রোববারের ওই দুর্ঘটনার পর সোমবার সকালে নারায়ণগঞ্জ থেকে সাতটি পথে চলাচলকারী লঞ্চ বন্ধের কথা জানিয়ে বিআইডব্লিউটিএ নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের যুগ্ম পরিচালক মাসুদ কামাল বলেন, “শীতলক্ষ্যা নদীতে নৌ দুর্ঘটনা রোধে ছোট লঞ্চ চলাচল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে। ঢাকা থেকে এই আদেশ দেওয়া হয়েছে।”
এরপর দুপুরে লঞ্চ মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল সংস্থা (যাত্রী পরিবহন) নারায়ণগঞ্জ জোনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেন সংগঠনের সভাপতি বদিউজ্জামান বাদল।
বাদল জানান, সাতটি পথে মোট ৭০টি লঞ্চ চলাচল করে। তিনি দ্রুত নারায়ণগঞ্জ থেকে সব রুটে চলাচলরত লঞ্চ পুনয়ায় চালুর অনুমতি দেওয়ার দানের জন্য বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
রোববার দুপুর ২টার দিকে নারায়ণগঞ্জ সদরের সৈয়দপুর এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীতে সিটি গ্রুপের মালিকানাধীন মালবাহী জাহাজ রূপসী-৯ পেছন থেকে চাপা দিলে ডুবে যায় যাত্রীবাহী লঞ্চ এমএল আফসার উদ্দিন।
সোমবার সকালেই লঞ্চটিকে উদ্ধার করা হয়েছে। এরই মধ্যে আটটি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছে চারজন। ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি নৌ পুলিশ ও বিআইডব্লিউটিএ কর্মীরা উদ্ধারকাজে অংশ নেন। লাশের খোঁজে তল্লাশি এখনও চলছে।
সংবাদ সম্মেলনে বদিউজ্জামান বাদল বলেন, শীতলক্ষ্যা নদীর প্রস্থ কমে গেছে। শিল্প-কারখানার কারণে ভারী জাহাজ চলাচল শতভাগ বেড়েছে। এটাকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ট্রাফিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বিআইডব্লিউটিএ। যার কারণে প্রায়ই নৌ-দুর্ঘটনা ঘটছে।
এ সময় আর উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সিনিয়র সহ-সভাপতি মনিরুজ্জামান রাজা, সহ-সভাপতি অহিদুজ্জামান, নুরুল আমিন কাজল, সদস্য আলমগীর মিয়া।
দুর্ঘটনায় মামলার ব্যাপারে জানতে চাইলে বন্দর থানার ওসি দীপক চন্দ্র সাহা বলেন, “একটি দুর্ঘটনায় একটি মামলা হবে।”
রূপসী-৯ এর চাপে এমএল আফসার উদ্দিন লঞ্চটি যখন তলিয়ে যাচ্ছিল, কাছের আরেকটি লঞ্চ থেকে সেই দৃশ্য মোবাইল ফোনে ধারণ করেন রাকিব আল রাজু নামে একজন। তিনি ওই ভিডিও ফেইসবুকে দিলে তা ভাইরাল হয়ে যায়।
রাকিব আল রাজু পরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, লঞ্চটি চাপা পড়ার পরও জাহাজের গতি কমাননি চালক।
কয়েক ঘণ্টা পর মুন্সীগঞ্জের হোসেনদি এলাকা থেকে রূপসী-৯ এবং এর মাস্টারকে আটক করে নৌ-পুলিশ।
তবে সোমবার সকাল পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি বলে নৌ পুলিশের ওসি মনিরুজ্জামান জানান।
এ ঘটনা তদন্তে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে। কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
জরুরি যোগাযোগে ‘হটলাইন’
লঞ্চডুবির ঘটনায় জরুরি যোগাযোগের জন্য বিআইডব্লিউটিএ একটি ‘হটলাইন’ খুলেছে; যারা নম্বর-১৬১১৩।
বিআইডব্লিউটিএর এর উপ-পরিচালক মিজানুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সংস্থার প্রধান কার্যালয়ের ষষ্ঠ তলায় ৬১৭ নম্বর কক্ষে নিয়ন্ত্রণ কক্ষে এই হটলাইন চালু করা হয়েছে।
এছাড়া আরও দুটি টেলিফোন নম্বরও দেওয়া হয়েছে। সেগুলো হল- +৮৮০২২২৩৩৫২৩০৬; মোবাইল- +৮৮০১৯৫৮৬৫৮২১৩।
মিজানুর বলেন, এই লঞ্চ দুর্ঘটনা সংক্রান্ত যে কোনো তথ্যের জন্য এই হটলাইন যোগাযোগ করার অনুরোধ জানানো হচ্ছে।