নারায়ণগঞ্জেও ডায়রিয়া রোগী বাড়ছে

গরমের শুরুতে দেশের বিভিন্ন স্থানের মতো নারায়ণগঞ্জেও ডায়রিয়া রোগী বাড়তে শুরু করেছে। এই সময়ে অন্য বছরের তুলনায় রোগী বেশি হওয়ায় হাসপাতালে শয্যা বাড়ানো হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 April 2022, 06:02 PM
Updated : 3 April 2022, 06:14 PM

পচা বাসি খাবার, বাইরের খোলা খাবার, দূষিত পানি থেকে ডায়ারিয়া ছড়াচ্ছে উল্লেখ করে এসব এড়িয়ে চলা পরামর্শ দিয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।  

নারায়ণগঞ্জ শহরের জামতলা, কায়েমপুর, হাজীগঞ্জ, শিবু মার্কেট, সদর উপজেলার বক্তাবলীসহ নানা স্থান থেকে রোগীরা হাসপাতালে এসেছেন।

দুই সপ্তাহ আগে শুরু হওয়া ডায়রিয়া রোগী প্রতিদিন আসছে হাসপাতালে। ঢাকার আইসিডিডিআর,বি হাসপাতালে প্রতিদিন হাজার খানেক রোগী ভর্তি হচ্ছেন। এমন পরিস্থিতি ‘বেশ কিছুদিন’ থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন আইসিডিডিআর,বি হাসপাতালের প্রধান চিকিৎসক বাহারুল আলম।

নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে (ভিক্টোরিয়া) সরেজমিনে দেখা গেছে, ডায়রিয়া ওয়ার্ডে শয্যা ১০টি। প্রতিদিন ডায়রিয়ার চিকিৎসা নিতে রোগী আসছে দুই শতাধিক। ১০ শয্যার ওয়ার্ডে এক বিছানায় তিনজন-চারজন করে রোগী রেখে ডায়রিয়ার চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। রোগীর চাপের কারণে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ডায়রিয়া ওয়ার্ডের প্রবেশ পথের বারান্দায় শনিবার থেকে আরও ছয় শয্যা বাড়িয়েছে। রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন হাসপাতালের চিকিৎসক ও সেবিকারা।

শহরের জামতলা এলাকার বাসিন্দা সরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আফরিন আক্তারের তিন দিন ধরে পায়খানা ও বমি হচ্ছে।

তিনি বলেন, খাওয়ার স্যালাইন ও ওষুধ খেলেও পরিস্থিতি উন্নতি হয়নি। রোববার সকালে চিকিৎসার জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাকে স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে।

শহরের কায়েমপুরের পোশাককর্মী সেলিনা আক্তারের শনিবার রাত থেকে বমি ও পায়খানা হচ্ছে।

তার স্বামী রুবেল ইসলাম বলেন, গভীর নলকূপের পানি খেলে কোনো সমস্যা হয় না। সাপ্লাইয়ের পানি খাওয়াতে তার স্ত্রীর পায়খানা ও বমি হচ্ছে।

হাসপাতালের বারান্দায় চিকিৎসা নিচ্ছেন মাদ্রাসা ছাত্র আবু সাঈদ রাকিব। সেহেরি খাওয়ার পর তার পায়খানা ও বমি শুরু হয়। শরীর একেবারে কাহিল হয়ে পড়েছে।

তার বাবা শরীফ মিয়া বলেন, তার ছেলে শহরের হাজীগঞ্জ একটি মাদ্রাসায় হেফজ পড়ছেন। পায়খানা ও বমি হওয়ায় তাকে হাসপাতালে আনা হয়েছে। একটি স্যালাইন দেওয়া শেষ হয়েছে, আরেকটি দেওয়া হচ্ছে। কী কারণে তার ডায়রিয়া হচ্ছে তা তিনি বুঝতে পারছেন না।

শিবু মার্কেট এলাকার গৃহিনী সম্পা আক্তার সেহেরিতে ভাত খেয়েছিলেন। তারপর থেকে তার পায়খানা ও বমি হচ্ছে। তাকে স্বজনেরা হাসপাতালে নিয়ে আসেন।

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার বক্তাবলী এলাকায় ইটভাটায় কাজ করেন হাজেরা বেগম।

তার স্বামী আবু কালাম জানান, শনিবার রাত থেকে তার ডায়রিয়া ও বমি হচ্ছে। শরীর একেবারে ভেঙে পড়ছে। তাকে স্যালাইন দেওয়া হয়েছে।

হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের সিনিয়র স্টাফ নার্স সভ্য চক্রবর্তী বলেন, “বাইরের খোলা খাবার, পচা বাসি খাবার এবং সাপ্লাইয়ের পানির কারণে ডায়রিয়ার রোগী বাড়ছে। যেসব রোগী চিকিৎসা নিতে আসছেন তাদের মধ্যে নিম্ন আয়ের রোগী বেশি।”

হাসপাতাল থেকে জানা গেছে, শনিবার হাসপাতালে ডায়রিয়ার চিকিৎসা নিতে ভর্তি হয়েছিলেন ২০৩ জন রোগী। এদের মধ্যে পুরুষ ৭৮ জন, মহিলা ৭৩ জন এবং শিশু ৫০ জন। শনিবার রাত থেকে রোববার দুপুর পর্যন্ত ডায়রিয়ার চিকিৎসা নিতে এসেছেন ১১০ জন রোগী।

নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) শেখ ফরহাদ বলেন, জানুয়ারি মাসে ডায়রিয়ার চিকিৎসা নিয়েছেন দুই হাজার ৩০ জন রোগী। এর মধ্যে পুরুষ ৬৪৭ জন, মহিলা ৭৩৩ জন এবং শিশু ৬৫০ জন। ফেব্রুয়ারিতে দুই হাজার ৩১১ জন রোগী ভর্তি ছিল। এদের মধ্যে পুরুষ ৬৬৮ জন, মহিলা ৬৫০ জন এবং শিশু ৭৭৫ জন। মার্চ মাসে তা দ্বিগুণ বেড়ে হয় চার হাজার ১১৬ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ১৪৪১ জন, মহিলা এক হাজার ৩৮০ জন এবং শিশু ১২৯৫ জন। প্রতিদিন গড় রোগী ১৩৭ জন।

তিনি বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার ডায়রিয়ার রোগী দ্বিগুণের বেশি। গত শুক্রবার হাসপাতালে ডায়রিয়ার রোগী ছিল ১৮৬ জন।

জেলা সিভিল সার্জন মশিউর রহমান বলেন, অন্য বছরের তুলনায় এ বছর ডায়রিয়ার রোগী বেশি। এ কারণে হাসপাতালে ৬টি শয্যা বাড়ানো হয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের ডিহাইড্রেশন কন্ট্রোল করে রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

“উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে প্রচুর রোগী আছে। আমাদের পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ রয়েছে।”

তিনি বলেন, পচা বাসি খাবার, “বাইরের খোলা খাবার, দূষিত পানি পান করা থেকে বিরত থাকতে হবে। এই সময় নদীতে পুকুরে গোসল করতেও আমরা নিষেধ করছি। কারণ অনেক সময় গোসল করতে গিয়েও পানি খেয়ে ফেলতে পারেন।”

তিনি বলেন, বর্ষা চলে আসলে বৃষ্টি হলেই পরিস্থিতি ভালো হবে। বাচ্চাদের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে, সচেতন হতে হবে।

আরও পড়ুন: