রাজশাহীতে পুকুরে ‘বিষ দিয়ে’ মাছ নিধন

রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় একটি দিঘিতে ‘বিষ দিয়ে’ বিপুল পরিমাণ মাছ নিধনের অভিযোগ উঠেছে।

বদরুল হাসান লিটন রাজশাহী অফিসবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 March 2022, 03:20 PM
Updated : 30 March 2022, 03:20 PM

স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ জানায়, বুধবার ভোরে দিঘির মাছ মরে ভেসে ওঠে। তখন আশপাশের গ্রামের লোকজন মারা যাওয়া ওই মাছ তুলে নিয়ে যায়।

বাগমারা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আফজাল হোসেন বলেন, দিঘিতে কে বা কারা বিষ প্রয়োগ করেছে সেটি তদন্ত করা হচ্ছে। দিঘিটির বিষয়ে উভয় পক্ষ একাধিক অভিযোগ দিয়েছেন। সেগুলোও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

“দিঘিটির মালিকানা নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে। বিষয়টি সমাধানের জন্য চেষ্টা চলছে। দু-তিনদিনের মধ্যে উভয় পক্ষকে নিয়ে বসে সমাধান করা হবে।”

পুলিশ, স্থানীয় লোকজন ও কাগজপত্র থেকে জানা যায়, স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে জমি ইজারা নিয়ে এক বছর আগে দিঘি খনন করেন মুগাইপাড়া গ্রামের আবুল কাশেম কবিরাজের ছেলে মাসুদ রানা, মারুফ হোসেন ও মাহামুদ সরকার অনিক নামের তিনজন। দিঘি খননের মূল উদ্যোক্তা মাসুদ রানা হলেও তার অংশের কাগজপত্র করা হয় তার বাবা আবুল কাশেমের নামে।

পরে দিঘি নিয়ে তিন অংশীদারের মধ্যে বিরোধ দেখা দিলে দিঘির লিজ বিক্রি করে দেন তারা। লিজটি কিনে নেন পাশের গ্রামের বাসিন্দা ও আউচপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জান মোহাম্মদ।

প্রথমে মারুফ হোসেন ও মাহামুদ সরকার অনিক তাদের অংশ ৪০ লাখ টাকায় জান মোহাম্মদের কাছে বিক্রি করে দেন। গত বছরের ১২ নভেম্বর লিজ কেনা-বেচার দালিল স্বাক্ষরিত হয়। এর তিনদিন পর গত ১৫ নভেম্বর অপর অংশের মালিক মাসুদ রানার বাবা আবুল কাশেম কবিরাজ ছয় লাখ টাকায় তার অংশ জান মোহাম্মদের কাছে বিক্রি করে দেন।

জান মোহাম্মদের ভাষ্য, ইজারা সংশ্লিষ্টরা জানান, ইজারার শর্ত হিসেবে প্রতি বিঘা জমির জন্য কৃষকরা পাবেন বছরে ২০ হাজার টাকা। সে হিসাবে গত ২৫ জানুয়ারি তিনি [জান মোহাম্মদ] ৫৫ বিঘা আয়তনের এই দিঘির জমির মালিক ৮৫ জন কৃষককে তাদের এক বছরের ইজারার অর্থ ১১ লাখ টাকা পরিশোধ করেন। এছাড়াও কৃষকদের আগের বাকি থাকা তিন লাখ টাকাও পরিশোধ করা হয়।

তিনি আরও বলেন, প্রথমে দিঘি খননকারীদের কাছ থেকে লিজ নিয়েই তিনি পোনা মাছ ছাড়তে শুরু করেন। সেখানে মোট ৮৫ মন পোনা মাছ ছাড়া হয়েছে, যার মূল্য প্রায় সাত লাখ টাকা।

তিনি অভিযোগ করেন, গত ৫ জানুয়ারি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আমি পরাজিত হিই। এর কিছুদিন পর মাসুদ রানা ওই দিঘিতে মাছ চাষ বাবদ আমার কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। এ অর্থ দিতে অস্বীকার করায় দিঘিটি জোরপূর্বক দখলে নিতে চেষ্টা চালান মাসুদ রানা ও তার লোকজন।”

এ অবস্থায় নিরাপত্তার জন্য দিঘির চারপাশে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয় বলে জানান তিনি।

জান মোহাম্মদ বলেন, গত ২৫ মার্চ দিঘিতে হামলা চালিয়ে ৫১টি সিসিটিভি ক্যামেরা ভাঙচুর করে সেগুলো নিয়ে যায়। এছাড়াও ডিভিডি ও মনিটর এবং তারসহ সরঞ্জাম লুট করে নিয়ে যায়। এ ঘটনা ধামাচাপা দিতে আমাদের উপর ১ লাখ ৭২ হাজার ৮০০ টাকা চুরি ও পাঁচ লাখ টাকা চাঁদাবাজির মামলা দেওয়া হয়। সেই মামলায় ৭৩ বছর বয়সের অবসরপ্রাপ্ত এক শিক্ষককে ধরে চালান দেয় পুলিশ। এ ঘটনার কয়েকদিন পর দিঘিতে রাতের আধারে বিষ প্রয়োগ করা হয়।

এ বিষয়ে মাসুদ রানা বলেন, “পুকুরের ইজারা নিয়ে কথা বলার জন্য তাদের বাসায় ডেকেছিলেন জান মোহাম্মদ। যেখানে আমার অংশের মূল্য হবে ৩৫ লাখ টাকা সেখানে ছয় লাখ টাকার দলিল করে আমাদের কাছ থেকে জোরপূর্বক স্বাক্ষর নিয়েছেন।”