কারাগারের বদলে ফুল-পতাকা হাতে শিশুদের বাড়ি পাঠাল আদালত

শিশু-কিশোরদের শাস্তি হিসেবে কারাগারে না পাঠিয়ে ফুল-পতাকা-ডায়েরি হাতে তাদেরকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছে সুনামগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল।

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 March 2022, 08:30 AM
Updated : 21 March 2022, 08:30 AM

আদালতের বিচারক মো. জাকির হোসেন সোমবার দুপুর ১২টায় ৫০টি মামলা থেকে ৭০ শিশু-কিশোরকে রেহাই দিয়ে কিছু ভাল কাজের শর্ত বেঁধে দিয়েছেন।

বিচারক এ নিয়ে চতুর্থবারের মতো এমন ব্যতিক্রম রায় দিলেন। এর আগে তিন দফায় ৯৫টি মামলায় ১৩৩ জন শিশু-কিশোরকে একইভাবে প্রবেশনে মামলা থেকে রেহাই দিয়ে মা-বাবার কাছে স্বাভাবিক জীবনে প্রত্যাবর্তনের সুযোগ করে দিয়েছিলেন বলে জেলা প্রবেশন কর্মকর্তা মো. শফিউর রহমান।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “একই বিচারক বিভিন্ন সময়ে দেড়শ দম্পতির বিবাহ-বিচ্ছেদের মামলা শুনানি করে আপস করিয়েছেন, সংসার রক্ষা করেছেন। একইভাবে কোমলমতি শিশু-কিশোরদের শাস্তি না দিয়ে এ ধরনের রায় তাদেরকে শিক্ষা ও স্বাভাবিক জীবন বিকশিত হতে সাহায্য করবে। আমরা আদালতের শর্তগুলো মানাতে তাদেরকে সহযোগিতা করব।“

রায়কে অভিনন্দন জানিয়ে শিশু আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের বিশেষ আইনজীবী (পিপি) হাসান মাহবুব সাদী বলেন,  অভিভাবকদের ঝগড়ার মামলায় ৭০ শিশু-কিশোরকে আসামি করা হয়েছিল। তুচ্ছ অভিযোগে কোমলমতি শিশু-কিশোররা নিয়মিত স্বজনদের সঙ্গে আদালতে হাজিরা দিতে আসত। শিশু বয়সে মামলার আসামি হওয়ায় তাদের মনে নেতিবাচক প্রভাবও পড়ছিল। তাদের শিক্ষা জীবন ও স্বাভাবিক বিকাশ হুমকিতে পড়ে। 

মামলার বাদী ও আসামিদের সঙ্গে কথা বলে এই রায়ের মধ্য দিয়ে বিচারক সংশোধনের উপায় খুঁজেছেন বলে মন্তব্য করেন পিপি।

তিনি আরও বলেন, “রায়ের পর শিশুদের হাতে পতাকা, ফুল, ডায়েরি ও কলম দিয়ে বিচারক বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনায় একজন মানবিক মানুষ হিসেবে দেশ ও মানুষকে ভালোবাসতে হবে। দেশপ্রেমে বলিয়ান হয়ে এগিয়ে যেতে হবে। বিচারক শিশুদেরকে এক বছরের প্রবেশনকালে ডায়েরিতে দিনলিপি লিপিবদ্ধ করে এক বছর পর আদালতকে দেখানোর নির্দেশনা দেন।

সাদী আরও জানান, বিচারক শিশুদের যেসব শর্ত মানার নির্দেশনা দিয়েছেন সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- পড়াশুনার পাশাপাশি প্রতিদিনের ভালো কাজ ডায়েরিতে লিখে রাখেতে হবে, মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানা, সবার সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রেখে ভালো ব্যবহার করা, বাবা-মাসহ গুরুজনদের আদেশ মেনে চলা, তাদের সেবা-যত্ন করা ও কাজকর্মে সহযোগিতা করা, নিয়মিত ধর্মগ্রন্থ পাঠ ও ধর্মকর্ম পালন করা, ২০টি করে গাছ লাগিয়ে তার পরিচর্চা করা, অসৎ সঙ্গ ত্যাগ করা, মাদক থেকে দূরে থাকা এবং ভবিষ্যতে কোনো অপরাধের সঙ্গে নিজেকে না জড়ানো।

“এই শর্তগুলো পরিপালনের জন্য জেলা প্রবেশন কর্মকর্তা মো. শফিউর রহমানকে পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি পর্যবেক্ষণ করে প্রতি তিন মাস পরপর আদালতকে শিশুদের বিষয়ে অবহিত করবেন।”

দোয়ারাবাজার উপজেলার খলাউড়া গ্রামের বাসিন্দা খোকন মিয়া বলেন, “গরু রাখা নিয়ে কথা কাটাকাটির জের ধরে আমার ছেলে ইকবালকে আসামি করা হয়েছিল। আমি দুই বছর ছেলেকে নিয়ে অনেক কষ্ট করেছি। আজ আদালত আমার ছেলেকে প্রবেশনে মুক্তি দিয়ে আমার কোলে পাঠিয়েছে। আমরা বিচারকের প্রতি সন্তুষ্ট।”