শীতলক্ষ্যায় লঞ্চডুবি: ১০ লাশ উদ্ধারের পর অভিযান সমাপ্ত

নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীতে মালবাহী জাহাজের ধাক্কায় লঞ্চডুবির ঘটনায় ১০ যাত্রীর মরদেহ উদ্ধারের পর তল্লাশি অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 March 2022, 01:48 PM
Updated : 22 March 2022, 01:48 PM

সোমবার অভিযানের তৃতীয় দিনে সকালে দুটি এবং বিকালে একটি লাশ উদ্ধারের পর সন্ধ্যায় বন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বি এম কুদরত-এ-খুদা অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

তিনি বলেন, “আর কেউ নিখোঁজ নেই। এ কারণে উদ্ধার অভিযান আনুষ্ঠানিকভাবে সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়েছে।”

“জোবায়ের হোসেন নামে একজনের নাম লিখা হলেও সেখানে তার বিস্তারিত তথ্য নেই। তার স্বজনরা কেউ গত কয়েকদিনেও যোগাযোগ করেনি।”

ইউএনও আরও বলেন, “যদি কেউ নিখোঁজ থাকে বা লাশ পাওয়া যায় তাহলে পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

রোববারের ওই ঘটনায় এ নিয়ে মোট ১০ জনের লাশ উদ্ধার করা গেল। তাদের মধ্যে সোমবার সাতজন এবং মঙ্গলবার আরও তিনজনের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে নৌ পুলিশ জানিয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ সদর নৌ থানার ওসি মনিরুজ্জামান বলেন, মঙ্গলবার সকালে বন্দর উপজেলার মদনগঞ্জ শাহ সিমেন্ট এলাকা থেকে চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ বিষ কাঠালী এলাকার আব্দুল্লাহ্ আল জাবের (৩২), হরিহপুর এলাকা থেকে মুন্সীগঞ্জ গজারিয়ার জয় রামের সাড়ে তিন বছর বয়সী মেয়ে আরোহী রাজবংশী এবং বিকালে মদনগঞ্জ শাহ সিমেন্ট এলাকা কুয়েত প্রবাসী মোসলেম উদ্দিন হাতেমের (৫৫) লাশ উদ্ধার করা হয়। হাতেমের বাড়ি মুন্সীগঞ্জ জেলার ইসলামপুর জীবনীঘাট এলাকায়।

ওসি বলেন, “সোমবার অজ্ঞাত হিসেবে একটি লাশ উদ্ধার করা হলেও সেটি লঞ্চডুবির ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। জিয়াউল আমিন রিমন নামের ওই ব্যক্তির লাশ স্বজনেরা শনাক্ত করে নিয়ে গেছে।”

নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীতে মালবাহী জাহাজের ধাক্কায় ডুবে যাওয়া যাত্রীবাহী লঞ্চ এমএল আফসারের আরও এক যাত্রীর মরদেহ সোমবার উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ডুবুরিরা।

“লঞ্চডুবির ঘটনায় আরও কেউ নিখোঁজ আছে আমাদের কাছে এমন কোনো তথ্য নেই। শুধু জোবায়ের হোসেন নামে একজনের নাম নিখোঁজ হিসেবে লেখা হলেও তার নাম-ঠিকানা কোনোকিছু নেই। তার কোনো স্বজনও আসেনি, দাবিও করেনি। তাই আমরা আমাদের উদ্ধার অভিযান শেষ করেছি।

ওসি আরও বলেন, যদি আরও কেউ নিখোঁজ আছে এমন অভিযোগ বা তথ্য পাওয়া যায় তাহলে তল্লাশি অভিযান চালানো হবে।

রোববার দুপুর ২টার দিকে নারায়ণগঞ্জ সদরের সৈয়দপুর এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীতে সিটি গ্রুপের মালিকানাধীন মালবাহী জাহাজ রূপসী-৯ পেছন থেকে চাপা দিলে ডুবে যায় যাত্রীবাহী লঞ্চ এমএল আফসার উদ্দিন।

নারায়ণগঞ্জ থেকে মুন্সীগঞ্জগামী লঞ্চে সে সময় অর্ধশতাধিক যাত্রী ছিলেন বলে নৌপুলিশের ভাষ্য। যাত্রীদের অনেকে সাঁতরে তীরে উঠতে সক্ষম হলেও নিখোঁজ থাকেন বেশ কয়েকজন।

উদ্ধারকারী জাহাজ ‘প্রত্যয়’ এর সাহায্যে শীতলক্ষ্যা নদীতে ডুবে যাওয়া যাত্রীবাহী লঞ্চ এমএল আফসার উদ্দিনকে সোমবার ভোরে উদ্ধারের পর লঞ্চটি দেখতে ভিড় করে স্থানীয় মানুষ।

ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি নৌ পুলিশ ও বিআইডব্লিউটিএ কর্মীরা উদ্ধার কাজে অংশ নেন। সোমবার ভোরে উদ্ধারকারী জাহাজ ‘প্রত্যয়’ ৫৫ হাত পানির নিচ থেকে লঞ্চটিকে টেনে তুলে তীরে নিয়ে রাখে।

রূপসী-৯ জাহাজটি এবং এর মাস্টারকে রোববারই মুন্সীগঞ্জের হোসেনদি এলাকা থেকে আটক করে নৌ-পুলিশ। নারায়ণগঞ্জ থেকে সব পথে ছোট লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) উপ-পরিচালক বাবুলাল বৈদ্য সোমবার নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

সেই মামলায় রূপসী-৯ জাহাজের আটজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ।

এরা হলেন: জাহাজের মাস্টার রমজান আলী শেখ, নুরুল আলম, ইঞ্জিনিয়ার আরিফুল ইসলাম, নাদিম হোসেন, লস্কর সুমন হোসেন, ইয়াসিন, সুকানি জাহিদুল ইসলাম ও গ্রিজার রিয়াদ হোসেন।

আরও পড়ুন-