেষ ভরসা হচ্ছে ফসল রক্ষা বাঁধ। নেত্রকোণায় থাকা ৩৬৫ কিলোমিটার বাঁধের মধ্যে এবার ১৮৩ কিলোমিটার বাঁধ সংস্কার করা হয়েছে। বাঁধের পুরোটাই এখনও নিরাপদে রয়েছে।
“পানি বেড়ে চলায় আগাম সতর্কতা হিসেবে বাঁধ রক্ষায় আটটি টিম গঠন করে কাজ শুরু করেছি। পুরো বাঁধ আমাদের পর্যবেক্ষণে রয়েছে। যে অংশে কিছুটা দুর্বল বা পানির তোরের চাপ বেশি পড়তে পারে সে রকম ঝুঁকিপূর্ণ অংশগুলো আমরা বাঁশ এবং জিও ব্যাগ দিয়ে আরও মজবুত করার চেষ্টা করছি।”
কোনো অংশে ভাঙন ধরলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম প্রস্তুত রাখা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, বাঁধ মেরামতের পিআইসি কমিটি বাঁধ রক্ষা করে কৃষকের ফসল নিরাপদে ঘরে তুলতে এক হয়ে কাজ করছেন।
জেলা প্রশাসক কাজি মো. আব্দুর রহমান বলেন, “বাঁধের ভেতরের কোনো জমির সমস্যা হয়নি। বাঁধ এখনও ঠিক আছে। পানি বাড়ছে। আমরা পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।
“প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশনা দিয়েছি, সবাই যেন সর্বোচ্চ আন্তরিকতা, দক্ষতার সঙ্গে কৃষকের ফসল নিরাপদে ঘরে তোলার ব্যাপারে কাজ করে। আমরা হাওরের ফসল নিরাপদে ঘরে তুলতে দিনরাত কাজ করছি।”
আরও পড়ুন: