মুক্তমত স্তব্ধ করতে অনন্তকে হত্যা: আদালত

স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের অধিকার রুদ্ধ করার পাশাপাশি ‘ভীতি ছড়িয়ে দিতেই’ সাত বছর আগে সিলেটে ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশকে হত্যা করা হয়েছিল বলে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে আদালত।

মঞ্জুর আহমদ সিলেট প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 March 2022, 11:02 AM
Updated : 30 March 2022, 12:28 PM

সিলেটের সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারক নুরুল আমীন বিপ্লব বুধবার আলোচিত এ মামলার রায়ে চারজনকে মৃত্যুদণ্ড দেন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার আবুল হোসেন, খালপাড় তালবাড়ির ফয়সাল আহমদ, সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের বিরেন্দ্রনগরের (বাগলী) মামুনুর রশীদ ও কানাইঘাটের ফালজুর গ্রামের আবুল খায়ের রশীদ আহমদ।

হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ততার প্রমাণ না পাওয়ায় এ মামলার আরেক আসামি বিতর্কিত ব্লাগার শফিউর রহমান ফারাবীকে খালাস দেওয়া হয় রায়ে।

রায় ঘোষণার সময় বিচারক বলেন, হত্যাকারীরা একটি ‘সংঘবদ্ধ গোষ্ঠী’। তারা ‘পরিকল্পিতভাবে’ অনন্তকে হত্যা করেছে।

“অনন্ত বিজয় বিজ্ঞানমনস্ক ও প্রগতিশীল চিন্তার লোক ছিলেন। তিনি ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে মুক্তবুদ্ধির চর্চা করতেন। অনন্ত বিজয় দাশের স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের মৌলিক অধিকারকে প্রতিহত করার জন্য এবং তার লেখনীকে চিরতরে স্তব্ধ করার জন্য সন্ত্রাসী কায়দায় প্রকাশ্যে দিবালোকে তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে।

“হত্যাকাণ্ডের নৃশংসতা ও বিভৎসতা দ্বারা যে সকল লেখক মুক্তবুদ্ধি, প্রগতিশীলতা, বিজ্ঞান ও সমাজে প্রচলিত কুসংস্কার বিষয়ে লেখেন বা বক্তব্য দেন তাদের মধ্যে ভীতি ও শঙ্কা ছড়িয়ে দেওয়াই ছিল মূল উদ্দেশ্য।” 

এ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের বিশেষ পিপি মুমিনুর রহমান টিটু রায়ের পর সাংবাদিকদের বলেন, “চারজনের মৃত্যুদণ্ডের রায়টি একটি যুগান্তকারী রায়। এর মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।”

দেশে মুক্তমনা লেখক, ব্লগার, প্রকাশক ও অধিকারকর্মীদের ওপর একের পর এক জঙ্গিবাদী হামলার মধ্যে ২০১৫ সালের ১২ মে সিলেট নগরের সুবিদবাজারের নূরানী আবাসিক এলাকায় নিজের বাসার সামনে খুন হন ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ।

পেশায় ব্যাংকার অনন্ত বিজ্ঞান নিয়ে লেখালেখির পাশাপাশি ‘যুক্তি’ নামে বিজ্ঞানবিষয়ক একটি পত্রিকা সম্পাদনা করতেন। পাশাপাশি তিনি স্থানীয় গণজাগরণ মঞ্চেরও সংগঠক ছিলেন।

হত্যাকাণ্ডের পরদিন ২০১৫ সালের ১৩ মে তার বড় ভাই রত্নেশ্বর দাশ বাদী হয়ে সিলেট বিমানবন্দর থানায় অজ্ঞাতনামা চারজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। সেখানে করা হয়, বিজ্ঞান বিষয়ে লেখালেখির কারণে অনন্তকে উগ্র ধর্মান্ধ গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে খুন করেছে।

দীর্ঘ সাত বছর পর বুধবার এ মামলার রায় ঘোষণার সময় বিচারক তার পর্যবেক্ষণে বলেন, “জনমনে ভীতির সঞ্চার করে এবং জননিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করে ভিকটিমকে হত্যা করে এই আসামিগণ গর্হিত অপরাধ করেছেন, যা বর্হিবিশ্বে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তিকে অনুজ্জ্বল করেছে।

“ফলে এই আসামিগণ দণ্ড প্রদানের ক্ষেত্রে আদালতের কোনো অনুকম্পা পেতে হকদার নয়। বরং এই আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না দিলে অন্যান্য সন্ত্রাসী জঙ্গি উগ্রবাদী মতাদর্শের লোকজন এই ধরনের হত্যাকাণ্ডে উৎসাহিত হবে।” 

এ মামলায় খালাস পাওয়া শফিউর রহমান ফারাবী বিজ্ঞান লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যা মামলার রায়ে যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি।

আদালত বলেছে, অনন্তকে হত্যার সময় ফারাবী অন্য মামলায় কারাগারে ছিলেন। তাকে হত্যার প্ররোচণা ও সহয়তা করার যে অভিযোগ এ মামলায় আনা হয়েছিল, তা সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে খালাস দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন