‘রাতভর জমির মাটি কাটে, না করলে মারতে আসে’

মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ও চালা ইউনিয়নে ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের বিরুদ্ধে।

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 March 2022, 01:47 PM
Updated : 19 March 2022, 01:47 PM

এ ছাড়া গাড়িতে করে এসব মাটি পরিবহনের ফলে সড়ক ও বসতবাড়িও ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে অভিযোগ করে উপজেলা প্রশাসনের কাছে ৯ মার্চ লিখিত দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় রজ্জব আলী, আমেনা বেগম, মোশাররফ ও আলেনা বেগমের দেওয়া অভিযোগে বলা হয়, রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের রামকৃষ্ণপুর নয়াকান্দি এলাকায় দুই মাস ধরে ফসলি জমির মাটি কেটে বিক্রি করছেন গালা ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক দুলাল সূত্রধর। মাটি পরিবহনের ফলে গত বছর সংস্কার করা রামকৃষ্ণপুর থেকে নয়াকান্দি পর্যন্ত সড়ক বেহাল হয়ে পড়েছে।

এ ছাড়া স্থানীয় আবু তালেবের বসতবাড়ির উঠানের উপর দিয়ে মাটি পরিবহনের গাড়ি চলাচলের কারণে তার বসতবাড়িও ক্ষতি হচ্ছে এবং বিষয়টি নিয়ে জড়িতদের কিছু বললে উল্টো ভুক্তভোগীকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

আবু তালেবের স্ত্রী আমেনা বলেন, “সারারাত মাটি কাটার মেশিন ও গাড়ির শব্দে প্রায় দুই মাস ধরে ঘুমাতে পারি না। আমার বাড়িঘর নষ্ট হচ্ছে। মাটি কাটতে নিষেধ করলে লোকজন নিয়ে মারধর করতে আসে, হুমকি দেয়।

“স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য মো. কামাল হোসেন ও দুলাল সূত্রধর আমার উঠানের ওপর দিয়ে মাটি নিচ্ছেন”, বলেন আমেনা।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কামাল হোসেন বলেন, “আমি ফসলি জমির মাটি কাটার বিরোধী। আমি মাটির ব্যবসা করি কেউ প্রমাণ দিতে পারবে না। আমার বিরোধী পক্ষ ষড়যন্ত্র করছে।”

তবে মাটি কাটার কথা স্বীকার করে দুলাল সূত্রধর বলেন, “আগে কাটলেও গতকাল থেকে মাটি কাটা বন্ধ করে দিয়েছি।”

রামকৃষ্ণপুর ছাড়াও চালা ইউনিয়নের উত্তর মেরুন্ডি এলাকায় ফসলি জমির মাটি কাটার অভিযোগ উঠেছে ওই ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. রবিউল ইসলাম রবি, উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান ফিরোজ ও সহসভাপতি আমিনুল ইসলাম আরোজের বিরুদ্ধে।

মুঠোফোনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে মাটি কাটার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন ইউপি সদস্য রবিউল ইসলাম রবি।

অপরদিকে চালা ইউনিয়নের কচুয়া এলাকায় নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান কাজী আব্দুল মজিদের ভাই কাজী বাদল ও চালা ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন মিলনের বিরুদ্ধে ফসলি জমি থেকে মাটি কাটার অভিযোগ উঠেছে।

বিষয়টি স্বীকার করে কাজী বাদল বলেন, “আমার ভাই চেয়ারম্যান কাজী আব্দুল মজিদের সঙ্গে আমি ও মিলন মাটি কাটায় যুক্ত আছি।”

সাখাওয়াত হোসেন মিলনও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে মাটি কাটায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। তবে চালা ইউপি চেয়ারম্যান কাজী আব্দুল মজিদ বিষয়টি অস্বীকার করেন।

ফসলি জমি থেকে মাটি কাটা বন্ধে কয়েকবার ঘটনাস্থলে অভিযানে গিয়েছেন জানিয়ে হরিরামপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাপসী রাবেয়া বলেন, “আমরা কয়েকবার স্পটে গিয়েছি। কিন্তু কাউকে উপস্থিত পাইনি।”

মাটি কাটা রোধে অভিযান চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাইফুল ইসলাম।

তিনি আরও বলেন, “গতকাল উত্তর মেরুন্ডি গিয়েছিলাম, ওখানে কাউকে পাইনি। নিয়মিতই আমি আর এসিল্যান্ড অভিযানে যাই। কাউকে পাই না। দ্রুতই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।”