'বঙ্গবন্ধু ব্রি-১০০' ধানে বাড়তি জিংক, চাষে আগ্রহী কৃষক

বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক নারী ও শিশুর শরীরে জিংকের ঘাটতির মধ্যে যশোরের শার্শা উপজেলার কৃষকরা ‘উৎকৃষ্ট জিংক সমৃদ্ধ’ ধান 'বঙ্গবন্ধু ব্রি-১০০' চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে।  

বেনাপোল প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 March 2022, 07:54 AM
Updated : 15 March 2022, 07:54 AM

রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ রোধ করার ক্ষমতাগুণের উচ্চফলনশীল এই ধান মূলত বোরো মৌসুমের।

কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই ধানের গড় ফলন হেক্টরপ্রতি ৭ দশমিক ৭ টন। তবে অনুকূল পরিবেশ ও উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে হেক্টর প্রতি ৮ দশমিক ৮ টন পর্যন্ত ফলন হয়ে থাকে; যা সন্তোষজনক।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, গড়ে দেশের প্রায় অর্ধেক নারী ও শিশু জিংকের অভাবজনিত নানা রোগে ভুগে থাকে। সাধারণত জিংকের অভাবে পুষ্টিহীনতা দেখা দেয় এবং শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। 

এই অবস্থার মধ্যেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিআরআরআই) বিজ্ঞানীরা ধানের এই জাত উদ্ভাবন করেন বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক (গবেষণা) ড. মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গবেষকরা বিভিন্ন সময়ে ব্রি-৬২, ব্রি-৬৪, ব্রি-৭২, ব্রি-৭৪, ব্রি-৮৪ এবং বঙ্গবন্ধু ব্রি-১০০ এই ছয়টি জিংক সমৃদ্ধ ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে।

“এগুলোর মধ্যে বঙ্গবন্ধু ব্রি-১০০ জাতটি অন্যদের তুলনায় উৎকৃষ্ট। মান ও উৎপাদনের দিক দিয়ে ভালো হওয়ায় এটি সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় প্রদর্শনী প্লট তৈরির কাজ চলছে।”

‘বঙ্গবন্ধু ব্রি-১০০’র বৈশিষ্ট্য হিসেবে বলা হয়েছে-

> বঙ্গবন্ধু ব্রি-১০০ এর জীবনকাল ১৪৮ দিন

> গাছের বৃদ্ধি পর্যায়ে আকার আকৃতি ব্রি-৭৪ জাতের মতো

> ডিগ পাতা খাড়া, প্রশস্ত ও লম্বা এবং পাতার রং সবুজ

> পূর্ণবয়স্ক গাছের উচ্চতা ১০১ সেন্টিমিটার

> এক হাজার পুষ্ট ধানের ওজন ১৬ দশমিক ৭ গ্রাম

পরীক্ষামূলক চাষাবাদে ফলন ভালো হওয়ায় এবারে বড় পরিসরে 'বঙ্গবন্ধু ব্রি-১০০' চাষে প্রস্তুতি সেরে নিয়েছে উপজেলার কৃষি বিভাগ।

যশোরের শার্শা উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ মণ্ডল বলে, জিংক সমৃদ্ধ এই ধান মানবদেহে জিংকের অভাব পূরণে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়।  

আধুনিক উফশী ধানের সব বৈশিষ্ট্য এ ধানে আছে মন্তব্য করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে প্রতাপ বলেন, “চাল মাঝারি চিকন ও সাদা। জিংকের পরিমাণ প্রতি কেজিতে ২৫ দশমিক ৭ মিলিগ্রাম। চালে অ্যামাইলোজ ২৬ দশমিক ৮ শতাংশ এবং প্রোটিন ৭ দশমিক ৮ শতাংশ।”

উপজেলার পান্তাপাড়া মাঠে ১৫ বিঘা জমিতে বঙ্গবন্ধু ব্রি-১০০ জাতের ধানের প্রদর্শনী প্লট করেছে উপজেলা কৃষি বিভাগ।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকের সঙ্গে এই প্রদর্শনী প্লটের দুই চাষি ইব্রাহিম হোসেন ও হারুন-অর-রশিদের কথা হয়।

ইব্রাহিম বলেন, “এই ব্লকে কৃষি বিভাগ সার, বীজ ও কারিগরি সহায়তা দিয়ে কৃষকদেরকে সহযোগিতা করছে। কৃষকদের আগ্রহ দেখে মনে হচ্ছে আগামীতে শার্শার মাঠে বঙ্গবন্ধু ধান চাষে একটা বিপ্লব ঘটবে।”

রোগবালাই ও পোকামাকড় আক্রমণের পরিমাণ কম হওয়ায় বঙ্গবন্ধু ব্রি-১০০ ধান চাষে কৃষকরা আগ্রহী জানিয়ে চাষি হারুন বলেন, “সময়মতো বীজ না পাওয়ায় আরও চাষ করতে পারিনি।”

উপজেলার আমলাই গ্রামের ধানচাষি রফিক বলেন, “বঙ্গবন্ধু জাতের ধানের ফলন বিঘায় ৩০ থেকে ৩৪ মণ। এবার বীজ পাইনি, তাই ইচ্ছা থাকলেও চাষ করতে পারিনি। আশা আছে, সামনের বার এ ধান চাষ করব।“

বীজের চাহিদা মেটাতে শার্শার ‘আল আমিন সিডস’ নামের বীজ উৎপাদনকারী একটি প্রতিষ্ঠান উপজেলার আমলাই গ্রামের মাঠে ৭৬ শতক জমিতে এই ধানের বীজ উৎপাদনের জন্য পরীক্ষামূলক চাষে নেমেছে।

প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক দেলোয়ার হোসেন জানান, বঙ্গবন্ধু ব্রি-১০০ বোরোর একটি জাত, এটি ২০০৬ সালে সংকরায়ন করা হয়। পরে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণা মাঠে টানা পাঁচ বছর চাষ করে এর ফলন পরীক্ষা করা হয়।

এরপর ২০২০ সালে বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সি ফলন পরীক্ষা (পিভিটি) করে, সন্তোষজনক ফলাফল পেয়ে এটি জাতীয় বীজ বোর্ডের ছাড়পত্র পায়।

দেলোয়ার বলেন, “ধানের বাড় বাড়তি ও রোগবালাই কম। মনে হচ্ছে ফলন আশানুরূপ হবে।”

দেলোয়ার হোসেনের পরিকল্পনা এ ধানের বীজ তৈরি করে দেশে বাজারজাত করা। তিনি আশা করছেন, চাষিরা তার কাছ থেকে আগামী বছর থেকেই বীজ সংগ্রহ করতে পারবেন। অনেক চাষি এরই মধ্যে বীজ নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বলেও জানান দেলোয়ার।