অনন্ত বিজয় হত্যা: যে কারণে ফারাবী খালাস

সিলেটের বিজ্ঞান লেখক ও ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশকে হত্যার দায়ে চারজনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলেও খালাস পেয়েছেন বিতর্কিত ব্লগার শফিউর রহমান ফারাবী।

মঞ্জুর আহমদ সিলেট প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 March 2022, 11:11 AM
Updated : 30 March 2022, 12:28 PM

সিলেটের সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারক নুরুল আমীন বিপ্লব বুধবার আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার আবুল হোসেন, খালপাড় তালবাড়ির ফয়সাল আহমদ, সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের বিরেন্দ্রনগরের (বাগলী) মামুনুর রশীদ ও কানাইঘাটের ফালজুর গ্রামের আবুল খায়ের রশীদ আহমদ।

এ মামলায় খালাস পাওয়া ফারাবী বিজ্ঞান লেখক অভিজিৎ রায় হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি। ওই মামলায় তার সঙ্গে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের পাঁচ জঙ্গির মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছিল আদালত।

অভিজিৎ রায় হত্যার প্রায় আড়াই মাসের মাথায় ২০১৫ সালের ১২ মে সিলেট নগরের সুবিদবাজারে নূরানী আবাসিক এলাকায় নিজের বাসার সামনে খুন হন ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ।

পেশায় ব্যাংকার অনন্ত বিজ্ঞান নিয়ে লেখালেখির পাশাপাশি ‘যুক্তি’ নামে বিজ্ঞানবিষয়ক একটি পত্রিকা সম্পাদনা করতেন। পাশাপাশি তিনি স্থানীয় গণজাগরণ মঞ্চেরও সংগঠক ছিলেন।

হত্যার পরদিন ২০১৫ সালের ১৩ মে তার বড় ভাই রত্নেশ্বর দাশ বাদী হয়ে সিলেট বিমানবন্দর থানায় অজ্ঞাতনামা চারজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় অভিযোগ করা হয়, বিজ্ঞান বিষয়ে লেখালেখির কারণে অনন্তকে উগ্র ধর্মান্ধ গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে খুন করেছে।

তদন্তে নেমে এ মামলাতেও শফিউর রহমান ফারাবীকে গ্রেপ্তার দেখায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তদন্ত শেষে অভিযোগপত্রে বলা হয়, অনন্তকে হত্যার ‘প্ররোচনা’ দেওয়ার পাশাপাশি খুনিদের ‘সহয়তা’ করেছিলেন ফারাবী।

বুধবার এ মামলার রায়ে ফারাবীকে খালাস দেওয়ার ব্যাখ্যায় বিচারক বলেন, হত্যাকাণ্ডের সময় ফারাবী অন্য একটি মামলায় কারাগারে বন্দি ছিলেন। সেটি আদালতে প্রমাণিত হয়েছে। এ কারণে তাকে এই মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

ফারাবী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়।

২০১৩ সালে শাহবাগ আন্দোলনের কর্মী ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দারের জানাজা পড়ানোয় এক ইমামকে ফেইসবুকে হত্যার হুমকি দিয়ে তিনি গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। পরে ওই মামলায় তিনি জামিনে মুক্তি পান।

ছয় মাস কারাগারে থেকে মুক্তি পাওয়ার পর ফারাবী তখন লিখেছিলেন- “আমার দৃষ্টিতে নাস্তিকরা হচ্ছে পোকামাকড় আর পোকামাকড়দের মরে যাওয়াই ভাল।”

পরে ওই বছরই কয়েকজন ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টের নাম ও অনলাইন পরিচয় (নিক) উল্লেখ করে তাদের হত্যা করার জন্য র‌্যাব-পুলিশ-সেনাবাহিনীর প্রতি আহ্বান জানান এই বিতর্কিত ব্লগার।

অভিজিৎ রায়ের বই একটি বই বিক্রির ওয়েবসাইট থেকে সরাতেও হুমকি দিয়েছিলেন ফারাবী।

২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাকে নিয়ে বইমেলা থেকে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সামনে হামলার শিকার হয়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী অভিজিৎ রায়। চাপাতির আঘাতে আঙুল হারান তার স্ত্রী।

অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডেও ফারাবি সরাসরি জড়িত ছিলেন না; কিন্তু ‘হত্যার প্ররোচনা দিয়েছিলেন’ বলে তাকে মামলায় আসামি করা হয় এবং তার বিরুদ্ধে ৬(২)(আ) ধারায় অপরাধ প্রমাণিত হয়। তাকে যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয়।

২০২১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি অভিজিৎ হত্যার রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছিল, “ফারাবী ফেইসবুকে অভিজিৎ রায়ের নামে লেখালেখি করে। এসব স্ট্যাটাস পর্যালোচনায় প্রমাণিত হয় যে, অভিজিৎ রায়কে নাস্তিক ব্লগার হিসেবে আখ্যা দেওয়ার বিষয়ে আসামি শফিউর রহমান ফারাবীর সঙ্গে অন্য পাঁচ আসামির অভিন্ন মিল রয়েছে।

সেই রায়ে বিচারক বলেন, “অভিজিৎ রায়কে নাস্তিক ব্লগার হিসেবে আখ্যা দেওয়ায় এবং তার সঙ্গে তার স্ত্রী ও মেয়ের ছবি আপলোড করে হত্যার জন্য উন্মুক্ত আহ্বান করায় সুষ্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, অভিযুক্ত পাঁচজন শফিউর রহমান ফারাবী দ্বারা প্ররোচিত হয়ে অভিজিৎ রায়কে হত্যার অভিন্ন অভিপ্রায়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছে এবং মূল হামলাকারীদের দিয়ে অভিজিৎ রায়কে হত্যা করেছে।”

আরও পড়ুন