টুঙ্গিপাড়ায় মধুমতির ভাঙন আতঙ্কে ৬৫ ভূমিহীন পরিবার

গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলায় ডুমরিয়া ইউনিয়নে মধুমতি নদীর ভাঙনে ভূমিহীন ৬৫টি পরিবারের বাড়িঘর ও সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্প হুমকির মুখে পড়েছে।

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 April 2022, 07:28 AM
Updated : 2 April 2022, 10:08 AM

ডুমরিয়া ইউয়িনের বাসিন্দারা বলছেন, গত ৩০ বছর ধরে অনবরত মধুমতির পাড় ভাঙতে থাকায় ঘরবাড়ি ও কৃষি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। অনেক পরিবার বাপ-দাদার ভিটেবাড়ি হারিয়ে ভূমিহীন হয়েছেন। কোন কোন পরিবার আশ্রায়ণ প্রকল্পের ঘরে বসবাস করছেন। দ্রুত নদী ভাঙন ঠেকানো না গেলে ৬৫ পরিবারের মাথা গোঁজার জায়গাও হারাবে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, এর আগে ইউএনও, জেলা প্রশাসক ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার আশ্বাস দিলেও কোন সমাধান মেলেনি। 

সরেজমিনে দেখা গেছে, ডুমরিয়া ইউপির চরপাড়া গ্রামের প্রায় ২ কিলোমিটার এলাকায় মধুমতি নদীর ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। ওই গ্রামের অনেক পরিবার দীর্ঘ সময় ধরে সরকারের কাছ থেকে নদীপাড়ের খাস জমি বন্দোবস্ত নিয়ে সেখানেই বসবাস করেন। বর্তমানে সেখানে বসবাসরত ৬৫ পরিবারই ভূমিহীন। নদী ভাঙন ঠেকানো না গেলে ৬৫ পরিবারের বসতবাড়ি অচিরেই নদী গর্ভে বিলীন হবে। এছাড়া আশ্রায়ণ প্রকল্প হুমকির মুখে পড়েছে।

ডুমুরিয়া ইউপির চরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ফরিদা বেগম বলেন, “স্বামী ছেড়ে চলে যাওয়ার পর পরিবার নিয়ে এখানে প্রায় ৩০ বছর ধরে বসবাস করছি। আমাদের বাড়িটি সাত কাঠা জায়গা জুড়ে ছিল। বাড়িতে উঠান, বিভিন্ন ফল গাছ ও ধানের জমি ছিল। সব নদীর ভাঙনে নেমে গেছে। এখন শুধু বাড়িটাই আছে। এছাড়া বৈশাখ মাসে ঝড়-বৃষ্টিতে নদীর পানি ঘরে উঠে যায়। আর ভাদ্র মাসে পানি সবসময় বারান্দায় থাকে।”

“এইটুকু জায়গা ছাড়া আমাদের থাকার মতো অন্য কোন জায়গা জমি নাই। সরকারের কাছে অনুরোধ বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে আমাদের থাকার জায়গাটুকু রক্ষা করুক।”

তিনি আরও বলেন, চরপাড়া গ্রামে অনেক পরিবার বসবাস করত। নদীর ভাঙনে সব বাড়িঘর নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। তাই এখন তারা বিভিন্ন স্থানে ও কিছু লোক সরকারি ঘরে বসবাস করছে।

একই গ্রামের হাসিবুর রহমান বলেন, “এই নদীর ভাঙন ছোটবেলা থেকেই দেখছি। আমাদের যত জায়গা জমি ছিল সব নদীর মধ্যে চলে গেছে। তাই আমরা এখন ভাড়া বাড়িতে দিন কাটাচ্ছি। সরকারের কাছে আমাদের সবার আবেদন এখানে এমন কিছু একটা করে দিক যাতে ভাঙন রোধ করা যায়।”

একই গ্রামের বৃদ্ধ আতিয়ার তালুকদার বলেন, “এই ভাঙনের জায়গা দেখতে এর আগে এসিল্যান্ড, ইউএনও, জেলা প্রশাসক, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা এসেছেন। তারা ভাঙন রোধে পদক্ষেপ নেওয়া হবে আশ্বাসও দিয়েছেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোন কাজ হয় নাই। সবাই শুধু আশ্বাস দিয়ে যায়।”

হাসি বেগম বলেন, “পুরো গ্রামে নদীর ভিতরে চলে গেছে। এখানে যারা আছে সবাই ভূমিহীন লোক। কারো নিজস্ব কোন জায়গা জমি নাই। আমাদের ঘরবাড়ি ভাঙতে ভাঙতে এখানে থাকাই দায় হয়ে পরেছে।”

এ বিষয়ে টুঙ্গিপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী রাশেদুল ইসলাম বলেন, “কয়েকমাস হল আমি টুঙ্গিপাড়ায় যোগদান করেছি। নদী ভাঙনের ব্যাপারে আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারলাম। ভাঙনকবলিত স্থান পরিদর্শন করে ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মোতাবেক ভাঙন ঠেকাতে কার্যকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

আর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম হেদায়েতুল ইসলাম বলছেন, তিনিও সাংবাদিকদের মাধ্যমে নদী ভাঙনের বিষয়টি জেনেছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।